শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৩৩ রাত
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৩৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিচ্ছেদ!

বিভুরঞ্জন সরকার : অবশেষে বিএনপির সঙ্গে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক এবং কৌশলগত কিনা তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক মহল দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু জামায়াত না ছাড়ার বিষয়ে দৃঢ় ছিলো বিএনপি। এখন জামায়াতই দলীয় ফোরামে আগে বিএনপিকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হলো যে, তারা রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপির থেকে এগিয়ে।

সম্প্রতি জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিশে শূরার বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে আর না থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে দলের নির্বাহী পরিষদ। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। এটাকে তারা জানানোর মতো খবর মনে করেনি। আমাদের দেশের রাজনীতিতে যেভাবেই হোক না কেন, জামায়াত একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য জামায়াতের কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই গুরুত্বহীন নয়। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের যে গভীরতা তাতে তাদের এই ‘বিচ্ছেদের’ খবরটি রাজনীতি সচেতন সবার জন্যই আগ্রহের ব্যাপার।

জামায়াত এখন যথেষ্ট প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই দলটি কার্যত আত্মগোপন অবস্থায় আছে। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারে না। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা একাত্তরে মানবতাবিরোধী ভূমিকা পালনের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। ২০১৪-১৫ সালে বিএনপির সঙ্গে থেকে জামায়াত যে আগুন-সন্ত্রাস, সহিংসতা চালিয়েছে তাতেও এই দলের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কারণে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি অনেকদিন থেকেই করা হচ্ছে। মূলত বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা-সহযোগিতাই জামায়াতকে শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করেছে। বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে জামায়াত তার আখের গোছানোর কাজ করেছে। শক্ত আর্থিক-সামাজিক-সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। জামায়াতের সঙ্গে রাখীবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি। বরং তারা সমালোচিত হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের কথা যদি বিএনপি আগে বলতে পারতো তাহলে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো। এখন বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াত এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হলো যে, বিএনপি ছাড়া তাদের চলে। অন্যদিকে বিএনপি এটা প্রমাণ করতে পারলো না যে, জামায়াত ছাড়া তাদের চলে! আসফিদুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন : ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনি দীর্ঘদিন ধরে ভাবছেন বউকে ডিভোর্স দিবেন, কিন্তু আপনার আগে বউই আপনাকে লাথি মেরে বিদায় করে দিলো!

এখন কী হবে? বিএনপি-জামায়াতের এই বিচ্ছিন্নতা দেশের রাজনীতিতে কী নতুন কোনো অবস্থা তৈরি করবে? বিএনপি এতে লাভবান হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? এসব প্রশ্নের জবাব এক কথায় দেয়া যাবে না। আমরা জানি, জামায়াত নিষিদ্ধের একটি আইনি প্রক্রিয়া চলমান। জামায়াত নিয়ে দেশে যে একটি প্যাঁচের রাজনীতি চলছে বছরের পর বছর ধরে এবার সরকার তার একটি নিষ্পত্তি করতে চায় বলে মনে হচ্ছে । এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে বিজয় অর্জন করেছে তাতে তারা হয়তো জামায়াতের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে দ্বিধা করবে না।

জামায়াতকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন সেনা শাসক জিয়াউর রহমান। কিন্তু পুনর্বাসিত হয়ে জামায়াত সব দলেরই আনুকূল্য পেয়েছে। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিও জামায়াতের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়নি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াত যখন যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হয়, তখন তার তীব্র বিরোধিতা- না আওয়ামী লীগ করেছে, না বামেরা করেছে। বিষবৃক্ষের কাছে অমৃতফল আশা করলে কী হয় সেটা আমাদের গণতান্ত্রিক মহল যখন বুঝতে পেরেছে ততোক্ষণে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগও একসময় জামায়াত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলো। জামায়াতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের অদূরদর্শিতাও আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে। তবে তেলে-জলে যেমন মিশ হয় না, তেমনি জামায়াত-আওয়ামী লীগও একসাথে চলতে পারেনি। এই দুই দলের দুই ‘তরিকা’।

জামায়াতও বুঝে গিয়েছিলো, আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে তারা নিরাপদ থাকতে পারলেও বাড়তে পারবে না বা শক্তি বৃদ্ধি ঘটাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত সংসদে মাত্র তিনটি আসন পায়। অথচ আগেরবার বিএনপির ছায়ায় থেকে ১৮ আসন পেয়েছিলো। জামায়াত যেহেতু দেশের সবচেয়ে সংগঠিত এবং কৌশলী রাজনৈতিক দল, সেহেতু তাদের ভুল বুঝতে দেরি হয়নি। তারা গিয়ে সওয়ার হয় তার স্বাভাবিক মিত্র বিএনপির ঘাড়ে। বিএনপিও বোঝে, আওয়ামী লীগের মতো তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত আন্দোলন-সংগ্রামে পোড় খাওয়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলকে মোকাবেলা করতে হলে জামায়াতের মতো মিত্র থাকাটা জরুরি। সেই থেকে বিএনপি জামায়াত একে অপরের হলো। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিন কারো এক রকম যায় না। বিএনপি ভেবেছিলো, দেশের একটি বড় সংখ্যক মানুষ যেহেতু আওয়ামী লীগ এবং ভারতবিরোধী সেহেতু আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জামায়াত যার মিত্র তার আর ভয় কী?

এখানেই বিএনপি হিসেবে বড় ভুলটি করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে গাদ্দার নয়, শহীদের রক্তের সঙ্গে যে সবাই বেঈমানি করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে বিপুল সংখ্যক মানুষ বুকে ধারণ করেন সেটা বুঝতে না পেরে বিএনপি-জামায়াত এক অলৌকিক জলযানে চেপে দরিয়া পারের কোশেশ করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়েছে। জামায়াতের মতো দলের সঙ্গ না ছেড়ে বিএনপি নিজের কবর নিজে খুঁড়েছে। এখন বিএনপি আত্মরক্ষার জন্য বিএনপি ছাড়ছে। একসময় বিএনপির ছাতা জামায়াতের প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু বর্তমানে জামায়াতের সামনে যে দুর্যোগ তাতে বিএনপির পুরনো জীর্ণ ছাতায় রক্ষা পাওয়া যাবে না। আদালত যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন তখন কী হবে তাদের কৌশল? নতুন নামে মাঠে আসবে? নাকি বিএনপিতেই বিলীন হবে জামায়াত? দেখা যাক কী হয়!

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়