শিরোনাম
◈ শাহজালালে কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনা নাশকতা নয়: প্রেস সচিব ◈ সব প্রতিষ্ঠানে চালু হবে আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা, দরকার হবে না ক্যাশ-আউট ◈ ট্রাফিক পুলিশের জরিমানার ক্ষমতাসহ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জারি ◈ কড়াইল বস্তিতে আগুন: নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ২১ ইউনিট (ভিডিও) ◈ দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকার সাম‌নে থরথর করে কাঁপছে ভারতীয় ব্যাটিং, আবার হোয়াইটওয়াশের আশঙ্কা ◈ কোনো দলই সুপার ওভারে  অভ্যস্ত নয়, দেশে ফিরে জানা‌লেন আকবর আ‌লি  ◈ হিজবুল্লাহ অবশ্যই প্রভাবশালী কমান্ডার হত্যার জবাব দেবে এবং সেটা হবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক: আরব বিশ্লেষক ◈ বেনাপোল বন্দরে আমদানি–রফতানি ৩৩৪ ট্রাক, পাসপোর্টধারী যাতায়াত ১,৯১৬ ◈ গেজেট প্রকাশ বুধবারের মধ্যে, গণভোটের ব্যালট হবে ভিন্ন রংয়ের: আইন উপদেষ্টা ◈ বিএনপি নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত: রিজভী

প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:২৪ সকাল
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জীবনঘনিষ্ঠ কবি অসীম সাহার প্রতি জন্মদিনের শ্রদ্ধা

বিভুরঞ্জন সরকার : আজ ২০ ফেব্রুয়ারি। আজ কবি অসীম সাহার জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে এর আগে তার ৭০টি জন্মদিন এসেছে। তবে এবারের জন্মদিনে কবির জীবনে ঘটছে একটি বিশেষ প্রাপ্তি। আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করবেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। পদক বা পুরস্কার পাওয়ার জন্য কবি তার কবিতা রচনা করেন না। কিন্তু পদক বা পুরস্কার এক ধরনের স্বীকৃতি, যা যে কাউকে উৎসাহিত করে, নিজের কাজে আরো নিমগ্ন হতে অনুপ্রাণিত করে। অসীম সাহা এর আগে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। একুশে পদক রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তার সৃষ্টির সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, তাকে পাঠকের কাছে আরো দায়বদ্ধ করলো। জন্মদিনে এই পদক হাতে পাওয়া বিশেষভাবে আনন্দের। কবির এই আনন্দদিনে তাকে জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ কবি অসীম সাহা লেখালেখি করছেন গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে। ওই সময়কালটা ছিলো বাঙালির প্রতিবাদের, প্রতিরোধের এবং জাগরণের সময়। তরুণ অসীম সাহার রক্তেও টগবগ করছিলো বাঙালির জাতীয় মুক্তির গান। কবিতায় তিনি তার দ্রোহের কথা বলেছেন। বলেছেন ভালোবাসার কথা। ভালোবাসা দেশের জন্য, ভালোবাসা মানুষের জন্য। মূলত কবি হলেও তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতাও অনেক লিখেছেন। এখনও লিখছেন। বলা হয়ে থাকে কবিরা খুব বানান সচেতন নন কিংবা ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম তাদের বাঁধতে পারে না। অসীম সাহা এর মধ্যে পড়েন না। তিনি নিজে বানান ও ব্যাকরণসচেতন বলে অন্যদের সচেতন করার তাগিদ থেকে কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে ‘বাংলা ভাষার সহজ ব্যবহারিক অভিধান’ রচনা করেছেন। ১৯৬৫ সালে তার লেখা প্রথম জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫১। বলা যায়, বছরে গড়ে একটি বই বেরিয়েছে।
আজ আমি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো কবি অসীম সাহার প্রবন্ধের বই ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা’র প্রতি। ১৯৭৬ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। তারপর দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ সালে ‘চিরদিন’ প্রকাশনী থেকে আবার ছাপা হয়েছে ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা’। শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোট ১৬টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে।
কবিতার মতো গদ্য রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। তার ভাষারীতি, রচনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট না করে পারে না। তিনি ব্যক্তি জীবনে যেমন স্পষ্টভাষী, কিছুটা একরোখা রচনাতেও তাই। যা বলতে চান স্পষ্ট এবং সরাসরি বলেন। তবে তিনি যা বলেন যুক্তির আলোকেই বলেন। তার মতের সঙ্গে ভিন্নতা কারো থাকতেই পারে, কিন্তু তার বক্তব্যের পেছনে যে যুক্তির জোর তা অস্বীকার করা যাবে না। বইয়ের প্রথম প্রবন্ধ ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের পটভূমিকা’ থেকে কিছু অংশ :
‘অনেকে মনে করেন সাহিত্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো অযৌক্তিক। কেননা সাহিত্য হৃদয়বৃত্তিনির্ভর। সে ক্ষেত্রে রাজনীতি সাহিত্যের মৌলিকতাকে ক্ষুণœ করে। আমাদের মনে হয় এ বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয়। সামাজিক উত্থান-পতনের কেন্দ্র স্পর্শ করে আছে রাজনীতি। তাই সমাজ কাঠামোতে অবস্থান করে তাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। আর সে চেষ্টাও পলায়নপরতা মাত্র। স্বীকার্য যে, রাজনৈতিক নেতা যেভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন, সাহিত্যিক সেভাবেই আলোচনা করেন না। কিন্তু তা রাজনীতির বর্জনকে স্বীকার করে না। রাজনীতি কোনোক্রমেই শিল্প ( আর্ট) নয়। কিন্তু সাহিত্য অবশ্যই শিল্পকর্ম। সাহিত্যের সার্থকতা নির্ভর করে শিল্পীর সৃষ্টি কর্মের সার্থকতার ওপর। ফলে সাহিত্যের উপাদান যাই হোক না কেন, তাকে মহৎ সাহিত্যের শিরোপা লাভে অবশ্যই শিল্পসম্পন্ন হতে হয়। রাজনীতি সাহিত্যের উপাদান হওয়া সত্ত্বেও তা শাশ্বত সাহিত্যের মর্যাদা লাভে সমর্থ হয়েছে, এ দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে দুর্লভ নয়। সন্দেহ নেই যে, মহৎ স্রষ্টার কাছে উপাদান তেমন বড় কথা নয়, যেকোনো ভিত্তির ওপরে সৌধ নির্মাণ করাই তাদের পক্ষে সম্ভব’।
কেউ কেউ মনে করেন সহজ কথা কঠিন করে বলার নামই সাহিত্য। আবার কারো কাছে কঠিন কথা সহজ করে বলতে পারাটাই উত্তম সাহিত্য। অসীম সাহার প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে পাঠকদের গালে হাত দিয়ে ভাবতে হয় না যে, লেখক কী বলছেন বা বলতে চেয়েছেন। তার ‘কবি : ব্যক্তি ও শিল্পী’ প্রবন্ধ থেকে সামান্য অংশ :
‘কবি যেমন সমাজ বিচ্ছিন্ন নন, সমাজের উত্থান-পতনের আওতাবহির্ভূত নন, তেমনি তিনি ব্যক্তিজীবন, ব্যক্তিজীবনের সামগ্রিক উত্থান-পতনবহির্ভূতও নন। ব্যক্তি সমাজের ভিত্তি, বিন্দু বিন্দু জল আর এই বিন্দু বিন্দু জলের বিস্তৃতির নামই সমুদ্র। সমুদ্রে যেমন বিন্দু বিন্দু জলের শব্দ জাগে, তেমনি বিন্দুর মধ্যেও সিন্ধুর কল্লোল প্রতিধ্বনিত হয়। জীবনের ক্ষেত্রে, শিল্পের ক্ষেত্রেও কী সেই সত্য অস্বীকৃত? না। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে এই মৌলিক সত্য সন্ধানে আগ্রহী হলে দেখা যাবে, বিশ্বের কোনো কবিই তার ব্যক্তিজীবনের বাইরে থেকে শিল্পের বা কবিকর্মে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, আসলে কোনো কবিই ব্যক্তিজীবনকে অতিক্রম করতে পারেন না। তার সৃষ্টিকর্মে কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিজীবনের প্রতিভাস ঘটতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে একজন কবির অনুভবের ভিন্নতার কারণে জীবন-প্রতিভাস অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট হতে পারে, অস্পষ্ট হতে পারে না কিছুতেই। যদি তা হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি মূলত কবি নন, প্রতারক’।
অসীম সাহা জীবন-বিচ্ছিন্ন প্রতারক নন। তিনি জীবন-ঘনিষ্ঠ কবি। কবির জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তার রচিত একটি কবিতা উদ্ধৃত করে। কবিতাটি তিনি ২০০৩ সালে তার জন্মদিনেই লিখেছিলেন।
কবিরা মানুষ নয়
কবিদের কোনো বাড়িঘর নেই/কবিরা থাকেন শূন্যে/হাছনের মতো গড়ে তোলে ঘর/স্থপতির নৈপুণ্যে।/কবিদের কোনো সংসার নেই/কবিরা চলেন ভাগ্যে/একটি জীবন শুধু কেটে যায়/সন্ন্যাসে, বৈরাগ্যে।/ কবিরা মানুষ নয়/কবিদের কাছে মানুষের ঘটে/চিরকালের পরাজয়।
শুভ জন্মদিন অসীমদা। সৃজনআনন্দে আরো দীর্ঘদিন বাঙালির জীবনে আপনার উপস্থিতি আমরা কামনা করি।
লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়