শিরোনাম
◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয় ◈ কত টাকার বিনিময়ে মানববন্ধনে এসেছেন তারা, এদের পরিচয় কী? আরো যা জানাগেল (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০১৮, ০৮:৫০ সকাল
আপডেট : ০১ মে, ২০১৮, ০৮:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর : দুই সিটি ও ওয়াসার কোটি কোটি টাকা জলে

ডেস্ক রিপোট : বর্ষা মৌসুম শুরুই হয়নি। এখনি সামান্য বৃষ্টিতেই জলজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা। কোথাও কোথাও তা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। গতকাল সোমবার ও আগেরদিন রবিবার দিনব্যাপীই থেমে থেমে বৃষ্টি হয় ঢাকায়। এতে নগরজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে জলজট। এর অনুষঙ্গ ছিল যানজটও। দুদিনের বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ঢাকার অলি-গলি থেকে শুরু করে মূল সড়কের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি জমে যায়। গত বছর বর্ষায় এর মাত্রা ভয়াবহ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা এ বছর জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হবে বলে আশ^াস দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার বেশ আগেই সামান্য বৃষ্টির ফলে যে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অদক্ষতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ তাদের।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। বলা যায়, বছরে প্রায় ১২ মাসই বিভিন্ন ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজ চলে। এমনকি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বর্ষাকালেও ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করতে দেখা যায়। এতে একদিকে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে রাস্তা খুঁড়ে রাখায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা মিলে ড্রেন, নর্দমা নির্মাণ ও খাল পরিষ্কার করার কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, সেই পরিমাণ সুফল মেলেনি বলে মনে করেন নগরবিদরা। ১০ মিনিটে ১২০ মিটার ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেড এন্ড সাকার মেশিন কিনলেও তাতে তেমন একটা লাভ হয়নি।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকায় পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক কোনো পদ্ধতি নেই। ফলে পানি যেতে পারে না। বলা যায়, ঢাকার রাস্তাগুলোই এখন ড্রেন হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে সারফেস ও আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন ঠিকমতো কাজ করে না। প্রতিদিন যে বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগ রাস্তায় পড়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে পানির ধাক্কায় সেগুলো ড্রেনে গিয়ে পড়ে। ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমাঝে দেখা যায়, সেগুলো পরিষ্কার করতে। আর বাকি দিনগুলোতে পরিষ্কার করা হয় না। কাজেই সংশ্লিষ্টদের উচিত প্রতিদিন বিশেষ করে বর্ষায় প্রতিদিন ড্রেন পরিষ্কার করা। ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার না করতে পারলে, বড় বড় পাইপ বসিয়ে ও ড্রেনের কাজ করে কোনো লাভ হবে না।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করতে কাজ করছে ডিএসসিসি। এরই মধ্যে তৈরি করা খসড়া তালিকায় উঠে এসেছে ডিএসসিসির ৪৮ জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকার নাম। জানা গেছে, ঢাকার জলাবদ্ধতাপ্রবণ এসব এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য গত দুবছরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এ বছর সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণে ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে ডিএসসিসি। এরই মধ্যে প্রায় সব টাকা খরচ করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া ডিএনসিসি তাদের বার্ষিক বাজেটে এ খাতে প্রায় ২৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এরই মধ্যে প্রায় সব টাকা খরচ করেছে এই সংস্থা। গত অর্থবছরে ডিএনসিসি নর্দমা ও ড্রেন নির্মাণে আরো ১৭৫ কোটি টাকা খরচ করে বলে জানা যায়। এ ছাড়া ডিএসসিসি একটি মেগা প্রকল্পের এক হাজার ২০২ কোটি টাকা থেকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে কয়েক কোটি টাকা ড্রেন ও নর্দমা নির্মাণে ব্যয় করেছে। ঢাকা ওয়াসাও তাদের নিজস্ব ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করেছে বলে জানা যায়। এরপরও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না ভুক্তভোগীরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহসভাপতি এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে অতি সম্প্রতি বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। শুধু রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গর্ত করে ড্রেন বসানোর কাজ করতে দেখা গেছে। আন্ডার গ্রাউন্ড ড্রেনেজের কোনো কাজ হয়নি। ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত বছরের পর থেকে জলাবদ্ধতার ব্যাপারে তেমন উন্নয়ন কাজ হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ভোরের কাগজকে বলেছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছি। যার কাজ চলমান রয়েছে। গত বছর শান্তিনগর, আরামবাগসহ জলাবদ্ধপ্রবণ উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলোতে আমরা কাজ করেছি। শান্তিনগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে আমরা সফলতা পেয়েছি। যেসব কাজ চলছে সেগুলোতেও সফলতা পাব।

মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা একমত পোষণ করে নগরবিদ ড. আকতার আরো বলেন, এটা ঠিক, শান্তিনগরে প্রতিবছর বড় ধরনের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শান্তিনগর ও এর আশপাশ এলাকার জলজট নিরসনে কিছু কাজ করেছে। এ বছর মানুষ কিছুটা সুফল পেতে পারে। কিন্তু অন্যান্য এলাকার জলাবদ্ধতা কমবে না। সিটি করপোরেশন সব এলাকায় উল্লেখযোগ্য কাজ করেনি। তা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজ তো ঢাকা ওয়াসার। এই সংস্থাটিও দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখাতে পারেনি।

এদিকে গত কয়েক বছর না ডুবলেও এ বছর বর্ষায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। রাজধানীর খিলগাঁও, বাংলামোটর, মগবাজার, মানিক মিয়া এভিনিউ, সিদ্বেশ^রী, ফার্মগেট, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়কেও রাস্তায় দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এসব এলাকা এর আগে কখনো প্লাবিত হতে দেখা যায়নি।

মানিক মিয়া এভিনিউ সম্পর্কে নেয়ামত উল্লাহ নামের বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র জানান, বৃষ্টি বা ভয়াবহ বর্ষায় ঢাকার অন্যান্য এলাকা প্লাবিত হলেও মানিক মিয়া এভিনিউ ও ফার্মগেট এলাকায় কখনো রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়নি। এবারই প্রথম দেখা গেল রাস্তায় পানি জমে থাকতে। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, মিরপুর, কাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এতে অনেক ড্রেনেজের সঙ্গে সড়কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব হয়তো এসব এলাকায় পড়ছে। তিনি আরো বলছেন, তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বর্ষার আগেই যখন এই পরিস্থিতি তখন বর্ষা হলে পরিণতি কি হবে?

কাজীপাড়ার বাসিন্দা মহসীনুল করিম বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলছে এই এলাকায়। মাঝখানে কাজ বন্ধ ছিল কিছুদিন। আবার শুরু হয়েছে। কবে কাজ শেষ হবে জানি না। অফিসের কাজে মতিঝিল যেতে আজ আমার সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টার বেশি। অথচ ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের রাস্তা। বেলা ১২টায় বাসে ওঠার পরই শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড় আর বৃষ্টি। গাড়ি চলছিলই না। একটু এগোতেই সড়কে পানি। মেট্রোরেলের কাজ চলায় স্বাভাবিক দিনেই এ এলাকায় চলা যায় না। গতকাল ও আজ (সোমবার) বৃষ্টির কারণে রাস্তা চলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সূত্র : ভোরের কাগজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়