শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দশ বছর

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান তৎকালীন বিডিআর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরে সকালে আকস্মিকভাবে গোলাগুলির শব্দ শুরু হয়। বাইর থেকে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। অথচ ভেতরে বেশকিছু উচ্ছশৃঙ্খল বিডিআর সদস্য বিডিআরের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আবাসিক ভবন, হাসপাতালসহ ভেতরের স্থাপনাসমূহে কর্মরত ও বসবাসরত নিরীহ নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলে পড়ে। তারা বর্বরতার সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করেনি। বাইরের মানুষ বুঝে ওঠার আগেই ভেতরে অনেককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেকেই বিডিআরের ভেতরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদ-পদবি, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি নিয়ে নানা আষাঢ়ে গল্প মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেছিলো। এর কিছুদিন আগেই দেশে একটি সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো। নির্বাচনে একটি সরকার সবেমাত্র বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলো। অনেক কিছুই নতুন সরকারের গোছগাছ করার সুযোগ হয়নি। অফিসও যথা জায়গায় যায়নি। ফলে কী কারণে, কারা, কীভাবে পিলখানার ভেতরে আসলে কী ঘটাচ্ছিলো তা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো না।

বিডিআরে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একটা আষাঢ়ে গল্প বেশ ছড়ানো হয়েছিলো, আরো ছড়ানো হয়েছিলো প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশেষ কোনো বাহিনী ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ বাংলাদেশের এই বিশেষ বাহিনীকে ধ্বংস করতেই নাকি কিছু একটা করেছে! এসব গল্প প্রথম দুদিন মানুষের মুখে মুখে চলছিলো আবার কেন সেনাবাহিনী ট্যাংক নামিয়ে পিলখানাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে না এমন কথাও অনেকেই উচ্চারণ করছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিলো একটি পক্ষ ভেতরের খবর না জেনেই নানা রকম কিছু ‘বিদ্রোহীর’ ভাষ্য মিডিয়ায় প্রচার করে একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি করছিলো-যা দেশকে আসলে কোনদিকে নিয়ে যাবে সেটি তলিয়ে দেখা হচ্ছিলো না। আবার আরেকটি পক্ষ সরকারের কোনো কোনো মহলের সম্পৃক্ততায় পিলখানার ভেতরে কিছু একটা করছিলো বলে প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছিলো। এসব প্রচারণায় দেশ তখন সত্যিই এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছিলো। আসলে ভেতরে একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র পাকানো হয়েছিলো-যার পেছনে দূর থেকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের বিষয়টিকে ধূলিসাৎ করার নীলনকশা ছিলো বলে মনে হয়। এরাই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে নতুন সরকারের যাত্রার শুরুতেই একটা বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির ফাঁদ পেতেছিলো বলে মনে হয়। একদিকে তৎকালীন বিডিআর, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে সেনাবাহিনীকে উপস্থাপন করা, আবার সরকার তথা আওয়ামী লীগকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছিলো, সরকারকে কিছুটা তৎকালীন বিডিআরের প্রতি সহানুভূতিশীল দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছিলো। এসবই ছিলো সেই সময়ের বানানো নানা কল্পকাহিনী, আষাঢ়ে গল্প-যা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার হ্যামেলনীয় বংশীবাদকের রূপকল্প!

তবে নতুন সরকার এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল অংশের বিচ্ছক্ষণতার কারণে বড় ধরনের কোনো হানাহানি, সংঘাত-সংঘর্ষ ঢাকার এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ঘটেনি। যদি উসকানিদাতাদের প্ররোচনায় পড়ে ট্যাংক কিংবা বিমান নামিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করা হতো তাহলে শুধু সাধারণ মানুষই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তো না, সারাদেশ একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে নির্ঘাত পড়তে বাধ্য হতো। সেখান থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ হতো না। অথচ আমরা সকলেই পরে জানতে পেরেছি যে, বিডিআরের উচ্ছশৃঙ্খল সদস্যরা যে নারকীয় হত্যাকা-টি ক্যাম্পের ভেতরে সংঘটিত করেছিলো সেটি তাদের আক্রমণের শুরুতেই অধিকাংশ হত্যাকা- সংঘটিত হয়ে যায়। সুতরাং ট্যাংক বা অন্য কিছু নামিয়ে নিহতদের কাউকেউ জীবিত উদ্ধার করা যেতো না। বরং নতুনভাবে অনেকেই হত্যাকা-ের শিকার হতেন। পিলখানার এই হত্যাকা- নিয়ে আষাঢ়ে গল্পের শেষ অনেকদিন হয়নি। তবে এর বিচারের আয়োজন করে সরকার প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করেছেন। আদালত জটিল এই মামলায় অনেককেই শাস্তি দিয়েছেন। পিলখানার হত্যাকা- গোটা বিডিআর বাহিনীকেই এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছিলো যে, বাহিনীটির নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুনভাবে শুরু করতে হয়েছে। অনেকেই হয়তো এখন আর বিজিবির আগের নামটি মুখে নিচ্ছে না। তবে যে হত্যাকা-টি বিডিআরের বেশকিছু সংখ্যক উচ্ছশৃঙ্খল সদস্য সংঘটিত করেছিলো তারা তাদের বাহিনীকেই বিলুপ্ত করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশ নতুনভাবে বিজিবির মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু করেছে সেটি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে সেটি সকলের প্রত্যাশা। আমরা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে যেসব সেনা কর্মকর্তা অনাকাক্সিক্ষতভাবে হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারের শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ করতে পারবো না। কিন্তু তারা প্রমাণ করে গেছেন যে, তারা নিরপরাধ মানুষ ছিলেন, দায়িত্ব পালন করছিলেন মাত্র। একইসঙ্গে একথাও আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভেতরে বিদ্রোহ সংঘটিত করে কেউ লাভবান হতে পারবে না, তবে সেটি দেশ ও জাতির বড় ধরনের বিপর্যয় ঢেকে আনতে পারে। আমাদের দশ বছর আগের এই ঘটনা থেকে অনেক ধরনের শিক্ষা নিয়েই চলতে হবে। তাহলেই দেশ ও জাতি নিরাপদ থাকবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়