ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: হযরত রাফে বিন খাদীজ (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন উপার্জন সর্বাধিক পবিত্র? রাসূল(সা.) বললেন, মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং যে ব্যবসায় মিথ্যাচার বেঈমানী থেকে মুক্ত। [মেশকাত]
ক্রয় বিক্রয়ে উদার আচরণের তাগিদ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষণ করুন, যে ক্রয়ে বিক্রয়ে ও নিজের দেয়া ঋণ আদায়ে নমনীয় ও উদার আচরণ করে। [বোখারী]
সৎ ব্যবসায়ীর উচ্চ মর্যাদা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন সত্যবাদিতা ও সততার সাথে লেনদেনকারী আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবীগণ, সিদ্দীকগণ ও শহীদগণের সাথে থাকবে। (তিরমিযি, আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত) ব্যবসায় দৃশ্যত একটা দুনিয়াদার সুলভ কাজ। কিন্তু এ কাজ যদি সততা ও সত্যবাদিতার সাথে করা হয়, তবে তা এবাদতে পরিণত হয়। এই সদগুণাবলীর অধিকারী ব্যবসায়ী আল্লাহ তায়ালার পুণ্যবান বান্দা নবী, সিদ্দিক ও আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণকারীদের সাহচর্য লাভ করবে।
সিদ্দিক সেই মুমিনকে বলা হয় যার জীবন সততা ও সত্যবাদিতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং যে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকার সমগ্র জীবন ব্যাপী পালন করে এবং যার জীবনে কথা ও কাজে অমিল ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না।
সততা ব্যতীত ব্যবসায়ী পাপী গণ্য হবে: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একমাত্র তাকওয়া ও সততা অবলম্বনকারী (অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহারকারী ও মানুষের হক অর্থাৎ পাওনা পুরোপুরিভাবে প্রদানকারী) এবং সত্যবাদী ব্যতীত সফল ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন পাপী ও বদকার হিসাবে উত্থিত হবে। [তিরমিযী]
বেশী কসম খাওয়ায় ব্যবসায়ে বরকত নষ্ট হয়: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন সাবধান পণ্য বিক্রয়ে বেশী কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকে এতে (সাময়িকভাবে) ব্যবসায়ে উন্নতি হয় বটে। তবে শেষ পর্যন্ত বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (মুসলিম, আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত) ব্যবসায়ী যদি ক্রেতাকে তার পণ্যের ব্যাপারে কসম খেয়ে খেয়ে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, পণ্যের এই মূল্যই সঠিক এবং পণ্যটি খুবই ভালো, তা হলে সাময়িকভাবে ক্রেতা হয়তো ধোঁকা খেয়ে যাবে। কিন্তু পরে যখন প্রকৃত ব্যাপার জানতে পারবে, তখন আর ঐ দোকানের ধারে কাচেও যাবে না। ফলে তার ব্যবসায়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।
মিথ্যে শপথকারী ব্যবসায়ীর সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পাক পবিত্র করে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন না। উপরন্তু তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। আবু যর বললেনঃ যে ব্যক্তি অহংকার ও দাম্ভিকতা বশত টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করে, যে ব্যক্তি কারো উপকার করে খোটা দেয় এবং যে ব্যক্তি মিথ্যে কসম খেয়ে নিজের বাণিজ্যিক পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি করে। [মুসলিম]
ব্যবসায়ীদের দান ছদকার মাধ্যমে ভুলত্রুটির কাফফারা দেয়া উচিত
.হযরত কায়েস বিন আবু গারযা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আমলে আমাদেরকে সামাসিরা (দালাল বা ফড়িয়া) বলে আখ্যায়িত করা হতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন আমাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি আমাদেরকে আরো ভালো নামে আখ্যায়িত করলেন। তিনি বললেনঃ ওহে ব্যবসায়ীর দল, পণ্য বিক্রয়ের সময় অতিশয়োক্তি করা ও মিথ্যা কসম খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং তোমরা তোমাদের ব্যবসায়ে সদকার মিশ্রণ ঘটাও। [আবু দাউদ]
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর এ উক্তির তাৎপর্য এই যে, ব্যবসায়ে অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই অনেক অর্থহীন কথাবার্তা বলে ফেলে, কখনো বা মিথ্যে কসমও খেয়ে বসে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বিশেষভাবে আল্লাহর পথে দান সদকা করার নিয়ম চালু করা উচিত, যাতে তাদের ঐ সব ভুলত্রুটির কাফফারা হয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :