নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সড়কগুলোয় প্রাণহানি নতুবা অঙ্গহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিতুমীরের মেধাবী শিক্ষার্থী পিতৃমাতৃহীন রাজীব হোসেনের মৃত্যু এখনো দেশবাসীর মনে দগদগে ঘা হয়ে আছে।
এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় হাত হারিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোর হৃদয়। তার ভগ্নহৃদয়ের আর্তি যখন মানবিক আঘাত হানছে, তখন পরাঘাত হয়ে এসেছে বাসের চাকায় পা হারানো রোজীর সংবাদ।
সর্বশেষ, অঙ্গ হারানোর এ তালিকায় গতকাল যোগ হয়েছে আরও দুই শিশুর নাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গতকাল বগুড়ার শেরপুরে বাসের ধাক্কায় হাত হারিয়েছে ৮ বছরের শিশু সুমি খাতুন।
প্রত্যক্ষদর্শী রহিম বলেন, ‘দেশের বাস-ট্রাক হঠাৎ জ্যান্ত রাক্ষসে পরিনত হয়েছে। বাসের বেপরোয়া গতির কারণেে এই দুর্ঘটনা’।
একই দিন রংপুরের মাহিগঞ্জে ট্রাকের চাপায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মেঘলামণি নামে ৪ বছরের আরেকটি শিশুর পা। এর মধ্যে মেঘলামণির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। এ যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পেলেও কুসুমকোমল এ দুটি শিশুকে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে সারাজীবন পাড়ি দিতে হবে। এর চেয়ে পীড়াদায়ক আর কী হতে পারে!
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে শেরপুর উপজেলার ফুলতলা এলাকায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল সুমি। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি যাত্রীবাহী বাস ওকে ধাক্কা দেয়।
ধাক্কায় সুমির বাম হাত ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শেরপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজ ম-ল জানান, সুমি সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শিশুটির অবস্থা সম্পর্কে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। মাথার আঘাত গুরুতর। একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আরেক হাতের আঙুল ভেঙে গেছে। এখানে ভর্তি করার সময় শিশুটির জ্ঞান ছিল না। ২৪ ঘণ্টা পার না হলে কিছুই বলা যাবে না। এ সময় অতিবাহিত হলে শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানান উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী।
সুুমির মা মরিয়ম বেগম শোকে পাথর হয়ে গেছেন। ভাবতেও পারেননি এমন আঘাত আসবে তার একরত্তি মেয়েটির জীবনে। তিনি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে রংপুরের মাহিগঞ্জে ইটবোঝাই একটি ট্রাকের চাপায় মেঘলামণির পা থেঁতলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রংপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এর পর শিশুটিকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ, তার ডান পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। মেঘলামণির বাবা বাবু মিয়া পেশায় চাতালশ্রমিক। ওই চাতাল থেকেই বাবার সঙ্গে দেখা করে ফিরছিল শিশুটি।
মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলম জানান, ঘটনার পর পরই ট্রাকটি আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এর চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছে।
নতুন লাল পায়জামা পড়া হলোনা মেঘলামণির : গতকাল সন্ধ্যায় রমেক হাসপাতালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে মেঘলামণির মা কাজলি বেগমের বিলাপে। মেঘলামণির বড় শখ ছিল লাল পায়জামার। গতকালই কাজলি বেগম ওর জন্য একটি লাল পায়জামা কিনে দিয়েছিলেন। সে গল্পই ভেসে আসছিল কাজলি বেগমের অশ্রুসিক্ত বিলাপে।
এ সময় আশপাশেও এক হৃদয়স্পর্শী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মেঘলামণির বাবা শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকেদের দেখে হাসপাতালের বারান্দায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ কী হবে?
আসলে এখন প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই।