সৈয়দ রশিদ আলম : পবিত্র কাবা শরীফ, ইমাম হোসাইন (রা:) এর পুত্র, যিনি ইবাদতের সৌন্দর্য হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন, ইমান জয়নুল আবেদীন (রা:)। তিনি পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ ধরে অশ্রু বর্ষন করছেন, কার জন্য অশ্রু বর্ষন করছেন? মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) যে কাজটি করেছেন, অর্থাৎ তার উম্মতদের জন্য সব সময় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকতেন। প্রভু, তুমি আমার উম্মতদের ক্ষমা করতে থাক। নবী পরিবারের প্রতিটি সদস্যরা একই কাজটি করেছেন। নবী পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে বলা হয় গোলাপ। গোলাপ ফুল এক সময় শুকিয়ে যায়, কিন্তু নবী পরিবারের গোলাপ কখনও শুকাবে না। কারণ, তারা মহা পবিত্র কুরআনুল কারিমের ভাষায় পবিত্র, অর্থাৎ নবী পরিবারের প্রতি সদস্য পবিত্র হয়ে জন্ম নিয়েছেন পবিত্র হয়ে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। ইমাম জাফর সাদেক (রা:) হচ্ছেন ইমাম বাকের (রা:) এর পুত্র। অর্থাৎ ইমাম জাফর সাদেক (রা:)-এর দাদা হচ্ছেন, ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা:)।
ইবাদতের সৌন্দর্য যিনি তার বংশধারার ইবাদতের সৌন্দর্যই হবেন, এটা স্বাভাবিক। ইমাম জাফর সাদেকের (রা:) সময় মুসলিম বিশ্ব সংকটময় মুহুর্ত অতিবাহিত করেছিল। কিন্তু তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্ব ও দোয়ার ফলে ইসলাম থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর হয়ে যায়। তাঁর দরবারে গিয়ে যারা নিজেদের জীবনকে ধন্য করেছেন, হেদায়েতের নূরের চাদর দিয়ে নিজেদের আবৃত করতে পেরেছেন, এরা হলেন, সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রা:), হযরত জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (রা:), সুফিবাদের শাহেনশাহ ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রা:), হযরত সুফিয়ান সাওরী (রা:), ইমামে আজম ইমাম আবু হানিফা (রা:) ও ইমাম মালেক (রা:)। অর্থাৎ জগতের সেরা মহাপুরুষরা ইমাম জাফর সাদেক (রা:) পবিত্র সান্নিধ্য পেয়েছেন, নিজেদের জীবনকে ধন্য করেছেন, জগতকে আলোকিত করেছেন। নবী পরিবারের কাছে যারাই গিয়েছেন তারাই জগতকে আলোকিত করতে পেরেছেন। ইমাম জাফর সাদেক (রা:) এর কয়েকটি গুণাবলী হচ্ছে, তিনি কথা খুব কম বলতেন, কিন্তু যাই বলতেন প্রত্যেকটি কথা উল্লেখিত মহাপুরুষরা অনুসরণ করতেন।
তিনি ছিলেন জীবন্ত কুরআন। কুরআনুল কারিমের নির্দেশের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারতেন না, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) আদর্শকে ছাড়া অন্য কোন আদর্শকে ভাবতে পারতেন না। সারা পৃথিবীতে ইমাম জাফর সাদেক (রা:) কে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। তিনি এমন এক মহাপুরুষ ছিলেন, সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামির (রা:) ভাষায়, তাঁর চোখের দিকে যারা ভালবাসার সাথে তাকাতেন, তারা তাঁর চোখে মোহাম্মদ (স:) পবিত্র নূরের জ্যোতি দেখতে পেতেন। সেই জ্যোতি দেখে সবাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স:) এর প্রেমে পাগল হয়ে যেতেন। দুনিয়ার ভোগবাদীর চাদর যা ইবলিশ শয়তান মানুষের শরীরে পরিয়ে দিয়েছে, তা খসে পড়ত। নতুন করে তাঁরা একটি চাদর দারা আবৃত হয়ে যেতেন। সেই চাদরটি ছিল ভোগমুক্ত, মোহমুক্ত চাদর। সেই চাদর প্রাপ্তির পর প্রত্যেকেই নবজীবন লাভ করতেন। দুনিয়াতে জীবিত থেকেও মৃত্যুবরণ করতেন, অর্থাৎ মৃত্যুর পর যে অনন্ত লোকের পবিত্র জীবন রয়েছে তা তাদের জীবনে চলে আসত। বায়েজিদ বোস্তামি (রা:) মতন সুফিবাদের বাদশাহ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন, আমাকেও ইমাম জাফর সাদেক (রা:) নতুন করে জীবন মৃত্যু কি তা শিখিয়েছেন। নবী পরিবারের এই নূর ইমাম জাফর সাদেক (রা:) এর প্রতি আমাদের লাখো সালাম।
লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক
সম্পাদনা : গাজী খায়রুল আলম
আপনার মতামত লিখুন :