বিভুরঞ্জন সরকার
গত প্রায় ৫০ বছর ধরে রাজনীতির নিবিড় পর্যবেক্ষক আমি। কতো কিছু দেখলাম। কতো ক্রিয়া, কতো প্রতিক্রিয়া, কতো ক্রোধ, কতো ক্ষোভ, কতো আশা, কতো হতাশা, কতো তত্ত্ব কথা, কতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, কতো তাত্ত্বিক, কতো ব্যাখ্যাকার, কতোজনকে পথভ্রষ্ট হতে, চোরাপথে হারিয়ে যেতে দেখলাম।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কতো রক্ত, কতো ত্যাগ, কতো কষ্ট-বেদনা-হাহাকার। সদ্য স্বাধীন দেশে বিপ্লবের নামে সিরাজ সিকদার ও তার দলবল কতো মানুষ হত্যা করলো। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুট। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের হত্যা।
জাসদও গণবাহিনী করে হত্যা-সন্ত্রাসের পথ ধরলো। না, এসব ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে কেউ প্রচার করলো না।
কিন্তু সিরাজ সিকদার নিহত হওয়ার পর সে কী প্রতিক্রিয়ার ঝড়! সিরাজ সিকদার মানুষ হত্যা করলে সেটা সমর্থন করা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে কেন হত্যা করবে?
রাষ্ট্রশক্তি যখন অনাচার করে তখন কোন দল ক্ষমতায় সেটা যদি হয় প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়ার মাপকাঠি তখন আর বিষয়টি মানবিক ও হৃদয়জাত থাকে না। সেটা হয় রাজনীতিজাত!
পুলিশকে প্রকাশ্যে থেঁতলে মারা, তার অস্ত্র কেড়ে নেয়া, ব্যারাক আক্রমণ করে পুড়িয়ে মারা-দোষের কিছু নয়। কিন্তু পুলিশ আত্মরক্ষা করতে গেলে মানবাধিকার লংঘিত যায়। পুলিশের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার কান্না কারো সহানুভূতি পাবে না।
না, কাউকে বিনাবিচারে অবশ্যই হত্যা করা যাবে না। সেটা অন্যায়। শাস্তি হতে হবে বিচার করে। আমার দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে বিনাবিচারে, বিনা অপরাধে। ক্ষমতাসীনরা তার কোনো বিচার করেনি। কিন্তু আমি যদি ঘাতকদের চিহ্নিত করে হত্যা হত্যা করতাম? রেহাই পেতাম কী?
আইনের প্রতি শ্রদ্ধায় যারা গদগদ তারা সময়ে সরব, সময়ে নীরব।
আমি খুব সাহসী মানুষ নই। বরং বলা যায় ভীরুতা আমার বৈশিষ্ট্য। আমি আমাকে চিনি। আমার সবলতা জানি। আমার দুর্বলতাও আমি জানি। তাই অহেতুক আমি বিবেকের দুয়ারে ধরনা দিয়ে বিলাপ করি না।
কক্সবাজারের একটি হত্যাকা- এবং একটি অডিও রেকর্ড অনেকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সত্যি বলছি, আমার নেয়নি। এতো অপরাধ জীবনে প্রত্যক্ষ করছি, সবগুলো যদি ঘুম কেড়ে নিতো তাহলে আমার জীবন তো নির্ঘুম কাটার কথা।
মানবাধিকার নিশ্চিত হোক- আমি সেটা চাই । কিন্তু শর্তহীনভাবে নয়। সেজন্যই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, আবার অন্যদের চাই না। অনেক কথা আমি বলতে পারি। এগুলো আমার মত। আপনাকে আমার সঙ্গে একমত হতে হবে- এমন দিব্যি তো আমি দিচ্ছি না। আমি যেমন আমার প্রশংসা চাই না, তেমনি নিন্দা শুনেও ঘাবড়ে যাই না। হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর এবং আত্মকেন্দ্রিক। আমি সবার আগে আমাকে, আমার পরিবারকে, তারপর অন্যদের ভালোবাসি।
আপনি সবাইকে ভালোবাসেন, আপনি মহৎ। আমাকে ছোট করার ক্ষুদ্রতা দেখানো তো আপনার সাজে না ।
আর হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে আর কোনো ব্যক্তির হত্যাকে যারা এক করে দেখেন তাদের আমি ধিক্কার জানাতে কুণ্ঠিত নই। প্রত্যেকের কাছে প্রত্যেকের জীবন মূল্যবান। কিন্তু সব মানুষই ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন না।
আমার এই ‘দালাল’ মনোভাব, ‘তৈলাক্ত’ অবস্থান আপনার অপছন্দ হতেই পারে, সেটা আপনি লিখুন। আমার বলার স্বাধীনতায় আপনি হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রেও আমার একই নীতি হবে। ফেসবুক থেকে