শিরোনাম
◈ সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ভাঙার খবরে মমতার উদ্বেগ, ভারতের সংস্কার প্রস্তাব ◈ ৭ আগস্ট প্রকাশ করা হ‌বে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত নাম প্রকা‌শের তা‌লিকা ◈ অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ও‌য়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড কিংবদন্তিদের শরণাপন্ন  ◈ ছাত্রদল কেন শিবিরকে গুপ্ত সংগঠন বলছে? ◈ বিশ্বকাপের আ‌গে  বাংলা‌দেশ দল কলম্বোতে দু‌টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা

প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৯ সকাল
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লজ্জা

ইকবাল আনোয়ার : জেনে গেছে তাহের, তারা গরিব আর ওরা ধনী। এ বিভাজন জন্ম-জন্মান্তরের কিনা কে জানে, তবে এক সম্দ্রু ফারাক। তাহেরদের ঘরের মেঝে শীতল, মাটির, কেঁচো ওঠে বর্ষায়। মেহমান এলে বসতে দেয়া দু’খানা কাঠের চেয়ার, একটা নড়বড়ে। একটা ঘরকে মাঝখানে তর্জার বেড়া দিয়ে দুটো বানানো হয়েছে। মেহমান রাতে থাকতে চাইলে সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েও লজ্জা  যায় না। গরিবির লজ্জা বড়ো ভয়ংকর।

পায়খানা দূরে, সেখানে ঝিলমিল সাদা...। রাতে ঘরে ঢুকে যায় জোনাকী। ভাবে জংগলের অংশ। কে তা হলে মরবে! না কেউ না মরলেও কোনো একটা ইচ্ছার মরণ হবে হয়তো। এরই মধ্যে দোতলার মেয়েটার সাথে তার হয়ে গেলো ভাব। কালো মেয়ে। চিকন-চাকন। তাদের ঘরে এসে খালাম্মা খালাম্মা করে। তাহেরের মা মেয়ের মতো আদর করে বলে সে আসকারা পায়। দেুাতলার আপত্তি হয়, এটাই  তো স্বাভাবিক। কিন্তু মেয়েটা জেদি ভীষণ। তাহের মনচোরা।

একদিন বিশাল ঝড় হয়। আকাশ যেন দোজখের মতো অন্ধকার। তার কিছু আগে কা কা করা কাকের সাবধানবাণী। মা টের পান। আকাশ কালো অন্ধকারে কয়েকটা বকের সতর্ক উড়ে যাওয়া দেখে তাহেরের ভয়ের মধ্যে ভালো লাগতে থাকে। এমন জমিনে কেমন করে নারকেলগাছগুলো ভীষণ নড়ে আর শব্দতরঙ্গ কেমন উচাটন হলে ভয়ের দরিয়ার সন্ধান মেলে তা দেখতে চায় তাহের।

তুফান শুরু হলে প্রথম দমকেই পাকের লাগোয়া ঘরটা পড়ে যায়। মূল ঘরটা ঢেউয়ে পড়া জাহাজের মতো নড়তে থাকে। বাবা আফিসে। মা তার সাধ্যমতো পাখির স্বভাবে শাড়ির ভিতর লুকিয়ে রাখেন তার সন্তানদের। হঠাৎ বেড়ার ডানদিকটা পর্দার মতো আধা-আধি উড়তে থাকে। মা তাহেরদের ছেড়ে বেড়া ধরতে যান। তাহের তখন দেখতে পায় দু’তলা থেকে মেয়েটা ডাকছে। জীবন-মরণের ফারাক তখন। তাহেরের মনে নতুন উপলব্ধির জন্ম নেয় এমন সময়। এটাই যেন উত্থান পর্বের জন্য দরকার ছিলো। তাহের ভাবছে, মরি আর বাঁচি, এটাই নিজের ঘর।

যাবো না ধনীর ঘরে। ওখানে গরিবের আত্মপীড়া বেশি, অসহায় অন্যের সহায় নেবে, করুণা করে তা দেবে! এ বড়ো লজ্জার। এ ঝড় থেকে বেঁচে গেলে নিজের বর্ম নিজেকেই যোগাড় করতে হবে। নতুবা ঝড়েই মরণ ভালো।

পুনশ্চ : মেয়েটার ডাকটা উপেক্ষা করা ঠিক হয়নি তার। এ ডাকটাতো ছিলো মহানুভবতার। না, ঠিক এমন নয়। তাহের দোতলায় যাবে না বুঝালো আর মেয়েটাকেও একটা ইংগিত করলো, দারুণ, মেয়েটা বুঝে নিলো। এ ঘোর বিপদেও প্রসূন ফোটে মধুর লজ্জার। কোনো সময় অসময় মানে না এ পবিত্র সম্পান,  যতোই একসমুদ্র ব্যবধান।

লেখক : চিকিৎসক ও কবি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়