শিরোনাম
◈ সকালে উঠেই এক লিটার পানি পান: কতটা উপকারী? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? ◈ তারেক-জুবাইদার দুর্নীতির মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’, পূর্ণাঙ্গ রায়ে খালাস হাইকোর্টে ◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস ◈ শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক!

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪৫ সকাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুম বা নিখোঁজ, মানুষ কোথায় যাবে

গোলাম মোর্তোজা : যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে আমরা ইতিহাসের দিকে চলে যাই। বলতে থাকি, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছিল। যার অর্থ দাঁড়ায় এমন যে, আগে যেহেতু হয়েছিল, এখনও হতেই পারে। মানুষ হারিয়ে যাওয়া, নিখোঁজ হওয়া বা গুম হওয়া বিষয়ে, এমন চিত্র গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। ‘গুম’নিয়ে কিছু কথা।

০১.
দুই মেয়াদের বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ থেকে সূত্রপাত হতে দেখা গেল। প্রথমে নিখোঁজ হতে শুরু করলেন বিএনপি-নেতা কর্মীরা। এমন সব নেতাকর্মী নিখোঁজ হলেন তাদের কারও কারও নামের আগে ‘সন্ত্রাসী’শব্দটি যোগ ছিল। পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদেরকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের উদ্ধারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল না। তারা বারবার বলেছিল ‘আমরা অপহরণ করিনি’। এও বলা হচ্ছিল যে, তারা সন্ত্রাসী। তাদের অনেকে ফিরে আসেননি। সচেতন মানুষ হিসেবে যারা পরিচিত, যারা লেখেন যারা টেলিভিশনে কথা বলেন, তাদেরও অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন ‘... অমুক সন্ত্রাসী ছিল’। বিষয়টি এমন যে, যেহেতু সন্ত্রাসী ছিল, সেহেতু তাকে গুম বা অপহরণ করা যায়!
০২.
তারপর আস্তে আস্তে অপহরণের মাত্রা বেড়েছে। ‘সন্ত্রাসী’ নয় একেবারে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং এখন শিক্ষকরাও নিখোঁজ হচ্ছেন। হাহাকার বাড়ছে। হলি আর্টিজানের সময় জানা গেল, কেউ কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে জঙ্গি হয়েছে। তখন সরকার এবং সাংবাদিক-নাগরিক সমাজ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-পাতি নেতা, হাইব্রিড নেতারা বলতে শুরু করলেন, নিখোঁজ বা গুমের বিষয়টি সত্যি নয়। সবাই পালিয়ে জঙ্গি হয়েছে।
সরকার আগে বলত ‘বিব্রত’ করার জন্যে নিজেরা ‘আত্মগোপন’ করেছে। জঙ্গি বিষয় সামনে আসার পর সরকার নতুন উদ্যমে এককথা বলতে শুরু করল। আগে যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে সুর মেলাতেন, তারাও এখন উদ্বিগ্ন। কারণ নিখোঁজ বা গুম হচ্ছে সাংবাদিক-শিক্ষকরাও। এখন এসব ব্যক্তি কী তাদের পূর্বের অবস্থান বা বক্তব্যের দিকে তাকাচ্ছেন?
০৩.
সরকার এবং সরকার সংশ্লিষ্টদের অবস্থান দেখে মনে হয়, এদেশে তো কেউ নিখোঁজ হয় না, অপহৃত হয় না- নিজে নিজে আত্মগোপণে চলে যায়।দু’এক জন নিজের চোখ নিজে বেঁধে ফিরেও আসে নিজে নিজেই। ১৩ জন জঙ্গি হয়েছে বলে, ১৩০০ তো এই তকমা দিয়েই জায়েজ করেছি। আজ সাংবাদিক কাল শিক্ষক নিখোঁজ হচ্ছেন।
যখন আমার আপনার পরিচিত- বন্ধু তখন চিন্তায় পড়ে আতঙ্কিত হচ্ছি। নিখোঁজ হওয়া ব্যবসায়ি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মির স্ত্রী- সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোনের কান্না- হাহাকার আমাদের বিচলিত করতে পারেনি। তারা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা প্রায় নিরব থেকেছি। কেউ কেউ টেলিভিশনে গিয়ে কু-যুক্তি দিয়েছি।
পরিচিতজন-বন্ধু হলে উদ্বিগ্ন হবেন, অপরিচিত সাধারণ মানুষের সন্ধান বা ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হলে নিরব থাকবেন, ক্ষেত্র বিশেষে সমর্থন করবেন, এই কি সচেতন মানুষের নীতি? এই কি মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা?
আমরা যদি ‘গুম’ বা ‘অপহরণ’ বা ‘নিখোঁজ’ সংস্কৃতির অবসান চাই, তাহলে এই ঘটনাগুলোর অনুসন্ধান করতে হবে।
ক. বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে কারা অপহরণ করেছিল? কীভাবে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করলেন, কারা কীভাবে তাকে মেঘালয়ে নিয়ে গেল? তিনি নিজে নিজে গেছেন, দেশের কোনো মানুষ একথা বিশ্বাস করেন না। মানুষকে বিশ্বাস করাতে হলে সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য তদন্ত করে, পুরো বিষয়টি পরিস্কার করা অপরিহার্য।
খ. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে কারা অপহরণ করেছিল? ফিরে আসার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হলো না কেন? যেহেতু এই অপহরণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম সম্পৃক্ত হয়েছিল, সেহেতু তদন্ত করে এটা প্রমাণ করা অপরিহার্য ছিল যে, কারা জড়িত। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা করা হয়নি অপহরণ রহস্যের। উল্টো সরকার সংশ্লিষ্ট অনেককে তার অপহরণ এবং ফিরে আসা নিয়ে হাসাহাসি করতে দেখা গেছে।
গ. সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে ডা. ইকবালকে যখন অপহরণ করা হয়, তখন সেখানে একটি পুলিশের গাড়ি দেখা যায়। যে মাইক্রোবাসে ইকবালকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই মাইক্রোবাসের পেছনে পুলিশের গাড়ি দেখা যায়। প্রথমাবস্থায় পুলিশ তাদের সেই গাড়ির সন্ধান বের করতে পারেনি। তারপর বলেছে, ‘পুলিশের মতো গাড়ি’ অনেকেই ব্যবহার করে।
গাড়ির ভেতরে পুলিশের পোশাক পরা সদস্যদের বিষয়ে বলেছে ‘পুলিশের মতো পোশাক’ অনেক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা পরেন। কারা অপহরণ করল, পুলিশের ‘মতো গাড়ি’ পুলিশের ‘মতো পোশাক’ কারা পরেন, কোনো তথ্যই আর জানা গেল না। বেশ কিছু দিন পর ইকবাল ফিরে এলেও, রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হলো না।
০৪.
নারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ-হত্যার পুরো ঘটনাটি র‌্যাব কর্তৃক সংগঠিত হওয়ায়, মানুষের বিশ্বাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে যাদের দ্বিধা ছিল, তাদের দ্বিধা দূর হয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হয়েছে বা হয়, যখন যেখানে যে ঘটনা ঘটছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
মানুষের বিশ্বাস, যে ঘটনাগুলো চাপা দেয়া যাচ্ছে না, প্রকাশিত হয়ে পড়ছে সেগুলোর বিরুদ্ধেই কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ কর্তৃক আগুন দেয়ার ভিডিও চিত্র যদি না পাওয়া যেত, কখনোই তা স্বীকার করা হতো না, ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা।
০৫.
এদেশে বিশ্বজিতরা খুন হয়। বিচারে ফাঁসি হয়, খালাসও পায়। বিশেষ বিবেচনায় খুনি- সন্ত্রাসীদের ফাঁসি মওকুফ করে মুক্তি দেওয়া হয়। ফাঁসির আগের দিন পাগল সাজিয়ে মুক্তি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে এদেশে। হত্যা মামলাও প্রত্যাহার করা হয়। পরিবার বলে ৬ মাস আগে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিচিত রাজনীতিবিদকে মাঝ রাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন দিন পর বলা হয়, আজ অমুক জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভূক্তভেগী অসহায় মানুষ আজ বড় বেশি রকমের অসহায়। তারা কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন- জানেন না। একটি স্বাধীন দেশের শত শত মানুষ হারিয়ে যায়, রাষ্ট্র নির্বিকার থাকে। নাগরিক সমাজ- বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশটি অন্ধ এবং বোবা হয়েছে। আজ তারা নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন। ভাবছে না যে, তিনি নিরাপদ থাকলে তার আত্মীয়-বন্ধু, পরিবার-পরিজন, তাদের সন্তানেরা মোটেই নিরাপদ না। আজ কথা না বললে, কাল তাদেরও অনেকে হারিয়ে যাবেন।
সহজ- স্বচ্ছন্দ- নিরাপদ জীবনযাপনের নাম ‘উন্নয়ন’। ‘উন্নয়ন’মানে চার গুণ মূল্যে তিন তলা জ্যাম তৈরি করা নয়। ৯০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কেনার নাম ‘উন্নয়ন’ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে অনিরাপদ দেশ নির্মাণ ছিল না। জনগণের অধিকারহীন গণতন্ত্রহীনতা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-ন্যায় এবং সত্যি বিষয়। এর সঙ্গে অন্যায়- অসত্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
গোলাম মোর্তোজা: সম্পাদক, সাপ্তাহিক।
s.mortoza@gmail.com। পরিবর্তন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়