শিরোনাম
◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা ◈ ভারতের নেপাল নীতিতে 'রিসেট বাটন' চাপলেন মোদি, শিক্ষা বাংলাদেশের কাছ থেকে

প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:২৫ সকাল
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাদক এক সামাজিক ব্যাধির নাম

ফাহমিদা হক  : ভয়ঙ্কর এক বিপদের নাম মাদক। যাতে এখন শুধু তরুণ- যুবকরাই নয়, সব বয়সের মানুষই এতে আক্রান্ত। দেশে ব্যাপক হারে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে তরুণী-কিশোরীদের মধ্যে। তরুণ সমাজে ক্রমেই এই সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে যার প্রমাণ মিলছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন-পরিসংখ্যানের তথ্য দ্বারা। আর এভাবে মরণ নেশা মাদকের বিস্তার লাভ করার পিছনের কারণ হচ্ছে মাদকের সহজ লভ্যতা। মাদক এখন এতটাই সহজলভ্য যে গ্রাম থেকে শহরের যে কোনো স্থানে হাত বাড়ালেই মিলে যায়। আর এই সহজলভ্যতার প্রধান কারণ যারা এই অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করার কথা তারাই এসব দেখেও না দেখার ভান করে মাদক কারবারের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

এবং ইদানিং এর যথেষ্ট প্রমাণও মিলছে। এখন কথা হচ্ছে যে, যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব মাদক নিয়ন্ত্রণ সেই বাহিনীরই কিছু অসাধু ব্যক্তি যখন মাদক পাচারকারী, তাদের রক্ষাকারীর বা পাহাড়াদার হয়ে কাজ করে তখন এমন পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া খুব সহজ নয়। কিছুদিন আগে রাজশাহী গোদাগাড়ী এলাকায় অনুরুপ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে আমরা দেখেছি। যেখানে অভিযোগ রয়েছে খোদ ওসির বিরুদ্ধেই। এমন বহু খবর প্রকাশিত কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে কি?
মাদকের চেয়ে ভয়াবহ সংক্রমন রোগ আর নেই, কারণ মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের জন্ম দেয়। সমাজের বর্তমান অস্থির অবস্থা থেকে শুরু করে ধর্ষণের, খুনের মতো জঘন্য অপরাধগুলো বেশির ভাগই করে থাকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা। মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যেও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মাদকসেবীরা না নিজের জন্যে, না অন্যের জন্যে কিছু করতে পারে। এরা সমাজের আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

কিন্তু কষ্টের বিষয় এমন বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী প্রচ- মেধার অধিকারী, জীবনটা মাদকের মাঝে আটকে না গেলে এরাই সমাজ, দেশ এমনকি পরিবারে উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকতে পারত। আমার জানা এমন বহু মেধাবী তরুণ-তরুণী যারা নেশার জগতে ডুবে যাওয়ার আগে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী আর ভদ্র বাচ্চা ছিল। যে বাচ্চাটা বাবা-মা, শিক্ষকের অতি প্রিয়। আর আদরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হওয়ার কথা ছিল, সেই মানুষটাই যখন নেশাখোর। তখন সে হয়েছে সবার ঘৃণার, আতঙ্কের আর ভয়াবহ যন্ত্রণার আরেক নাম। একবার যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তা থেকে সহজে সে মুক্ত হতে পারে না। অন্যদিকে সহজপ্রাপ্যতা আর সহজলভ্যতার জন্যে তার চারপাশের অনেকের মধ্যে নতুন করে আসক্তি ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আমরা ধরেই নিতে পারি এই সহজলভ্যতা কাটাতে একমাত্র ভূমিকা রাখতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর জনপ্রতিনিধি ও মাদক বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে পুলিশের কিছু অংশ মাদকের সঙ্গে তিন ভাবে জড়িত। কেউ কেউ মাদক গ্রহণ করছেন, কেউ কেউ সোর্সের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া মাদক দ্রব্যের অংশ। আবার বিক্রি করে দিচ্ছেন, কেউ কেউ ঘুষ নিয়ে মাদক বিক্রিতে সহযোগিতা করছেন।

কেউ কেউ আবার নিজেরাই মাদক বিক্রিতে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছেন। এমন অভিযোগে একাধিক পুলিশ সদস্য গ্রেফতারও হয়েছেন। এছাড়া মানুষকে হয়রানি করার জন্যে পকেটে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে মামলা ঠুকে দিচ্ছে বা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। মাদক বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, পুলিশ সবই জানে এবং সব রকমের অপকর্মের সাথে কিছু সংখ্যক অসাধু পুলিশের হাতও থাকে। এই কথার যথার্থ প্রমাণও মিলে যখন দেখা যায়, কথিত পুলিশ অভিযানের পরেও মাদকের রমরমা ব্যবসা চলতেই থাকে। মাদকের কাস্টমার নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে মাদক সংগ্রহ করে থাকে, যেই জায়গাটা যারা কিনতে যায় তারা যেমন চিনে, যারা বিক্রি করে তারাতো থাকেই, সাথে পুলিশও ভাল করে চিনে জানে সবকিছু। অতএব এটা একটা বুঝাপড়ার বিশাল চক্র, যেখানে সবাই সবাইকে রক্ষা করে চলে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ একটি সংবাদের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কোথা থেকে মাদক আসছে, কোথায় কিভাবে বিক্রি হচ্ছে তা পুলিশের জানা।

কাজেই এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা পুলিশের জন্যে কঠিন কোনো কাজ নয়। আর পুলিশ সদস্যরা যাতে জড়িয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের, এবং কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরিচ্যুত করার। একটা সমাজকে পঙ্গু করতে মাদকই যথেষ্ট। মাদকাসক্ত মানুষটা পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্রের বোঝা। কিন্তু আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রের এ নিয়ে খুব একটা দুর্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এদেশে মাদক উৎপাদন হয় না বললেই চলে, মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধ পথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা চোরাগলিতে হেঁটেই পার পেয়ে যায় অনায়াসে। তাদের জন্যে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক : পরিচালক, সিসিএন
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়