এসএম আরিফুল কাদের: নেক আমলের দরুণ আমরা যে সব প্রতিদান বা উপকারিতা পরকালে পাব। দুনিয়াতেও এর প্রতিদান বা উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে ইবাদতের ফলে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা রিজিক বাড়িয়ে দেন। সে ব্যাপারে পবিত্র কালামে পাকে বলা হয়েছে, ‘তারা যদি তাওরাত ও ইঞ্জিলের আদেশ মত তাঁর তাবেদারী করত, তবে তাদের মাথার উপর দিক থেকে ও পায়ের নিচের দিক থেকে রিজিক লাভ করতে পারত। অর্থাৎ উপরদিক থেকে বৃষ্টি ও নিচের দিক থেকে ফসল পেত’। [সূরা মায়িদা : ৬৬] এমনকি যতসব নিয়ামত আমরা ভোগ করছি সব নিয়ামত নেককার লোকদের ইবাদতের উপকারিতা স্বরুপ পেয়ে থাকি। কেননা, দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবকিছু মানুষের খেদমতের জন্য আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁরই তাবেদারী ও উপাসনার জন্য। ঠিক সেই ইবাদতের মাধ্যমে বিভিন্ন বরকত লাভ করে থাকি। মহান প্রভুর ভাষায়, ‘যদি তারা ঈমান আনয়ন করত ও পরহেজগারি ইখতিয়ার করত তবে আমি তাদের উপর আসমান ও জমিন থেকে বরকতের দরজা খুলে দিতাম। কিন্তু তারা আমাকে ও রাসুল সা. কে অবিশ্বাস করেছে, তাই তাদের বদ আমলের দরুণ তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম’। [সূরা আ‘রাফ : ৯৬]
জীবন চালাতে দুঃখ, দূর্দশা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দুঃখে জর্জরিত হয়ে মহান রাব্বুল আলামীনকে ভুলে গেলে চলবে না। প্রয়োজন তাঁরই কাছে চাওয়া। কেননা, তিনিই তো সকল চাওয়া ও দুঃখ দূরিভুত করার মালিক। পবিত্র কালামেপাকে ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ পাক তার মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট’। [সূরা তালাক্ব : ২-৩] মানবজাতি কোন না কোন চাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকে। কেউ আশানুযায়ী মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে আবার কেউ পৌঁছতে পারে না। তাই সমস্ত চাওয়া পাওয়ায় মহান আল্লাহ তা‘য়ালার ওপর ভরসা করা উচিত এবং তাঁকে ভয় করা অবশ্য কর্তব্য। কেননা, আল্লাহ ছাড়া কেউ কারো উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না। সেজন্য ইবাদতের মাধ্যমে মানবজাতি পৌঁছে থাকে তার উদ্দেশ্যে। কোরআনের ভাষায়, ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ পাক তাদের যাবতীয় কাজ সহজ করে দেন’। [সূরা তালাক্ব : ৪] হতাশা বা নিরাশা এমন এক বদগুণ যা মানুষের সকল প্রকার যোগ্যতা সমূলে বিনষ্ট করে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) জানিয়েছে, বিশ্বে বর্তমানে ৩০ কোটি মানুষ হতাশায় ভুগছে। বিশ্বজুড়ে মানুষের অসুস্থতা ও অমতাই হতাশার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। [দৈনিক যুগান্তর ২ এপ্রিল ২০১৭] অথচ এই হতাশা থেকে মুক্ত হতে আল্লাহর ইবাদতের তুলনা হয় না। পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি নেক আমল করে, হউক সে পুরুষ কিংবা নারী আর সে মু‘মিনও বটে আমি তাকে সুখময় জীবন দান করে থাকি’। [সূরা নাহল : ৯৭] প্রকৃতপক্ষে নেককার লোকদের মত আনন্দদায়ক জীবন রাজা বাদশারও হয় না।
মানুষ ও জিনজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল মহান প্রভুর ইবাদতের জন্য।
সর্বাবস্থায় তার হুকুম মেনে চলার জন্য। তাই তাঁর হুকুম মান্য করলে রহমতের
বৃষ্টি বর্ষিত হয়, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়, পরিবারে বরকত হয়, বাগানে ফল ফলে, নদীর পানিতে বরকত হয়। মহান আল্লাহর ভাষায়, ‘তোমরা আপন প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি বড় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দ্বারা সাহায্য করবেন। এমনকি তোমাদের জন্য বাগান ও নহরের ব্যবস্থা করবেন’। [সূরা নুহ : ১০-১২] সর্বোপরি আল্লাহর ইবাদতের দুনিয়াবী উপকারিতা স্বরুপ মু‘মিন ব্যক্তিগণ মৃত্যুকালে রহমতের ফেরেশতাগণ এসে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে যান।
আপনার মতামত লিখুন :