শিরোনাম
◈ নি'ষিদ্ধ দলের লোককে বাসা ভাড়া না দিতে পুলিশের মাইকিং! (ভিডিও) ◈ নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরানোর নির্দেশ তালেবানের, যৌন হয়রানি নিয়েও পড়ানো নিষেধ ◈ ঢাকাসহ বি‌ভিন্ন জেলায় আওয়ামী লী‌গের কর্মকা‌ণ্ডে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?  ◈ টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার! ◈ খেলাফত মজ‌লি‌সের মামুনুল হক হঠাৎ আফগানিস্তান সফরে কেন? ◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৯ সকাল
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাষ্ট্র ও নাগরিক ভাবনা

কাকন রেজা : পুরানো একটি খবর দিয়েই লেখাটি শুরু করছি। বুলগেরিয়ায় একটি বাস উল্টে ১৭ জন নিহত হবার ঘটনায় দেশটির ৩ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট হলেও পরিবহনমন্ত্রীর সাথে সাথে পরিকল্পনামন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও পদ ছেড়েছিলেন। অর্থাৎ ঘটনার ন্যূনতম দায় কেউ এড়াতে চাননি, পদত্যাগ করেছেন তাদের নিজ ব্যর্থতাকে স্বীকার করে। মূলত রাষ্ট্রের সৃষ্টিই এ কারণে। মানুষের জীবনযাপনকে নির্বিঘœ করতেই রাষ্ট্র নামক ধারণার উদ্ভব। এই রাষ্ট্র বিষয়ে আলাপ করতেই সদ্য পুরানো এই উদাহরণটি টানা।

আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো বুলগেরিয়ার ঘটনাটি পুরানো। কিন্তু সে দেশে এমন ঘটনা হঠাতই ঘটে। আর এমনটা ঘটলে সাথে পদত্যাগের ঘটনাও ঘটে। আমাদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বিষয়টি প্রতিদিনের। নিত্যদিনের সংঘটিত ঘটনার সাথে পদত্যাগের বিষয়টি সঙ্গতই যায় না। অবশ্য এক্ষেত্রে পদত্যাগও আলোচনার মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হলো, নিরাপত্তা। সে হোক সড়কে, বাড়িতে কিংবা কর্মক্ষেত্রসহ সবক্ষেত্রেই। নিরাপত্তা বিষয়ক এমন ধারণা থেকেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি। আর রাষ্ট্র থেকেই আসে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিষয়টি। যা একটি পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, মানুষের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, স্বাচ্ছন্দ্য এসব নিরাপদ ও অক্ষুণœ রাখতেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি। আর রাষ্ট্রক্ষমতার কারণও সেটা। সুতরাং রাষ্ট্র ক্ষমতায় অর্থাৎ পরিচালনায় যারা থাকেন তাদের দায়িত্ব নাগরিকের জীবনযাপন নিশ্চিত ও নিরাপদ করা।

রাষ্ট্রে যে বসবাস করে তাকে নাগরিক স্বীকৃতি দিয়ে তার অধিকার রক্ষাই ছিল রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রথম চিন্তা। অর্থাৎ রাষ্ট্র সৃষ্টিই হয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষায়। যারা রাষ্ট্র সম্পর্কে জানেন, যারা রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানের ছাত্র, তাদের অস্বীকার করার উপায়ে নেই যে, রাষ্ট্রে সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে অধিকতর প্রাধান্য পায় অধিকার রক্ষার বিষয়টি। লিবেরাল রাষ্ট্রদর্শন অনুযায়ী, সামাজিক উন্নতির চেয়ে নাগরিকের অধিকার রক্ষায়ই রাষ্ট্রের প্রাথমিক ও প্রধান দায়িত্ব। এর কারণও রয়েছে, সামাজিক উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে রয়েছে নানা মত ও পথ। এক্ষেত্রে বিভেদও অনেক। কিন্তু মানুষের অধিকার রক্ষা নিজ স্বার্থেই। এমন রাষ্ট্রদর্শন কয়েকটি ক্ষেত্রে অধিকারের প্রাপ্যতা নির্ধারণ করেছে। এরমধ্যে রয়েছে মৌলিক অধিকারসমূহ, চলাফেরার স্বাধীনতা, পছন্দসই জীবিকার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পদে নির্বাচিত হবার অধিকার, উপার্জনের অধিকার এবং সামাজিক আত্মমর্যাদার অধিকার। এসব অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্র ক্ষমতার বা ক্ষমতার পরিচালনা পরিষদের।

এর বিপরীতে কিছু হলে রাষ্ট্র ধারণার উৎপত্তিটা ভুল হয়ে যায়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক হয়ে উঠে সাংঘর্ষিক। আর এই সংঘর্ষ হলেই প্রশ্ন উঠে পদত্যাগের। উন্নত বিশ্ব বা প্রথম বিশ্বের যেসব দেশ সুশাসনের সূচকে প্রথম দিকে আছে, সেসব দেশের ঘটনা প্রবাহ অনুসরণ করলেই বোঝা যায়, তারা কেনো সূচকের শীর্ষে। এসব দেশে একজন মানুষেরও অধিকারসমূহ ক্ষুণœ হবে এমন চিন্তাও করা যায় না। একজন মানুষের মৃত্যু তো ‘দূর কা বাত’, সামান্য শারীরিক ক্ষতিও হৈচৈ ফেলে দেয়। অর্থাৎ এসব রাষ্ট্রে সবার আগে নাগরিক অধিকার রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

এই দেশগুলি কিভাবে এটা সম্ভব করলো, এমন প্রশ্নের জবাবে ছোট্ট করে বলা যায়, এসব দেশের গণমানুষের চিন্তার সাথে বুদ্ধিজীবী শ্রেণি, রাজনীতিক ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিষ্ঠিতদের চিন্তার তেমন কোনো ফারাক নেই। যার ফলেই তাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে কোনো সংঘাতের বিষয় নেই। কারণ রাষ্ট্র নাগরিকের তথা গণমানুষের চিন্তাই ধারণ করে। বিপরীতে আমাদের কথা বলতে গেলে আমাদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি, রাজনীতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের ধারণাই নাগরিকদের গেলানোর চেষ্টা করেন, ফলে নাগরিকে সাথে তাদের সম্পর্ক ক্রমেই বিষাদময় হয়ে ওঠে। সাথে বিষাদময় হয়ে উঠে মানুষের সার্বিক জীবনযাপনও। সুতরাং একটি রাষ্ট্রের সফল হবার বিষয়ে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের সাথে গণমানুষদের চিন্তার সমতা আনার কোনো বিকল্প নেই ।

লেখক : কলামিস্ট ও সিনিয়র সাংবাদিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়