ফারমিনা তাসলিম: যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বাবা-মেয়ে নির্মাণ করেছেন একটি স্কুল। যেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বিনা বেতনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন মেয়ে। বাবা-মেয়ে মিলে গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে যাচ্ছেন।
যশোর শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দুরে ডাকাতিয়া গ্রাম। মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় গ্রামের ছেলে-মেয়েদের যেতো হতো বেশকিছুটা পথ হেটে পাশের গ্রামে। যা গ্রামের মেয়েদের জন্য ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাই গ্রামবাসীর সহায়তায় বাবার দেয়া তিন বিঘার জমির উপর নির্মাণ করেছেন ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি গড়ে তুলেন ইজাহার আলী ও তার মেয়ে হেলেনা আক্তার। যেখানে পড়তে আসেন আশপাশের ছয় গ্রামের সাড়ে চারশো শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, স্কুলটা হওয়াতে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। কারণ গ্রামের সমস্ত মেয়েদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখানে মাত্র একটা স্কুল আছে, যেখানে আমরা মেয়েরা এসে পড়তে পারি। স্কুল যদি বাড়ি থেকে বেশি দূরে হত, তাহলে আমাদের পড়ালেখা করাটা কষ্ট হয়ে যেত।
২০০০ সাল থেকে বিনা বেতনে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন হেলেনা। তিনি ছাড়াও এই স্কুলে ১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। সবার অবস্থাও প্রায় একই।
স্কুলের শিক্ষকরা জানান, আমরা আজ প্রায় ১৮ বছর এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। কোন বেতন নাই। নিজের উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানে আছি। কোন সরকারি অনুদান পাই না। এমপিওভুক্তও হয় না। তারপরেও আমরা আশায় আছি, ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হবে।
যশোর ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলেনা আক্তার বলেন, কেউ যদি এসে অগ্রসর হয়ে একটা কক্ষ করে দেয়, খুব উপকার হত। সায়েন্স কিংবা কমার্সের ক্লাস করতে পারছি না। মেয়েদেরও কমন কোনও রুম নেই।
তাই প্রবীন সংবাদপত্র পরিবেশক ইজাহার আলী ও গ্রামবাসীর দাবি, এমপিও ভুক্ত করা হোক স্বপ্নের এ স্কুলটি।
যশোর ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ইজাহার আলী বলেন, এখন যদি এমপিওভুক্ত না হয়। তাহলে স্কুলটা চালানোর মতো লোক আর করা যাচ্ছে না। এজন্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে নজর দেয় এবং আমাদের এ স্কুলটি এমপিওভুক্ত করা হয়।
প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে অনেক ভালো ফলাফল করে আসছে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সে দিক বিবেচনায় নিয়ে এমপিওভুক্তির দাবি স্থানীয়দের।
সূত্র : চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর
আপনার মতামত লিখুন :