মাসুদ রানা : বাংলাদেশে যারা বলে বিপ্লবের কথা, তাদের মধ্যে দেখছি সংস্কার নিয়ে বেশি মাথাব্যথা। কী অদ্ভুত!
নির্বাচন যাদের ক্ষেত্র নয়, তারা যায় নির্বাচনে। কেনো? পরাজিত ও হাসির পাত্র হতে? কী অদ্ভুত!
দেশে যদি থাকে ফ্যাসিবাদী সরকার, তার অধীনে নির্বাচন কি গণতন্ত্র দিতে পারে কিংবা দিয়েছে কোথাও? না, ইতিহাসে তার নজির নেই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জেতা যায় না। জিততে হয় গণ-অভ্যূত্থান করে। এটিই ইতিহাসের শিক্ষা এবং এই শিক্ষার বড়ো বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে খোদ বাংলাদেশ।
১৯৬৯ সালের আইয়ুব খানের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যূত্থান না হলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের ভৌট স্বীকৃত হতো না। ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যূত্থান না হলে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনগণের ভৌট স্বীকৃত হতো না। অর্থাৎ, এই বোধ যদি ঠিক হয় যে, দেশের ক্ষমতায় আছে ফ্যাসিবাদী শক্তি, তার সাথে এই বোধ সঙ্গতিপূর্ণ নয় যে, ফ্যাসিবাদীদের অধীনে নির্বাচন হলে সেখানে জনগণের রায় স্বীকৃত হবে।
কী করণীয় তবে? করণীয় হচ্ছে জনগণের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে যে-সকল ফ্যাসিবাদী আইন-কানুন ও বিধি-বিধান হয়েছে, তা বাতিলের দাবী-সহ দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবীতে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদের শিকড় উৎপাটনের জন্যে সেই আন্দলনকে গণ-অভ্যূত্থানের দিকে পরিচালিত করা।কিন্তু এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে অন্য আরেকটি ফ্যাসিবাদী শক্তিকে নিয়ে আন্দোলন হয় না। জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তিকে এই আন্দোলন তিলে তিলে গড়ে তুলতে হবে, তা যতো কষ্টকরই হোক না কেনো। জনগণের মধ্যে অধিকার-বোধ না জাগিয়ে তাদেরকে ভৌট দিতে দিলে, সেই ভৌটের শুধু ছিনতাই নয়, অপপ্রয়োগও হতে পারে। তাই, ভৌটে যাওয়ার আগে ফ্যাসিবাদের উচ্ছেদ প্রয়োজন!
লন্ডন, ইংল্যান্ড/ফেসবুক থেকে