ফিরোজ আহমদে : ঢাকা লিট ফেস্টে এবার দুটো পর্বে সঞ্চালক হিসেবে ছিলাম। বিকেলের পর্বটিতে বিষয় ছিলো ‘ভাঙা গড়ার দিনগুলো : স্মৃতিচারণায় বঙ্গবন্ধু’। যে তিনটি গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, আফসান চৌধুরী ও কাইয়ুম খান, সেগুলো হলো এস এ করিমের ‘শেখ মুজিব : ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্র্যাজেডি’, মফিজ চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’ এবং সাংবাদিক এবিএম মুসার লেখা ‘মুজিব ভাই’।
তৃতীয় বইটি অন্তরঙ্গ কিছু কাহিনী ও ঘটনার ছোট ছোট বিবরণ। দ্বিতীয় বইটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভায় অবস্থানর সূত্রে দেখা আশা ও আশাভঙ্গের ঘনিষ্ঠ স্মৃতিচারণার জন্য। রসায়নের মেধাবী ছাত্র, আমলা থেকে রাগ করে শিল্পদ্যোক্তা, এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ধিক্কারবশত রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া মফিজ চৌধুরীর গ্রন্থটি ৫০ থেকে ৭০ দশক পর্যন্ত সময়ের রাজনীতি বোঝার জন্যও দারুণ কাজে আসবে। এস এ করিমের বইটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত এই বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত। অথচ সবচে বেশি বিশ্লেণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ও তথ্যাদিতে পূর্ণ। বইটার বাংলা হওয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ ছিলো বাংলাদেশের প্রকাশনা নিয়ে পর্বটিতেই এবং আমি হতাশ হয়েছি। উপস্থিত শ্রোতাদের সংখ্যাল্পতা একদিকে বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংকটের গুরত্বপূর্ণ গ্রন্থটি নিয়ে আমরা সচেতন নই, অন্যদিকে যারা এই পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি বুঝিয়ে দেয় এই বিপদটি নিয়ে আমাদের আরও সোচ্চার হতে হবে।
এই পর্বে আমার প্রশ্ন ছিলো একটা পর্যবেক্ষণ থেকে উৎসারিত : কেন বাংলাদেশের প্রধান বইয়ের দোকানগুলোতে বাংলাদেশের প্রধান লেখকগণের, সক্রিয় লেখকগণের বইপত্র পাওয়া যায় না? এই নিয়ে প্রকাশকদের কী করার আছে? কীভাবে আমরা এই সংকট মোকাবেলা করতে পারি? শুধু প্রকাশকরা কেন, যে লেখকদের গল্প-কবিতা-উপন্যাস-গবেষণা বাংলাদেশে প্রকাশিত হয় বলে মেলে না বাংলাদেশে, সে নিয়ে তাদেরও নিশ্চয়ই কিছু করার আছে। এমনকি প্রচ্ছদশিল্পীর ভবিষ্যতও তো এর সাথেই জড়িত। বৈশ্বিক জ্ঞানের দরোজা খুলে রেখেই কিভাবে দেশে জ্ঞান ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপায় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এক প্রকাশক সেদিন যেমন দাবি করলেন, বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদা নেই বলে সেগুলোর দোকানে থাকে না। অথচ এই দেশেই শওকত ওসমানের মতো লোকমান্য গ্রন্থকার নিউ মার্কেটে তার নিজের বই খুঁজে পাননি। কিন্তু যে বিক্রেতারা তার বই বিক্রি না করে অন্যদের বই বিক্রি করেছেন বা কৃ্িত্রম চাহিদা তৈরি করছেন, তাদেরও গালিগালাজ না করে তাদের স্বার্থটাও রক্ষার উপায় আমাদের বের করতে হবে।
সকলেরই ভুল শুদ্ধ নানান কিছু আছে। কিন্তু এই সাধারণ স্বার্থের জায়গাতে কিছু করাটা দরকার বাংলাদেশে সংস্কৃতির অচলায়ন ভাঙার জন্যই। চেষ্টা করবো এই আলোচনা ও কয়েক মাসের পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু একটা লেখার।
লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। ফেসবুক থেকে