শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৫১ সকাল
আপডেট : ১২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুই দফা সময় পেয়েও সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি

ডেস্ক রিপোর্ট : অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্তের পর দুই দফা সময় পেলেও সক্ষমতা বাড়াতে কোনো উদ্যোগই নেয়নি রাজধানীর ৯০ ভাগেরও বেশি প্রতিষ্ঠান। ঝুঁকিপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল যেমন রয়েছে, তেমনি আছে বিপণিবিতান, আবাসিক হোটেল ও ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও। চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই অগ্নি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফায়ার সার্ভিস যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তা অনুসরণ করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ভবনগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে ওই নির্দেশনা মানা কঠিন।  খবর বণিক বার্তা’র।

গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে মহানগরীর সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস। অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে সক্ষমতা যাচাইয়ের এ প্রক্রিয়ায় ভবনগুলোর মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, ভবনের মেঝের আয়তন, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও প্রয়োজনীয় লিফট আছে কিনা ইত্যাদি বিবেচনায় নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘সন্তোষজনক’ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকার প্রায় সব হাসপাতাল, আবাসিক হোটেল, বিপণিবিতান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। এ সময় তালিকায় থাকা রাজধানীর মোট ১ হাজার ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৪টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়। আর ৯২৪টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, মাস্টার মাইন্ড স্কুল, মাইলস্টোন কলেজ, তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইস্পাহানী বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় এবং সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলসহ নামীদামি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রাখা হয়েছে ।

বণিক বার্তার প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ভয়াবহ চিত্র। ১ হাজার ২৭৫টি বিপণিবিতান পরিদর্শন শেষে ৫৪১টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৬৮৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৭টিকে সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৪৩৩টি হাসপাতালের মধ্যে ১৭৪টিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ২৪৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে— শমরিতা হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, মেরিস্টোপ বাংলাদেশসহ বেশকিছু হাসপাতাল। আর অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকায় ১১টি হাসপাতালকে সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে অ্যাপোলো, ইউনাইটেড ও স্কয়ার হাসপাতালের নামও রয়েছে।

একই সময়ে রাজধানীর ৩২৫টি আবাসিক হোটেল পরিদর্শন করে ২৪৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৭টি আবাসিক হোটেলকে সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের ৬৯২টি শাখা অফিস পরিদর্শন শেষে ১৭৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৪৭৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৫টিকে সন্তোষজনক ঘোষণা করে সংস্থাটি।

পাশাপাশি রাজধানীর মোট ২৬টি মিডিয়া সেন্টারও পরিদর্শন করে অগ্নিনির্বাপণ সংস্থাটি। এর মধ্যে ১৮টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুটিকে সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় এসব প্রতিষ্ঠানকে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রথম দফা নোটিস পাঠানো হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে। এরপর এক মাস সময় দিয়ে এপ্রিল-মে মাসে পুনরায় ওইসব প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে গিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ দেখতে না পেয়ে দ্বিতীয় দফা নোটিস পাঠানো হয়। এরপর কিছু ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, বাকী সব প্রতিষ্ঠানই এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে নোটিসে সক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ওইসব প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, দুই দফায় সতর্ক করার পরও অগ্নিঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ ভাগেরও বেশি প্রতিষ্ঠান তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি। তাদের একটি চূড়ান্ত নোটিস পাঠানো হচ্ছে। এরপরই অগ্নি আইন ২০০৩ অনুযায়ী ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করেছে, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা মেনেই স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এরপরও সংস্থাটির পক্ষ থেকে অনেক ভবন অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চার মাসের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিস দেয়া হয়। নোটিস পাওয়ার পর অভ্যন্তরীণভাবে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু স্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গেলে তা ভেঙে নতুন নির্মাণ করতে হবে, যা এত অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়।

এদিকে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির নোটিস পাঠানোর পর গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আট মাসে রাজধানীতে কমপক্ষে দেড়শ’টি ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় থাকা উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলসহ পাশাপাশি তিনটি ভবনে গত ৩ জুলাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ হোটেলটিকে প্রথম দফায় গত বছরের মার্চ মাসেই অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ এতে কোনো সাড়া প্রদান করেনি। পরে দ্বিতীয় দফা নোটিস প্রদান করা হয়। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ তাতেও কর্ণপাত করেনি। পরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট টানা ৫ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দুজন দগ্ধ হয়ে মারা যান ও আহত হন কয়েকজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়