মতিনুজ্জামান মিটু: আগাছা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নিত্য রোগের মহৌষধ জার্মানী লতা। লোক চিকিৎসা ভূমিক্ষয় রোধ, স্যুপ রান্নার সবজি ও গোখাদ্যসহ নানাভাবে ব্যবহৃত হয় ধন্বন্তরী এই লতা জাতীয় গাছটি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট, কৃষি উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, ছোটোবেলায় হঠাৎ কোথাও কেটে রক্তপড়া শুরু হলে ঠাকুমা কোথা থেকে দুটো পাতা ছিঁড়ে আনতেন। পাতা দুটো বাম হাতের তালুতে রেখে ডান হতের আঙুল দিয়ে কচলে সেই পাতা বাটা রস সহ কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিতেন। কি আশ্চর্য! মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই রক্তপড়া বন্ধ হয়ে কাটা জায়গাটা জোড়া লেগে যেতো। বাড়ির বেড়ায় বেড়ে ওঠা একটা লতানো গাছ। হৃৎপিন্ডের মতো আকৃতির সেই পাতা। ছোটোবেলায় আমরা সে গাছকে চিনতাম জার্মানী লতা নামে। বড়ো হয়ে বই পড়ে ওর নাম পেলাম আসাম লতা। জার্মানী হোক আর আসাম লতাই হোক, গাছটা যে ধন্বন্তরী তা সেই ছোটোবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলাম।
এ গাছের ভেষজ গুরুত্ব ও ব্যবহার সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, লোক চিকিৎসায় বিশেষ করে কাটা ক্ষত, রক্তপড়া বন্ধ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়রিয়া, ঘা, দাদ, চুলকানি, খোসপাঁচড়া, একজিমা, সিফিলিস, সর্পদংশনের বিষক্রিয়া, বিভিন্ন পোকার কামড়ের বিষাক্ত জ্বালা, পাকস্থলীর প্রদাহ, ম্যালেরিয়া জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠান্ডা নিবারণে এবং ডায়াবেটিস রোধ ও যকৃতের সুরক্ষায় এ গাছ ব্যবহৃত হয়। এ গাছের ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বিনাশী গুণ আছে। এর কান্ড বা লতা আদার সঙ্গে ছেঁচে রস করে বা সবজির সাথে খেলে পাকস্থলীর প্রদাহ লাগা চলে যায়। এর পাতার রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা আছে। সেজন্য কোথাও কেটে গেলে রক্তপড়া বন্ধ করতে এর পাতার রস লাগানো হয়। বসন্ত ও হামে এর পাতার রস পানিতে মিশিয়ে গা ধুইয়ে দিলে উপকার হয়।
আচ্ছাদন ফসল হিসেবে ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয় এই গাছ। এর পাতা কোনো কোনো দেশে স্যুপ রান্নায় সবজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গোখাদ্য হিসেবেও এর পাতা চমৎকার। এ গাছের পাতার ক্বাথ কফ ও চোখের ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হয়।
জার্মানী লতা বা আসাম লতা ইত্যাদি গাছের উৎপত্তি মধ্য আমেরিকা। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, শ্রীলংকা, চীন, মাদাগাস্কার, মরিশাস, মালাউ, কানাডা, মেক্সিকো, বাহামা, গুয়াম, পাপুয়া নিউগিনি, নিউ ক্যালেডোনিয়া প্রভৃতি দেশে এ গাছ দেখা যায়।
এ গাছ চাষের কোনো দরকার হয় না। গাছ খুব দ্রুত বাড়ে, ২৪ ঘণ্টায় তরুন গাছ প্রায় ৮০ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।