শিরোনাম
◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:০৬ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষানীতির বেশির ভাগ সুপারিশই বাস্তবায়ন হয়নি

বণিক বার্তা : জাতীয় শিক্ষানীতিতে অন্যতম সুপারিশ ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা। নয় বছর পরও এ সুপারিশ বাস্তবায়নে বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হওয়ার কথা ছিল ১:৩০। এ লক্ষ্য থেকেও অনেক পিছিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন হয়নি শতভাগ শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুপারিশও। বিজ্ঞানের শিক্ষকদের হাতে-কলমে শিক্ষার কথা বলা হলেও বিজ্ঞানাগার নেই মাধ্যমিক স্তরের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়েই।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে পরিচালিত হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে শিক্ষানীতির ওপর। বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে অপূর্ণই থাকছে গুণগত মানের শিক্ষার জন্য প্রণীত শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে অন্যতম সুপারিশ ছিল প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা। এজন্য দুটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এর একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অন্যটি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে কিছু কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক নির্দেশিকা প্রণয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষকের জন্য শিখন-শেখানো কার্যক্রমের ওপর ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাসের কথাও বলা হয় শিক্ষানীতিতে। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, শ্রেণীকক্ষ বাড়ানো ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ও লোকবল নিয়োগের সুপারিশও করা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। এজন্য সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত একীভূতকরণের ক্ষেত্রে বেশকিছু করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। আমরা ২০১১ সাল থেকেই এর বাস্তবায়ন শুরুর কথা বলেছিলাম। সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সময়মতো শুরু করা হয়নি। সে সময় শুরু করলে এত দিনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যেত।

মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০ করার কথা বলা হয়েছে শিক্ষানীতিতে। যদিও বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪২। অর্থাৎ শিক্ষানীতিতে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার পরও সে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নানা উদ্যোগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হারে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে। শিক্ষার্থীর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক থাকাটা শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে জরুরি। তাই সরকারের উচিত শূন্য পদ পূরণে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। প্রয়োজনে নতুন পদ সৃজন করতে হবে।

বিজ্ঞান শিক্ষার বিষয়ে শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়া বিজ্ঞান শিক্ষা অর্থহীন। এজন্য মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতিটি শাখায় নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাসের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। যদিও দেশে এমন অনেক বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোয় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোয় পাঠদান করা হলেও হাতে-কলমে শিক্ষায় কোনো বিজ্ঞানাগার স্থাপন করা হয়নি। ব্যানবেইসের শিক্ষা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৯ শতাংশে এখনো কোনো বিজ্ঞানাগার স্থাপন করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান দুটোই সমান অপরিহার্য। শ্রেণীকক্ষে তত্ত্বীয় বিষয়ে পাঠদান করা গেলেও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিজ্ঞানাগার থাকাটা আবশ্যক।

দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার না থাকার চিত্রটি খুবই হতাশাজনক বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান বিষয়ে অতি সামান্য ধারণা পাচ্ছে। মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয় মাধ্যমিক ধাপে গিয়ে। যদিও এ ধাপটিতে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এর মূল কারণ, বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব ও পর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামো না থাকা।

শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন করা হয়নি শিক্ষানীতির সুপারিশ। সব বিষয়ের শতভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে শিক্ষানীতিতে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও অনতিবিলম্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

যদিও সরকারি হিসাবেই দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদানে নিয়োজিত মোট ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭১ হাজার ৭০২ জন শিক্ষক কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন। এ হিসাবে মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষক এখনো অপ্রশিক্ষিত।

প্রশিক্ষণে মাধ্যমিক শিক্ষকদের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, শিক্ষার প্রতিটি ধাপেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। তবে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যতটুকু উন্নয়ন প্রয়োজন ছিল, ততটা করা সম্ভব হয়নি। দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। অনেক সময় এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে অনাগ্রহ থাকে। আবার প্রশিক্ষণ নিয়েও তা শ্রেণীকক্ষে প্রয়োগ করা হয় না। নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে।

গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। এজন্য ২০০৯ সালে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির প্রতিবেদনের পর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নেয়ার জন্য সেটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৯ মে মন্ত্রিসভায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর অনুমোদন দেয়া হয়।

বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা খাতের যা উন্নয়ন, তার সবই এ শিক্ষানীতির আলোকে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শুরুর দিকে আমাদের পরিকল্পনা ছিল শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আমরা সেক্ষেত্রে সফল। এরপর ধীরে ধীরে অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ দেয়া হয়। বর্তমানে আমরা কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কাজ করছি। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যত ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, তা ক্রমান্বয়ে নেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষা খাতের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়