মোঃ ইমরান মিয়া : মানুষের জীবনে শিশুকাল বা শৈশব একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সময়ের ব্যবধানে এসে মানুষ তার সেই শৈশবের স্মৃতিকে খুঁজে ফেরে, পুলকিত অনুভব করে। কারণ, সেই দিনগুলো জীবনের বাকি দিনগুলো থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।
বাল্যবয়সে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা যেমনভাবে কোনো মানুষকে রোমাঞ্চিত করে তেমনি তার পরিবার ও নিকটজনদেরও আনন্দ দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, তখনকার অপরিপক্ব কাজের মধ্যে পাওয়া আনন্দ পরবর্তী জীবনে অভিজ্ঞতায় রূপ নেয়। মানুষের জীবনে এই অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক।
আমরা যারা গ্রামে বাস করেছি, আমাদের সময়কালে গ্রামের বিভিন্ন স্মৃতি এখনো তাড়িত করে। আর একটা বিষয় ভাবলে কষ্ট লাগে যে আমরা গ্রামে যেসব খেলাধুলা করতাম, এখনকার শিশুরা সেই খেলাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বা তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমরা যেমন সবুজ শ্যামল গ্রামের প্রকৃতির মাঝে বি¯তৃত ফসলের ক্ষেতে ঘুড়ি উড়াতাম, নদীতে সাঁতার কাটতাম, ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে থাকতাম, ডুব দিয়ে মাছ ধরতাম, ডাংগুলি, কানামাছি, লুকোচুরি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, হাডুডু, রান্নাবাটি, সাতচাঁড়া, মার্বেল খেলতাম তা বর্তমানের শিশুরা তেমন একটা খেলছে না। প্রযুক্তির কল্যাণে শিশুদের হাতেও পৌঁছে গেছে স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, পামটপের মতো বস্তু। এখন শারীরিক শ্রমের খেলাধুলা ছেড়ে ভার্চুয়াল খেলাধুলায় মেতেছে শিশুরা। যার নেতিবাচক দিক ক্রমশঃ দেখা যাচ্ছে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। চোখের ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে। আর যারা খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে তারা দেশি খেলার বদলে খেলছে ক্রিকেট ও ফুটবল। কারণ, ক্রিকেট ও ফুটবলে পেশাগত ও অর্থনৈতিক দিক রয়েছে। তাছাড়া দেশি খেলাগুলো হারিয়ে গেলে আমাদের সংস্কৃতির একটি বড় সম্পদও যে আমরা হারাব তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েরা ব্যস্ত থাকে স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট টিউশন নিয়ে। পরীক্ষায় ভালো ফল করার এক দুঃসহ চাপের মধ্যে দিয়েই শৈশব পার হয়ে যায়। এরা মুক্ত আকাশ দেখতে পারছে না, খোলার মাঠে ছোটাছুটি করতে পারছে না। এই শিশুরা যদি বড় হয়ে তার অতীত ফিরে দেখে তাহলে শুধু বইয়ের পৃষ্ঠাই হয়তো দেখতে পাবে। এখানে প্রশ্ন জাগে তারা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শৈশবের দুরন্তপনা সর্ম্পকে কী বলবে?
জীবনে পড়াশুনোর বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক গঠনে পূর্ণতা আনার জন্যে খেলাধুলার বিকল্প নেই। এবং দেশি গ্রাম্য খেলাকে বাঁচাতে এগুলোকে শহরেও প্রচলন করা যায় কি না তা বিবেচনা করা দরকার। শহরে দেশি খেলাগুলোর জন্যে নির্দিষ্ট জায়গা ও অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া যায়। তাহলে শহরের শিশু-কিশোরেরাও ভবিষ্যতে তাদের স্মৃতি রোমন্থনে দেশি স্বাদ ও আনন্দ লাভ করবে এবং বাঁচবে আমাদের সংস্কৃতির একটি দিক। সম্পাদনা- শাশ্বত জামান।
আপনার মতামত লিখুন :