শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৬:৩৩ সকাল
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৬:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সব গ্রাম উন্নীত হবে শহরে

যুগান্তর : উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এতে প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নে আছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

এছাড়া যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। আগামী দিনের জন্য প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিগত সময়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরা হয় ইশতেহারে। এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চলমান প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করা হবে বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংসদকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথাও বলা হয়েছে।

২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা। এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সব বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা। দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করার কথা বলা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা অব্যাহত রাখা। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় ইশতেহারের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এতে স্থান পেয়েছে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার। আছে ক্ষমতায় গেলে কি কি বিষয় নিয়ে কাজ করবে আওয়ামী লীগ। বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতিও আছে আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহারে।এ অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইশতেহার প্রকাশের অনুষ্ঠান। শুরুতেই আওয়ামী লীগের শাসনমালের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর ৮০ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহারের সারসংক্ষেপ পাঠ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, এরপর আসন্ন ৩০ ডিসম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম হল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দশ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৮০ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার।

ইশতেহারের শুরুতেই অর্থাৎ সূচিপত্রের পরেই আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে। শুরু হয়েছে ‘আমার শহর-আমার গ্রাম’ ভাবনা দিয়ে। ফের ক্ষমতায় এলে এই ২১টি অঙ্গীকারের ওপর বিশেষ জোর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

২১টি বিশেষ অঙ্গীকার হচ্ছে : ১. আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, ২. তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, ৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, ৪. নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, ৫. পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; ৬. সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, ৭. মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, ৮. গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, ৯. দারিদ্র্য নির্মূল, ১০. সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, ১১. সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ১২. সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, ১৩, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, ১৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ১৫. আধুনিক কৃষিব্যবস্থা-লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ, ১৬. দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, ১৭. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ১৮. ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, ১৯. নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, ২০. প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং ২১. টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

আমার গ্রাম-আমার শহর : উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামপর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।

তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। উপজেলাগুলোতে ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।

বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।

আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি : তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতিমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে। তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রণয়ন করা হবে একটি যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি’।

দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস : বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ৪ কোটি ৯২ লাখ লোক বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে; আগামী ৫ বছরে এ খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হবে। দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরেপনা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হবে। দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ১২.৩ ও ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে দরিদ্র জনসংখ্যা ২.২ কোটির নিচে নামানো হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য হাসিল করা হবে।

ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায় : অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব ধরনের আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান করা হবে।

পররাষ্ট্র : আন্তর্জাতিক যে কোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক অরো জোরদার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদার ও বিস্তৃত করা হবে।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ : ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চপর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করা হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগের নীতি আরো বৃদ্ধি করা হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

‘জয়িতা’ ফাউন্ডেশন সম্প্রসারণের মাধ্যমে নারীদের সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে।

নারীদের পুরুষের সমান মজুরির নিশ্চয়তা দেয়া হবে এবং গ্রামীণ নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও সব ক্ষেত্রে নারীদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চমৎকার ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ গড়ে তোলা হবে এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ পর্ব-২ : ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো হবে। ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা হবে। শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রফতানি ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এবং সাবমেরিন ক্যাবল-৩ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।

গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা হবে : মিথ্যা তথ্য প্রচার ও অনাকাঙ্ক্ষিত গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা। সামাজিক দায়বদ্ধতাসমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহ প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গণমাধ্যমবান্ধব আইন করা। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনের কোনো অপপ্রয়োগ না করা। সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রস্তাবিত ৩১ তলা ভবন নির্মাণের সহায়তার কথা আছে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারক নিয়োগের পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিচারকদের জন্য যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ, গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা, বিরোধ নিরসনে বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার, প্রতি জেলায় লিগ্যাল এইড স্থাপনসহ বিচারকদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে।

আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রাখা, প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়-পরায়ণতা এবং জনসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। আগামী পাঁচ বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা।

জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত রাখা। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে আরও শক্তিশালী করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও প্রসারিত করার জন্য সরকারের সাহায্য ও উদ্যোগ অব্যাহত রাখা এবং নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের বর্তমান গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করার পাশাপাশি ফুটবল, হকিসহ অন্যান্য খেলাধুলাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সুবিধার সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে। নির্মাণ করা হবে প্রতিটি উপজেলায় স্টেডিয়াম।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির যেসব ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমিতে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব ধরনের আইন ও ব্যবস্থার অবসান করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়