শিরোনাম
◈ যেভাবে উদ্ধার হলেন মুফতি মহিবুল্লাহ, মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য!(ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মেলেনি অনেক হিসাব, হতাশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ ◈ ভারতে জু‌নিয়র বিশ্বকাপ হ‌কি খেল‌বে না পা‌কিস্তান, নাম তুলে নিলো ◈ সিএনজি অটোরিকশা রক্ষায় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে লড়ে গেলেন চালক, আপ্রাণ চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল ◈ বাবার জম্মবা‌ষিকী পালন ক‌রে বাসায় ফেরার প‌থে গরুর সঙ্গে বাইকের ধাক্কায় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের মৃত্যু ◈ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নেবেন? ◈ ভারতের হোটেলের ডাই‌নিং‌য়ে ইঁদুরের উৎপাতে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটাররা আত‌ঙ্কিত ◈ মনোনয়ন পেতে চলছে দৌঁড়ঝাপ, বিএনপির কীভাবে হচ্ছে প্রার্থী বাছাই? ◈ বাজেট সংশোধন শুরু ডিসেম্বরে, যুক্ত হবে নতুন পে-স্কেল কার্যকরের বিধান ◈ দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন

প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৩৩ দুপুর
আপডেট : ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৩৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চোর নয়, ওরা খুনি

ডেস্ক রিপোর্ট : সাইদার্ন ডিজাইনার্স লিমিটেডে গাড়িচালকের চাকরি করতেন দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। ২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে হঠাৎ গাড়িসহ তার কোনো হদিস মিলছিল না।

সাইদার্ন কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল গাড়ি নিয়ে চালক লাপাত্তা হয়েছেন। এ ঘটনার তিন দিন পর দেলোয়ারকে আসামি করে রমনা থানায় চুরির মামলা করা হয়। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ছয় বছর পর পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ একটি কিলার গ্রুপ শনাক্ত করেছে।

যারা মূলত কাকলী, উত্তরা ও মিরপুরে যাত্রী সেজে মাইক্রোবাসে উঠে চালকের সবকিছু কেড়ে নেয়। এরপর নৃশংসভাবে চালককে হত্যার পর গাড়ি নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। ২০১০ সাল থেকে নেসার উদ্দিন ও ফেরদৌস আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল একের পর এক যাত্রী সেজে গাড়ি ছিনতাই করে আসছিল।

এরই মধ্যে নেসার ও ফেরদৌসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ফেরদৌস অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতেই জানা যায়, দেলোয়ারকে হত্যার পর তার গাড়ি ছিনতাই করেছিল এই চক্র।

পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মোদদাছছের হোসেন সমকালকে বলেন, প্রায় ক্লুহীন একটি মামলার তদন্তের পর এর রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তারা পেশাদার অপরাধী। চক্রটিকে ধরার পর কাকলী, উত্তরা ও মিরপুর এলাকায় যাত্রীসেজে গাড়িতে তোলার পর গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা কমবে বলে আশা করছি।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিল ফেরদৌস। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একটি কাজের কথা বলে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে তাকে ঢাকায় ডেকে আনে নেসার উদ্দিন। একইভাবে জুয়েলসহ আরও কয়েকজনকে ডেকে আনা হয়। এরপর ওই রাতে তারা কাকলী পয়েন্টে অবস্থান নেয়।

এ সময় কাকলী হয়ে উত্তরার দিকে মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-৭৪১৫) নিয়ে যাচ্ছিলেন সাইদার্নের চালক দেলোয়ার। খালি গাড়ি দেখে যাত্রীসেজে সেখানে ওঠার জন্য হাতের ইশারা দেয় তারা। চালক মাইক্রোবাস থামালে একে একে তাতে উঠে পড়ে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। ১৫-২০ মিনিট গাড়ি চলার পর একজন পানি কেনার কথা বলে গাড়ি থামাতে বলে। চালক গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছনের সিট থেকে দু'জন গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেলোয়ারের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এরপর নিথর দেহ তারা গাড়ির ভেতরে লুকিয়ে রাখে। চালককে হত্যার পর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে সাভারের দিকে চলে যায়। ওই রাতে সাভারের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে দেলোয়ারের লাশ ফেলে তারা ফরিদপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেখানে আগে থেকেই এক ব্যক্তির সঙ্গে চোরাই ওই গাড়ি বিক্রির চুক্তি হয় চক্রের সদস্যদের। তবে শেষ পর্যন্ত বনিবনা না হওয়ায় গাড়ি বিক্রি না করেই তারা ঢাকায় ফেরে।

একপর্যায়ে উপায়ান্তর না দেখে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় মাইক্রোবাস ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা।

মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন, প্রায়ই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীসেজে গাড়িতে তুলে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করার তথ্য পাওয়া যায়। কখনও কেউ তা দিতে রাজি না হলে খুন করে দুর্বৃত্তরা তা নিয়ে পালিয়ে যায়। দেলোয়ারের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে রাজধানীকেন্দ্রিক এ ধরনের অপরাধে জড়িত বড় একটি গ্রুপকে শনাক্ত করা গেছে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালির বাসিন্দা নেসার উদ্দিন। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হলো একই এলাকার ফেরদৌস। ২০১০ সালে নেসার ঢাকায় আসার পর থেকে এলাকার কয়েক যুবককে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করে যাত্রীসেজে ছিনতাই করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের চক্রের আরেক সদস্যের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, দেলোয়ার গাড়িসহ নিখোঁজের পর প্রথমে রমনা থানায় চুরির মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া ঘটনার রাতে সাভার এলাকায় একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর চকবাজার এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় মাইক্রোবাসটি। পরে নিহতের স্বজনরা নিশ্চিত হন, লাশটি দেলোয়ারের। তখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কেন, কী কারণে, কারা তাকে হত্যা করেছিল। দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রথমে ক্লু পাওয়া যায়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালির বাসিন্দা নেসার কেরানীগঞ্জ থানার একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে।

নেসার রাজধানীকেন্দ্রিক যাত্রীসেজে গাড়ি ছিনতাই চক্রের মূল হোতা। এর পর নেসারকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ধীরে ধীরে দেলোয়ারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নেসারের নেতৃত্বে যারা যাত্রীবেশে গাড়ি ছিনতাই করে আসছিল, সপ্তাহে তাদের এ ধরনের একটি টার্গেট থাকে। এই চক্রের সদস্যরা নিজেদের কাছে লুকিয়ে গামছা ও বিশেষ মলম রাখে। প্রয়োজনে এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে গাড়িচালকের প্রাণটা কেড়ে নিতে তাদের বুক এতটুকু কাঁপে না। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়