কান্তা আইচ রায় : বাংলাদেশ এক দশকে নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে অনেকটা পথ হেঁটেছে। একদিকে যেমন পুরুষের তুলনায় বেড়েছে শিক্ষার হার, অন্যদিকে তেমনি অর্থনীতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবদান রাখছেন আজকের নারীরা। এই উন্নয়নযাত্রায় নারীর প্রতি সংহিসতা- কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনের অন্তরায় বলে মনে করেন, মানবাধিকারকর্মীরা। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ঝরে পড়া ঠেকাতে নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই। সূত্র : ডিবিসি নিউজ
১০ বছর আগের চিত্র ছিলো ভিন্ন। পুরুষ আর নারীর শিক্ষার হারের অনুপাত ছিলো ৬৫আর ৩৫। বর্তমানে অনুপাত পাল্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ আর ৫৩ তে। নারী শিক্ষার হারে বিশ্বে ১০৯তম অবস্থান বাংলাদেশের। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষায় নারীর অবস্থান এখনও অনেক পিছিয়ে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, ‘উপবৃত্তির অর্থ মায়ের মোবাইল ব্যাংকে এ জমা হচ্ছে। এখানে কোন কারচুপি হচ্ছে না। এই ধরনের আরও অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়ে নারীর শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া দরকার। তবে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় এখনও মহিলারা পিছিয়ে।’
নারী শিক্ষার অগ্রগতি অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান এনে দিয়েছে। এখন দেশের শ্রমবাজারের ৩৬ শতাংশ নারী। নারী উদ্যোক্তা তৈরি এবং উন্নয়নের জন্য বাজেটের প্রায় ৩০ ভাগ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকা- থেকে নারীদের ঝরে পড়া ঠেকানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘৮০ ও ৯০ এর দশকে নারীরা যে সব ক্ষেত্রে কাজ করতে শুরু করে তার চাইতে গত ১০ দশ বছরে নারীরা কর্পোরেট আথবা রেমুনারেটিভ খাতে অনেক বেশি কাজ করতে এসেছে। শিক্ষিত নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর অগ্রযাত্রা আরও বেশি দ্রুততর করতে হলে, তাদের সাপোর্ট সিস্টেমকে সহজ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
স্বাধীনতার পর নারী জাগরণের যে জোয়ার তৈরি হয়েছিলো, তা থমকে যায় ৭৫-এর পর। দীর্ঘ প্রতিবন্ধকতার পথ পেরিয়ে, বিগত এক দশকে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নারীরা। এখন দেশের সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিসভায় আছেন ৫ জন নারী। আর জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত রয়েছেন ২৩ জন নারী সদস্য। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম।
মানবাধিকার কর্মী রোকেয়া কবির বলেন, ‘নারীরা যে দক্ষতা নিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছে সেখানে যদি ডিজায়াবেলিং এনভায়রনমেন্ট থাকে তবে তারা সে কাজটি করতে পারবে না। ডিজায়াবেলিং এনভায়রনমেন্টকে এবিলিং এনভায়রনমেন্টে পরিণত করতে, আমাদের সরকারি বেসরকারি সকল শক্তিকে উদ্যোগ নিতে হবে।’ নারী-পুরুষ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। নারীর এই অগ্রযাত্রা বেগবান করতে, সংহিসতা প্রতিরোধ এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :