শিরোনাম
◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৬:১৬ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৬:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংলাপ, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি

ড. তারেক শামসুর রেহমান : সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা একসময় সংলাপের কোনো প্র্রয়োজন নেই বলে ঘোষণা করলেও শেষ অব্দি প্র্রায় সব জোটের সাথেই সংলাপ করেছে সরকার। তবে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের কী ফলাফল দেয়, তা দেখার জন্য। প্র্রথম দফা সংলাপের পর ঐক্যফ্রন্টের সাথে দ্বিতীয় দফা সংলাপ ৭ নভেম্বর। পর্যায়ক্রমে সরকার সব জোটের সাথেই সংলাপ করলো। এতে বোঝা যায় সংলাপের বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমি বারবার বলে আসছি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জন্য একটি ‘আস্থার সম্পর্ক’ গড়ে তোলা প্র্রয়োজন। ‘আস্থার সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠা করার নামই গণতন্ত্র। আর এই গণতন্ত্রই আমারা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য এই ‘আস্থার সম্পর্ক’ খুবই জরুরি। এখানে একগুঁয়েমির কোনো স্থান নেই। একগুঁয়েমি গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়।

ডালাসে এসেছি মাত্র দুদিন। ঢাকা ছেড়েছিলাম যখন সবেমাত্র ঐক্যফ্রন্টের সাথে প্রথম দফা সংলাপ শেষ হয়েছে। এই ডালাসে অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন, সংলাপের ভবিষ্যৎ কী? প্রবাসে পড়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিড টার্ম ইলেকশন’ তাদের যতোটা না টেনেছে, তার চাইতে বেশি টেনেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। কেমন হবে ওই নির্বাচন? আওয়ামী লীগ কী আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে? বেগম জিয়া কী মুক্তি পাবেন? এসব প্রশ্ন আমাকে ডালাসে বারবার শুনতে হয়েছে। প্রথম দফা সংলাপ হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সাথে। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট আরও শক্তিশালী হয়েছে কাদের সিদ্দিকীর যোগদানের কারণে। কাদের সিদ্দিকীর দল ছোট। কিন্তু ব্যক্তি কাদের সিদ্দিকী অনেক ‘বড়’। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা তাকে ‘অবিসংবাদিত পুরুষে’ পরিণত করেছে। প্রায় সময়ই তিনি স্পষ্ট করে কথা বলেন। এখন ঐক্যফ্রন্টে তার যোগদান ঐক্যফ্রন্টকে যে আরও শক্তিশালী করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ এবং সমঝোতা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে এরশাদের নেতৃত্বে ফ্রন্ট বা জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই আমার কাছে। কেননা মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে জোট করেই একসাথে এখন নির্বাচনে যাবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাথে ‘আসন’ ভাগাভাগি হবে। কেননা এরশাদের নেতৃত্বে একটি বিকল্প বিরোধীদল তৈরি করার যে সম্ভাবনা ছিলো, সে সম্ভাবনা এখন আর নেই। মানুষ এখনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘প্রধান বিরোধী ফ্রন্ট’ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এরশাদের সেই সুযোগটি এখন আর নেই। যদি মহাজোট আবার সরকার গঠন করে, তাহলে কিছু পদ-পদবি নিয়ে জাতীয় পার্টিকে এখন খুশি থাকতে হবে!

প্রথম দফা সংলাপে সফলতার হার একশ’ ভাগ, তা বলে যাবে না। তবে ‘দূরত্ব’ তো কমে এসেছে। প্রথম দফা সংলাপে সরকার ঐক্যফ্রন্টের উত্থাপিত ৭-দফার বেশ কয়েকটি পরোক্ষভাবে মেনে নিয়েছে। যেমন- সভা-সমাবেশে কোনো বাধা দেয়া হবে না, বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও থাকতে পারবেন, মামলাগুলোর তালিকা দিলে, তা তারা দেখবেন ইত্যাদি। ইভিএম মেশিন বাদ দিলেও সরকারের কোনো ক্ষতি নেই। তবে সংসদ বহাল থাকা, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। নির্বাচনের আগে পৃথিবীর কোনো দেশেই সংসদ বহাল থাকে না। বাংলাদেশে অতীতে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে সংসদ বহাল ছিলো না। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এখন সরকার সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও নির্বাচন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের (এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) প্রতিনিধিদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সেই মন্ত্রিসভায় সরকারের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সংবিধানে এর ব্যাখ্যা আছে। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে, মন্ত্রিসভা গঠিত হবে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ওপর। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ‘টেকনোক্রেট’ কোটায় বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে ‘আস্থার সম্পর্ক’ স্থাপনে একটি দৃষ্টান্ত রাখতে পারেন। সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করাও সম্ভব। আইনগতভাবে বেগম জিয়ার মুক্তি দেওয়াও সম্ভব।

ভালো নির্বাচনের পূর্বশর্তই হচ্ছে ‘আস্থার সম্পর্ক’। এই আস্থার সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। নির্বাচনের আগে ন্যূনতম কোড অব কনডাক্ট পালন করা সবার জন্যই মঙ্গল। ইসি একটি আচরণবিধি তৈরি করতে পারে, যেখানে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, দলীয় প্রধানদের ব্যাপারে কোনো কটুক্তি করতে পারবে না। ভোট কারচুপি, কিংবা ‘সিল মারা সংস্কৃতি’ রোধে প্রতিটি কেন্দ্রে ইসি স্থানীয় গণমাধ্যম ব্যক্তিদের দিয়ে এক একটি ‘সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করতে পারে। চলমান সংলাপ আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় একধাপ অগ্রগতি। এই অগ্রগতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

লেখক : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়