কাহিনী সংক্ষেপ : ৭ বছরের অর্থকে নিয়ে আসে মা-বাবা দুজনেই। সে ক্লাস টুতে পড়ে। দেড়-দুই বছর পূর্বে গ্রামে বেড়াতে গেলে তার চাচাতো ভাই (বয়স-১৫) তার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করে।
এতোদিন এ নিয়ে সে কিছু বলেনি। হঠাৎ সপ্তাহ খানেক আগে ঐ ছেলে বিয়ে খাওয়া উপলক্ষে তাদের বাসায় আসে।
রাতে অর্থ কান্নাকাটি করে। কেন কাঁদছে জানতে চাইলে বলে, সে আমার সঙ্গে এসব নোংরা কাজ করেছে।
বাবা বলে, ঠিক আছে তাকে পরদিন বাসা থেকে বের করে দেবো। কিন্তু অর্থ মানে না, এরাতেই ওকে বের করে দাও। কোনভাবে রাত পেরোলে ঐ ছেলেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু তার কান্না থামে না। বলে আমার বার বার ঐ কথা মনে পড়ে।
সে এখন অন্য ছেলেদের নামেও বদনাম করে যে, তারাও তার সঙ্গে নোংরা কাজ করেছে। গণহারে অভিযোগ করতে থাকে।
কোন বাচ্চা মেয়েকেও সে পাশে বসতে দেয় না। চিৎকার করে, বলে তাকে চলে যেতে বলো। রাতে বেশি কাঁদে, খায় না, স্কুলেও যায় না।
এদিকে মা-বাবার মধ্যে বনিবনা হয় না, তাই মা বলতো আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও, ওকে ও ( ছেলেকে) নিয়ে যাও, আর সহ্য হয় না।
তাই এখন অর্থ কাঁদে- বোধ হয় আম্মু মরে যাবে, আমি আম্মু কোথায় পাবো? সবাই মরে কেন? আমি মরবো কবে? মরে গেলে কি আবার জন্ম হবে?
সে বলতে থাকে, পৃথিবীর কেউ ভালো না।
বাবা ঐ বিয়ের ভিডিও দেখালে সেখানে ঐ ছেলের ছবি দেখে আবার চিৎকার, আরো কান্না। সে বলে, আমার বার বার ঐ নোংরা কথাগুলো মনে পড়ে ( দিনে ৮-৯ বার)।
মাকে জড়িয়ে বলে আম্মু, তুমি মরে যেও না, চলে যেওনা, আমি কার কাছে থাকবো?
কি বার্তা দেয় এই কেস হিস্ট্রি?
১। শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেরাও এ ধরনের নোংরা কাজের শিকার হন।
২। ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু সবাইকে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের আরো সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৩। তথাকথিত আত্মীয়, ঘনিষ্ঠজন মনে করে বেখেয়াল হলে চলবে না।
( দুলাভাই-শালি একটু মজা করতে পারে- এ জাতীয় কুসংস্কৃতি বদলাতে হবে)
৪। শিশুরা ভয়ে বা লজ্জায় এগুলো প্রকাশ করে না ( যদি না অর্থের মতন মানসিক ভারসাম্য হারায়)।
তাই অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, কিছু শারিরীক ও মানসিক লক্ষণের দিকে, যাতে প্রাথমিক ভাবেই বুঝা যাবে সে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কি-না?
৫। এরকম ট্রমাটাইজড শিশুদের অবশ্যই মনোচিকিৎসক দ্বারা কাউন্সিলিং করিয়ে নেবেন। তা নাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের মানসিক সমস্যার আশঙ্কা থাকে।
৬। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক খারাপ বলে শিশুর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, শিশুকে আবেগীয়ভাবে দূর্বল করবেন না।
পরিচিতি : মনোবিদ/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ