স্মৃতি খানম : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের শিক্ষক অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেছেন, ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভেতর বেশ বড় একটা জনগোষ্ঠী ‘ব্লেইম গেমে’ নেমে যায়। কখনো রাজনৈতিক দলের নামে, কখনো ধর্মের অজুহাতে, ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট পাপ সংঘটিত করার মনোভাবকে অনেকটাই ঢেকে দেয় অযথা যুক্তিতর্কে। আমি বিশ্বাস করি, কোনো ধর্মই ধর্ষণকে সমর্থন করে না, বলে না ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীরই দোষ খুঁজো কিংবা এও বিশ্বাস করি না, দেশে বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ধর্ষককে উৎসাহিত করে। বরং আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম, বর্ণ, জাত, রাজনৈতিক মতাদর্শ সব এক কণ্ঠে উচ্চস্বরে ধর্ষণের মতো কাজকে ঘৃণা এবং এর ন্যায্য বিচার দাবি করেন। সূত্র: সমকাল
তিনি আরও বলেন, এই যদি হয়, তাহলে ধর্ষক কোন রাজনৈতিক দলের? কিংবা লাঞ্ছনার শিকার হওয়া ওই নারীটি কতোটুকু কাপড়ে নিজেকে আবৃত করে রেখেছিলেন, সেই তর্ক-বিতর্ক কি খুবই অসমীচীন নয়? কারণ এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একসঙ্গে করলে দেখা যাবে, ধর্ষণের জন্য কোনো সময় লাগে না। ভোররাতে, দিনে, মাঝরাতে নারী লাঞ্ছিত হয়েছে। গায়ে এক প্রস্থ কাপড়ে মোড়া নারী লাঞ্ছিত হওয়ার কাহিনীকে কাপড়ের দোষে ফেলা যেত, যদি আগাগোড়া হিজাবে মোড়া নারী কিংবা ৮০ বছরের বৃদ্ধ নারী লাঞ্ছিত না হতো। বাদ যায়নি শিশুসন্তানও। ধর্ষকের কাতারে কোনো পেশা বাদ গেছে? কিংবা কোনো বয়স? তাহলে এই অহেতুক তর্ক কি অযথা কালক্ষেপণ নয়!
পুরুষদের জাত ধরে গালাগালের বিপক্ষে আমি। এমন বহু পুরুষকে জানি যারা প্রতিটা ধর্ষণের ঘটনায় লজ্জিত হয়েছেন, জীবনবাজি রেখে ধর্ষককে খুঁজে বের করেছেন। সম্ভাব্য ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে অনেক অচেনা মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। পুরুষ আইনজীবীদের কণ্ঠে শুনেছি বাধা উপেক্ষা করেও ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণ কাঁপিয়ে তুলতে। সংবাদপত্রে প্রতিবাদ তুলেছেন অনেক পুরুষ সাংবাদিক। পিতা ত্যাজ্য করেছেন তার ধর্ষক সন্তানকে।
ধর্ষণ নির্দ্বিধায় এক মানসিক বিকৃতি। জানা প্রয়োজন, ঠিক কোথায় এই বিকৃতির শুরু? কেন মনুষ্যত্বকে ধূলিসাৎ করে একজন পুরুষ ধর্ষকের কাতারে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই বলবেন, দৃষ্টান্তমূলক ও শাস্তি প্রদানের অভাব। অনেকের ভেতরেই লুকায়িত বিকৃতিকে সাহস দিচ্ছে; সেটা হয়তো ঠিক আছে। যদি তাই হয়, তবে আইন বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন, এই আইন কতোটা শক্তিশালী করা উচিত। কিন্তু আমার মনের প্রশ্ন হলো, এই বিকৃতির উৎস কোথায়? কোনো মানব শিশু তো বিকৃত মনোভাব নিয়ে জন্মায় না। তাহলে ঠিক কখন কীভাবে ছোট নিষ্পাপ ছেলেটা একজন ধর্ষকে পরিণত হয়?