শিরোনাম
◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে? ◈ এবার থাইল্যান্ড থেকে ভারতগামী বিমানে ১৬ টি সাপ, এরপর যা ঘটল ◈ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্তা

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:১৩ দুপুর
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:১৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৩২ ধারা নিয়ে উৎকণ্ঠা মিডিয়াপাড়ায়

ডেস্ক রিপোর্ট : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে মিডিয়াপাড়ায়। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এমপিদের মান-ইজ্জত রক্ষা করতেই ডিজিটাল আইন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ৩২ ধারায় বাকস্বাধীনতা হরণ করা হবে না। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেছেন, এ আইনে সাংবাদিকরাই বেশি হয়রানির শিকার হবেন। মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ আইনের প্রয়োগ হলে ভবিষ্যতে গণমাধ্যম গভীর সংকটে পড়বে।

সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন করে ৫৭ ধারার বিকল্প হিসেবে চারটি ধারা আনা হয়েছে। সেগুলো কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিছুটা অন্তরায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যেভাবে সাংবাদিকরা কাজ করেন সে পথটিতেই কিন্তু অন্তরায় সৃষ্টি করা হয়েছে। একে গুপ্তচরবৃত্তি বলে সেই অপরাধে অপরাধী করা হচ্ছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটুকু করতেই হয়। এটা সারা পৃথিবীতেই আছে। এটা সংসদে যাওয়ার আগেই এটা নিয়ে আরও বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।’

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির পরিচালক বার্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তার যে আইনটি প্রস্তাব করেছে, তাতে বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে বন্ধ করে দেওয়ার নামান্তর। এর মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে কবর দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। এ আইনে বলা হয়েছে সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ-দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না। অবৈধ কাজের ভিডিও-অডিও ধারণ করতে পারবে না। চিত্র ধারণ করতে পারবে না। আমলাতন্ত্রের ভিতরে যারা দুর্নীতিবাজ তারাই এ আইনটি করতে উৎসাহী হচ্ছেন। এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের হাতে একটি অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার নামান্তর এ আইনে। এখনো আইন হয়ে যায়নি। আমি আশা করি, স্পিকার এটিকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবেন। কমিটি ইচ্ছা করলে আমাদের ডাকতে পারে। আমরা আমাদের মতামত দেব। তারপর এটাকে আইন করতে পারে সরকার।’

এমপিদের মান-ইজ্জত রক্ষা করতেই আইন : তোফায়েল : এমপিদের মান-ইজ্জত রক্ষা করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে— এমন মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, সত্য (রিপোর্ট) প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের ভয়ের কিছু নেই। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আপনারা গণমাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন, পত্রপত্রিকায় একেকজন এমপির নামে চরিত্র উদ্ঘাটন করে সে কোথায় গিয়েছে, কী করছে, যেভাবে ছবি-টবি দিয়ে সাজানো হচ্ছে, কম তো হচ্ছে না। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারাও তো মর্যাদাশীল। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনেকে তথ্য সরবরাহ করার চেষ্টা করেন, যেগুলো সঠিক নয়। তবে এ ধরনের আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের রিপোর্ট করা থেকে বিরত রাখা যাবে না বলেও মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আপনি যদি একটা সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করেন, এটাতে বোঝা যাবে এটা সত্য না মিথ্যা, তাহলে তার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমি মনে করি না। আগের আইসিটি অ্যাক্টটি বিএনপির সময়ে করা ছিল। যেখানে অনেক বিষয় অস্পষ্ট ছিল। নতুন আইনে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করা হয়েছে।

বাকস্বাধীনতা হরণ হবে না : আইনমন্ত্রী : প্রস্তাবিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৩২ ধারা নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কারও বাকস্বাধীনতা হরণ হবে না। এটা অহেতুক ভীতি। কারও অন্যায় রেকর্ড করলে সেটা অপরাধ হবে না। বরং যার অপরাধ রেকর্ড করা হবে তারই শাস্তি হবে।’ গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

আনিসুল হক বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তি একটি অপরাধ, গুপ্তচরবৃত্তি তো আগের আইনে অপরাধ ছিল। এ আইনের মধ্যে যেটা করেছি সেটা হচ্ছে, ওই যে কম্পিউটার সিস্টেম, ইনফরমেশন টেকনোলজির যে সিস্টেম ওই সিস্টেমের মাধ্যমে যদি কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সঙ্গে সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে তো আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় এটা অহেতুক ভীতি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আরেকবার অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। জনগণ মানে সাংবাদিকতা। তিনি অহেতুক ও অযথা কেউ হয়রানি হোক সেটা চান না। তাই কোনো আইনের মধ্যে এমন ব্যবস্থা থাক সেটা তিনি চান না। সেই কারণে স্পষ্ট করে এ ধারাগুলো দেওয়া হয়েছে; যাতে অস্পষ্টতা দূর হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন এখানে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) যেভাবে অপরাধের ধারাগুলো সংজ্ঞায়িত হয়েছে এবং অপরাধটা কী সেটা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে তাতে আপনাদের (সাংবাদিক) বাকস্বাধীনতা একটু হলেও ক্ষুণ্ন করা হয়নি।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘৩২ ধারা নেই তার পরও সরকারের গোপনীয় ও অতি-গোপনীয় কিছু আপনারা প্রকাশ করতে পারেন। এটা অফেন্স (অপরাধ)। আপনি যদি ইললিগ্যাল (বেআইনি) জিনিস ছাপিয়ে দেন, সেটা কোন বইতে আছে সেটা অপরাধ নয়? কম্পিউটারের মধ্যে যদি থাকে সেটা যদি ইললিগ্যাল হয় আর আপনি যদি প্রকাশ করেন সেটা অপরাধ হতে পারে না। বরং যার ইললিগ্যাল বিষয় প্রকাশ করা হবে তারই শাস্তি হবে।’

অনুসন্ধানী রিপোর্ট বন্ধ করতেই ভয়ঙ্কর ৩২ ধারা : ড. মোশাররফ : তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার পরিবর্তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা আরও ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কিছু অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি করতে গোপনীয়তার পথ অবলম্বন করতে হয়। এই ধারা করে তাদের এই পথ বন্ধ করে বাকশালের রাজত্ব কায়েম করতে চায় এই সরকার। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোশাররফ আরও বলেন, মানুষের চোখ ফাঁকি দিতেই ৫৭ ধারার থেকে আরও ভয়ানক এ ধারা তৈরি করা হয়েছে। এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে অলিখিত বাকশালের পথেই হাঁটছে এই সরকার। সোমবার যে নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাতে মুক্তমনা এবং সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।

সাংবাদিকরাই বেশি হয়রানির শিকার হবেন : রিজভী : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন “একটি কালো আইন” হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এতে সাংবাদিকরাই বেশি হয়রানির শিকার হবেন। এটি পাস হলে মানুষের বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলেও কিছুই থাকবে না। সরকারের দুর্নীতি যাতে প্রকাশ না পায় বা কেউ প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য এই আইন করা হয়েছে। ৫৭ ধারার মতো এ আইনেও সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবেন। গণতন্ত্রকামীরাই ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত হবেন এই আইনে। ফিরে যাওয়া হবে মধ্যযুগের অন্ধকারে।’ তিনি এই আইন সংসদে পাস করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়