আবদুল ওহাব, শাজাহানপুর (বগুড়া): উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন আসিফ রায়হান সৌমিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে আমেরিকার নিউইয়র্কের ডালাস ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তবে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সৌমিকের লাশ উদ্ধার হলো বগুড়ার শাজাহানপুরে একটি জলাশয় থেকে।
সৌমিক বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান হেলালের একমাত্র ছেলে। পরিবারের বংশে পুত্রসন্তান বলতে ছিল কেবল সে-ই; তাই ছিলেন পরিবারের আশা ও ভরসার প্রদীপ।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশের একটি জলাশয়ে একটি লাশ ভাসতে দেখে তারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করে ডালাস ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পান সৌমিক। ভিসা প্রক্রিয়া চলছিল, কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার। এই সময়টুকু মাকে সময় দিতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বের হতেন তিনি।
তবে কয়েকদিন আগে বগুড়ার নিজ ফ্ল্যাটে এসির পানি পড়া নিয়ে উপরের তলার মালিকের সঙ্গে সৌমিকের বাকবিতণ্ডা হয়, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। ঘটনার পরদিন মা বাসায় না থাকায় সন্ধ্যায় একা বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
আজ পুলিশ থেকে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে জলাশয়ে উদ্ধার হওয়া লাশটি সৌমিকের বলে শনাক্ত করেন। সন্তান হারানোর খবরে পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। একমাত্র উচ্চশিক্ষিত ও প্রবাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন বাবা-মা।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড কি না—তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।