মতিনুজ্জামান মিটু : এক বিঘা জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার আবাদ করে বছরে সহজেই আরো এক বিঘা জমি কেনা যায়। তাই পাহাড়ি অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত বাড়ছে বিলাতি ধনিয়ার চাষ। ইতোমধ্যে ঔষধি গুণাগুণ ও উচ্চ পুষ্টি মানের এই প্রখর সুগন্ধিযুক্ত বিলাতি ধনিয়া পাহাড় অঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফসলে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয় বিদেশেও বাড়ছে বিলাতি ধনিয়ার কদর।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর মসলা গবেষণা কেন্দ্রের গাজিপুরের আঞ্চলিক অফিসের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, বছরে ১ বিঘা জমির ধনিয়া পাতা বিক্রির টাকায় সহজেই আরো ১বিঘা জমি কেনা যায়। তাই দেশের অনেক কৃষকের একমাত্র অর্থকরি ফসলে পরিণত হয়েছে বিলাতি ধনিয়া। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ পাহাড়ের সর্বত্র, সোনাইমুড়িসহ নোয়াখালির সর্বত্র ও কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে এখন সারা বছর বিলাতি ধনিয়ার চাষ হচ্ছে। অনেকেই এখন আর অন্য ফসলের আবাদ করেন না। বিলতি ধনিয়াই হয়ে উঠেছে তাদের ধ্যান জ্ঞান।
কেননা ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচে ১ বিঘা জমিতে বিলাতি ধনিয়া আবাদে সহজেই একজন কৃষক বছরে ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার পাতা বিক্রি করতে পারেন। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন বাড়ছে ধনিয়া পাতার কদর ও চাহিদা। আগে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ধনিয়া পাতা রফতানি করা হতো। তবে এখন দেশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রফতানি করা যাচ্ছেনা। তাই ধনিয়া পাতা চাষ করে দেশের বহু মানুষের স্বাবলম্বি হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মসলা গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত বারি বিলাতি ধনিয়া-১ অবমুক্তির পর থেকে এই ফসলটির আবাদ ও ব্যবহার দ্রুত বাড়তে থাকে। উচ্চ পুষ্টিমান, প্রখর সুগন্ধিযুক্ত এবং উন্নত ভেষজ গুণের উচ্চফলনশীল বারি বিলাতি ধনিয়া-১ এর পাতা হেক্টরে ৩০ থেকে ৫০ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আকর্ষণীয় সবুজ বর্ণের এ জাতটির পাতার দৈর্ঘে ১৫-২০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ২-৩ সেন্টি মিটার।
পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা হিসাবে যার বর্তমান দাম ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। খুচরা প্রতি কেজি ধনিয়া পাতা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বেচাকেনা হয়ে থাকে। আর ভোক্তারা তাদের হাতে সামান্য কয়েকটি ছোট ছোট ধনে পাতার আটি কেনেন ৫ থেকে ১০টাকায়। অধিক ফলন ও উচ্চমুল্যের এ মসলা ফসলটি এদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর আবাদ উপযোগী। পোকামাকড়ের আক্রমণও খুবই কম।