শিরোনাম
◈ গুলিস্তানে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ◈ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘নিখোঁজ’ কর্মকর্তাকে মাদারীপুর থেকে উদ্ধার ◈ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে টানা পতন: তিন মাসে ক্ষতি শত কোটি ডলার ◈ দেশের রিজার্ভ কত, জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে দুর্বৃত্তের আগুন ◈ তিতাস গ্যাস ফিল্ডে ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন, জাতীয় গ্রিডে বাড়ল ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ◈ দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণে হতাহত, ভারতের পাশে থাকার বার্তা বাংলাদেশের ◈ প্রবাসীদের বড় সুখবর দিল ওমান সরকার ◈ জেদ্দায় স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ–সৌদি হজ চুক্তি: ৭৮ হাজার ৫০০ জনের কোটা নির্ধারণ ◈ ৪৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৩৫ রাত
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ কইরা জীবনে কি ভুল করছি?

ডেস্ক রিপোর্ট: ‘আওয়ামী লীগ করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জেল খাটাইছে আমারে। আমার দল এখন ক্ষমতায়। আর বিনা দোষে জেল খাটতেছে আমার পোলায়। আওয়ামী লীগ কইরা জীবনে কি ভুল করছি?’

রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি নূর মোহাম্মদ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে একটি পত্রিকার কার্যালয়ে এসে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

হাজি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ছেলে কামরাঙ্গীর চর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মো. ওমর ফারুককে একটি সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। সিগারেট তো দূরের কথা, যেই পোলায় জীবনে একটি পান খায় নাই, হে নাকি মদ-ইয়াবা খায় আর বিক্রি করে। পুরনো একটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের মধ্যে আমার পোলারে ঢুকাইয়া দিয়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ইশারায় আমার পোলারে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ছেলের অপরাধ, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের সঙ্গে আমি কেন যোগাযোগ রাখি? তাঁর বাসায় কেন যাতায়াত করি।’

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আজিমপুরে পুলিশের পিটুনিতে আমার ডান হাত ভেঙে যায়। ২০০১ সালের পর সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও তার ক্যাডার বাহিনীর বহু হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মিথ্যা মামলা হয়। জেলও খেটেছি ৯ মাস। আর এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা আমার নেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মিথ্যা মামলায় আমার ছেলে জেলখানায়। এই দুঃখ কারে কমু!’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা।

পরিবারটির অভিযোগ, নূর মোহাম্মদের মতোই দলের প্রতি দায়িত্বশীল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ওমর ফারুক। দলের বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। নিজ বাড়ির পাশেই ইট, বালু আর সিমেন্টের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন তিনি। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহাম্মেদ কামরাঙ্গীর চরে একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে এলে পরিচয় হয় ওমর ফারুকের সঙ্গে। সেদিনের পর থেকে ফারুক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁর বাড়িতেও যেতেন। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন। হঠাৎ গত বুধবার গভীর রাতে পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালায়; কিন্তু গেট না খোলায় বাইরে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে পুলিশ চলে যায়। পরদিন সন্ধ্যায় ওমর ফারুকের বাবা নূর মোহাম্মদ থানায় গিয়ে ছেলের অপরাধ কী— জানতে চাইলে পরিদর্শক (তদন্ত) বাবু কুমার সাহা বলেন, ‘আপনার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, অভিযোগও নেই। পুলিশ হয়তো ভুলে আপনার বাড়িতে গিয়েছে। আর যাবে না; কিন্তু এর এক দিন পর শুক্রবার সকাল ১১টায় নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান রতনের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের একজন বানিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

পরিবারের আরো অভিযোগ, ‘আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম আদালত ওমর ফারুককে জামিন দেন; কিন্তু অজ্ঞাত ইশারায় তাঁকে পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় কামরাঙ্গীর চর থানা পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, ওসি শাহীন ফকির খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে খুশি করতেই ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করেন। এমনকি নতুন করে জামিন ঠেকাতে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগে থানার ভেতরে পরিদর্শক বাবু কুমার সাহার উপস্থিতিতেই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ নেতা আনোয়ার হোসেনকে নির্যাতন করে থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বিপ্লব ও তার ক্যাডার বাহিনী।’

থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান রতনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির নিচে ফার্মেসিতে বসে থাকা অবস্থায় আমার ওপর হামলা ও ভাঙচুর করল। সেই হামলাকারীরাই আবার আমিসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করল। ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছিল ১০০ জনকে। ওমর ফারুকের নামও ওই অজ্ঞাতপরিচয় আসামির তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থক অনেক নেতাই আতঙ্কে আছেন—কাকে না জানি আবার ওই মামলার আসামি করে জেলে পাঠায় পুলিশ।’

থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হাজি মো. শাহ আলী বলেন, ‘ওমর ফারুক খুবই ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে। ওকে গ্রেপ্তার করায় আমরা অবাক হয়েছি। ওর বাবা বিএনপির আমলে ৯ মাস জেল খেটেছেন এবং অনেক নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন। আজ তাঁরই ছেলে আওয়ামী লীগের আমলে কোনো নেতার ইশারায় জেল খাটলে মানুষটির দুঃখ লাগতেই পারে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমি তো ভাই বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতি করি না। আমি বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতি করি। ছাত্রলীগ থেকেই আজ আওয়ামী লীগের নেতা। আমার কাছে নেতাকর্মীরা আসতেই পারে। আর আমি এলাকায় এমপি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতেই পারি। তাই বলে নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখার জন্য মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকাবে, বাড়ি বাড়ি হামলা করবে, বাড়িঘর ভাঙচুর করবে? এটা কোন ধরনের রাজনীতি? কামরাঙ্গীর চরের যেসব নেতাকর্মী আমার কাছে এসেছে তাদের অনেকেই মিথ্যা মামলার ভয়ে এলাকাছাড়া। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য যেন দলের নেতাকর্মীরা হয়রানির শিকার না হয়। ঢাকা-২ আসনে এমপি পদে যাঁকেই নেত্রী মনোনয়ন দেবেন তাঁর পক্ষেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থাকবে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা এলাকায় প্রচার-প্রচারণা নির্বিঘেœ চালাতে পারবে। তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর যেন কোনো হামলা-মামলার ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে তিনি কঠোরভাবে এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন; কিন্তু আমার এলাকায় দলের সভানেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করেই আমার সমর্থক দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে।’

কামরাঙ্গীর চর থানার ওসি শাহীন ফকির বলেন, এলাকায় মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে একাধিকবার তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কালেরকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়