ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হসেন : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০০ গজ দূরে র্যাব যে জঙ্গি অভিযান চালিয়েছিল পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ১২ জানুয়ারি রাত ২টা থেকে ৩টা মধ্যে। ওই বাড়ির ৫ম তলায় একটা ছাত্রাবাস ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর তথ্য হলো, সেখানে ৩ জন জঙ্গি অবস্থান করেছিল। এবং র্যাবের ব্রিফিং আমরা দেখলাম, সেই ৩ জনের কোনো সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। তাহলে র্যাব কিভাবে আইডেন্টিফাই করল, তারা ৩ জন জঙ্গি। এ প্রশ্ন সব সময় থেকে যাবে। একই অবস্থায় আমরা দেখেছি, গাইবান্দায় একটা মাঠের ভিতরে জঙ্গি অভিযান করেছিল র্যাব। সেখানেও তাদের পরিচয় জানে না। এরপর শ্যামলিতে একটা জঙ্গি অভিযান চালিয়েছিল, সেখানে ৭ জঙ্গি ছিল, কিন্তু তাদের কোনো পরিচয় জানে না।
এজন্য আমাদের সন্দেহ হয়, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি বাহিনীর উপর যে অভিযান চালাচ্ছে কিন্তু তাদের আইডেন্টিফাই করতে পারে না, এটা কেমন কথা? যেখানে আমাদের দেশের পুলিশ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে, আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, পুলিশ সন্ত্রাসীদের বাদ দিয়ে নিরীহ মানুষের উপর রিপোর্ট করে। যেখানে পুলিশের বিশ্বাস, যোগ্যতা সবার কাছে নি¤œপর্যায়ে, সেই ক্ষেত্রে পুলিশের কথা আমাদের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে না। এখন র্যাব পুলিশের অংশ। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে জঙ্গি হামলা হয়, সেখানে মহল্লার লোকজন জানায়, তারা প্রথম ৪টি গুলির শব্দ শুনেছে, তারপর নিরাপত্তা বাহিনী মাইকের মাধ্যমে সারেন্ডার করার অহ্বান জানান। আমি একজন সেনা বাহিনীর অফিসার হিসাবে এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে ভাবতে পারি, হয়তো তাদের আগে গুলি করে মারা হয়েছে।
এই ঘটনাকে প্রচার করার জন্য, মাইকে প্রচার করা হয়। প্রথম যে ৪টি গুলি করা হয়, সেটিকি কেউ দেখেছে? কোনো মিডিয়া বা কোনো সাংবাদিক দেখেছে? নিরাপত্তা বাহিনী বলেছেন, একটি গ্রেনেড গ্যাসের চুলার উপরে রেখে ব্লাস্ট করা হয়েছে। গ্রেনেড হল এমন একটা জিনিস, লিবার ওপেন না করলে কখনও ব্লাস্ট হবে না। তাদের কাছে যদি গ্রেনেড থাকে, তাহলে তারা নিচে মারবে, তারা কেন চুলার উপরে ব্লাস্ট করতে যাবে? আমার কাছে এগুলো নাটক মনে হয়। এসব জঙ্গি অপারেশন আমার ব্যক্তিগতভাবে সিরিয়াস ডায়ুট লাগে। কারণ, ওই ছাত্রাবাসের একটা ছেলে তার বাবার কাছে রাত ২.৩০ মিনিটের ফোন করে বলেছিল, তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকা আসো, আমার বাসায় গোলাগুলি চলছে।
আমি মনে হয় আর বেঁচে থাকতে পারব না। তার বাবা ঢাকায় এসে তার ছেলেকে আর পায়নি এবং তার ফোনটা বন্ধ পেয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, তাদের তিনজনের কোনো নিশ্চিত পরিচয় জানে না কিন্তু তারা প্রমাণ করছে তারা জঙ্গি। যারা সত্যিকার অর্থে মূল জঙ্গি তাদেরকে বের করতে হবে এবং তাদেরকে নির্মূল করতে হবে। তাদেরকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, এরাই জঙ্গি।
পরিচিতি : সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী
মতামত গ্রহণ : রাশিদুল ইসলাম মাহিন
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ