শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে ৬০.৭ শতাংশ ◈ তীব্র তাপদাহে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: বিএনপি ◈ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ◈ বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে: ওবায়দুল কাদের ◈ উপজেলা নির্বাচনে হার্ডলাইনে বিএনপি, ৭৩ নেতা বহিষ্কার ◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন 

প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৯ দুপুর
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজশাহীতে রাজাকারের নামে টেনিস কমপ্লেক্স!

 

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজশাহীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল মুসলিম লীগের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন (এনএসএফ) রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা জাফর ইমামের। ঘৃণ্য এই স্বাধীনতাবিরোধী মৃত্যুর আগেও যেমন প্রভাবশালী ছিলেন, মৃত্যুর পরও হয়ে ওঠেন আরও গুরুত্বপূর্ণ! কুখ্যাত এই রাজাকারের নামে রাজশাহীতে এখনও রয়ে গেছে আন্তর্জাতিক একটি টেনিস কমপ্লেক্স। মুক্তিযোদ্ধাদের শত আপত্তি, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ-সমাবেশ আর উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও এখানে কোনো কাজে আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। ২০০৪ সালে মারা যান ক্রীড়া সংগঠক জাফর ইমাম। এরপর ২০০৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তার নামে টেনিস কমপ্লেক্সটির নামকরণ হয়। এরপর তা বাতিল করে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বা বুদ্ধিজীবীর নামে এ কমপ্লেক্সটি নামকরণের দাবিতে বারবার আন্দোলনে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। অজানা কারণে কখনোই সফল হতে পারেননি তারা।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, জাফর ইমাম বরাবরই খোলস বদল করে চলেছেন। ১৯৬৮ সালের দিকে তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ক্রীড়া কর্মকর্তা পদে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার চাকরি চলে যায়। পরে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে ১৯৭৩ সালের দিকে আবারও তিনি চাকরি ফিরে পান। ওই সময় কতিপয় ছাত্রলীগ নেতা তাকে সমর্থন করে শিক্ষাবোর্ডে গার্ড দিয়ে অফিস করতে নিয়ে আসতেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এর তিন বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারই তাকে আবার শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠকের পুরস্কার প্রদান করে।

মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আইয়ুব-মোনায়েম খানের মুসলিম লীগের সন্ত্রাসী সংগঠন এনএসএফ-এর রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এই জাফর ইমাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে তার হামলার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর শীর্ষ ছাত্রনেতারা। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ৬৯'এর গণআন্দোলনে ছাত্র-জনতা জাফর ইমামের রাজশাহীর কাজীহাটার বাড়িতে হামলা চালায়। তখন তিনি পালিয়ে রক্ষা পান। পরে আশ্রয় নেন তার স্ত্রী ডা. জোবায়দার কাদিরগঞ্জের বাড়িতে। সেখানে প্রতি সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনাদের আড্ডা হতো। মুক্তিকামী বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রনেতাদের তালিকা হানাদারদের হাতে তুলে দিতেন এই জাফর। তার তালিকা দেখেই চলতো গণহত্যা। বাবলাবন গণহত্যাও তার পরিকল্পনাতেই হয়েছে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

রাজশাহী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুর রহমান বলেন, মোনায়েম খানের ছেলে খসরুর খুবই ঘনিষ্ঠজন ছিলেন জাফর ইমাম। তার হাত ধরেই রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠা পায় এনএসএফ। এ সংগঠনটির হাতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা প্রতিদিনই মার খেতেন। জাফর ইমামের হাতে ছাত্র ইউনিয়নের রুহুল আমিন প্রামাণিক থেকে শুরু করে সেকেন্দার আবু জাফর, ছাত্রলীগ নেতা মাহাবুব জামান ভুলু সবাই মার খেয়েছেন, অপমানিত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে যেসব বুদ্ধিজীবী, ছাত্রজনতাকে পাকিস্তানি আর্মিরা ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল, তাদের অধিকাংশের নামের তালিকা জাফর ইমাম পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিত বলে আমাদের ধারণা।

মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর আক্ষেপ করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য রাজশাহীতে এত মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী শহীদ হলেন, তারপরও একজন রাজাকারের নামে টেনিস কমপ্লেক্সের নামকরণ কেন হলো? আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন করলাম, মিছিল সমাবেশ করলাম এই নাম বাতিলের জন্য, তবুও স্বাধীন দেশে এমন ঘৃণিত একজন রাজাকারের নামে আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্সের নাম রয়ে গেল।

মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, '৬৭ সালে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সেকেন্দার আবু জাফরকে মারধর করার খবর পেয়ে রাজশাহী কলেজে যাই। সেখানে যাওয়ার পর এনএসএফ সদস্যরা আমাকে আটক করে 'পাগলা কুকুর' পেটানোর মতো পেটায়। স্বাধীনতার সময় জাফর ইমাম পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিধন করেছেন। এই স্বাধীনতাবিরোধীর নামে দেশে কোনো স্থাপনা থাকা উচিত নয়।

রাজশাহী মহানগর শাখার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলাউদ্দীন শেখ ভুলু বলেন, আমরা এই নামকরণ বাতিলের দাবিতে একবার টেনিস কমপ্লেক্সের গেট ভেঙে লাল নিশান টানিয়ে দিয়েছিলাম। মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশ, লিফলেট বিলি করেছিলাম। তবুও নামটি বাতিল করা হয়নি।

তিনি বলেন, এখনও আমরা যে দুই-একজন জীবিত আছি তারা স্বপ্ন দেখি এই স্বাধীনতাবিরোধীর নামটি বদল হবে। এটা লজ্জাজনক, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে অবমাননার শামিল।

রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জাফর ইমাম স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার নামে জেলা স্টেডিয়ামও হতে যাচ্ছিল। তখন আমরা আন্দোলন করে হতে দিইনি। টেনিস কমপ্লেক্সের ব্যাপারে খুব জোরালো কোনো দাবি আসেনি, এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়