কাকন রেজা : হিরো আলম যখন নির্বাচনের ইচ্ছে পোষণ করলেন, তখন অনেকেই এটাকে নিয়ে গেলেন মজার পর্যায়ে। কেউ কেউ প্রতিপক্ষকে হেয় আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে হিরো আলমের কাঁধে ভর করলেন। এখন সেই হিরো আলম আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পর্যায়ে নেই। স্বয়ং নির্বাচন কমিশন সচিব সমালোচনার মুখে পড়েছেন হিরো আলম বিষয়ে কথা বলে। এখন হিরো আলম সচিব সাহেবের পদত্যাগ চাইছেন।
‘বুমেরাং’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত, প্রচলিত। প্রাচীনকালের কাঠের তৈরি একটি অস্ত্র, যা নিক্ষেপের পর আবার নিক্ষেপকারীর দিকেই ফিরে আসে, তাই হলো ‘বুমেরাং’। হিরো আলমের বিষয়টি এখন ‘বুমেরাং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের জন্য। নির্বাচনের ইচ্ছে পোষণের পর হিরো আলমকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোনো কোনো মাধ্যম ‘খালেদা জিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হিরো আলম’ খবরের এ ধরনের শিরোনাম করেছিলো সে সময়। কোনো মাধ্যম আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলো, ‘খালেদা জিয়া না হিরো আলম, কে বেশি যোগ্য’- এমনটা। অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে বুঝে বা না বুঝে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হিরো আলমকে তুলে আনা হয়েছিলো। তুলে আনার সমূহ কারণ ব্যাখ্যার সম্ভবত প্রয়োজন নেই। জানা ব্যাপার জানাতে গেলে মানুষ বিরক্ত হয়।
নাগরিক হিরো আলম প্রশ্নে আসি। রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিককে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছে। আর সে কথা প্রতিপালন করার দায়িত্ব রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্বাচিত পরিষদের। যাকে বলা হয় সরকার। নাগরিক অধিকার যদি সমান হয়, তবে নেতৃবৃন্দের কারো চেয়ে হিরো আলমের প্রাপ্যতা কম নয়। খালেদা জিয়ার চেয়েও নয়। তার প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শনও সেই প্রাপ্যতার মধ্যে পড়ে। সেই নিশ্চিত নাগরিক প্রাপ্যতাও এখন প্রশ্নের মুখে।
কদিন আগে গণমাধ্যমে দেখলাম, এক মহিলা রিকশাওয়ালাকে গালি দিচ্ছেন এবং তার গায়ে হাত তুলছেন। তাকে তুই-তোকারি করছেন। রাস্তার লোকজন তার প্রতিবাদ জানালে তিনি তাদের প্রতিও ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে এসেছেন। পরবর্তীতে প্রকাশ পায় ওই মহিলা একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেত্রী। দলটি তাদের সে নেত্রীর এমন কর্মকা-ের দায়ভার নিতে চায়নি, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে দল থেকে। এটাই সঠিক রাজনীতি। রাজনীতি মানুষের জন্য, যে রাজনীতি মানুষের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে তা মূলত অপ্রয়োজনীয়।
হিরো আলমকে যারা প্রথমে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ‘অনুপান’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন, তারা এখন নিশ্চয় ‘বুমেরাং’ বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারছেন। বুঝতে পারছেন, তাদের রোপিত চারা গাছটি ক্রমেই বৃক্ষ হয়ে উঠছে। শুধু বৃক্ষ নয়, রীতিমত কাঁটা শোভিত বৃক্ষ। এমন কাঁটা বৃক্ষ অনেকই রোপিত হয়েছে। প্রকাশ্যে কিংবা আড়ালে-আবডালে বেড়ে উঠছে তারা। এসব বৃক্ষের কন্টকাঘাতে রোপনকারীদের সাথে অন্যরাও হচ্ছেন ক্ষত-বিক্ষত, ক্ষতিগ্রস্ত।
বিষয়টি হালনাগাদ বুঝতে না পারলে কিংবা না চাইলে, করার কিছু নেই। হয়তো দিনশেষে কাঁটার আঘাতই হয়ে দাঁড়াবে এখনকার অনিবার্য নিয়তি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
আপনার মতামত লিখুন :