শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:১১ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭ নভেম্বরের বিপ্লব : জাতীয়তাবাদী শক্তির দার্শনিক ভিত্তি

অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম : বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আত্মজাগৃতি একটি অনন্য অধ্যায়। এদিনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, তা গোটা জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তাকে সংহত করেছিল। একটি সংকটময় সময়ে সাধারণ সৈনিকদের অসাধারণ সাহসী ভূমিকা জাতিকে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র এবং সম্প্রসারণবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করেছিল। দেশের আপামর মানুষ স্বত:স্ফূর্ত মিছিলের সোত সৃষ্টি করেছিল এবং দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়ে এ ‘বিপ্লব’কে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। নির্মিত হয়েছিল সৈনিক-জনতার সংতির মধ্য দিয়ে গোটা জাতির ইস্পাত কঠিন এক ঐক্য। নতুন করে রচিত হয়েছিল রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি। নির্ধারিত হয়েছিল নতুন এক জাতীয় নেতৃত্ব। গৃহবন্দিদশা থেকে মুক্ত করে সিপাহি-জনতা জেনারেল জিয়ার হাতে পরম নির্ভরতায় অর্পণ করেছিল বিরাজমান নৈরাজ্যময় পরিস্থিতির অবসান করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব। তিনি পিছপা হননি সেই ক্রান্তিলগ্নে গুরুভার নিজ স্কন্ধে তুলে নিতে। যেমনটি নিয়েছিলেন তিনি আরো একবার ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার সময়ে। জেনারেল জিয়ার কাক্সিক্ষত নেতৃত্ব একটি অলস, আমুদে হেয়ালি, স্থবির জাতিকে কর্মের প্রেরণা প্রদান করেছিল। সততা, সাহস, কর্তব্য নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আলোয় তিনি আমাদের আলোকিত করেছিলেন। তার দৃঢ়তায় এবং দূরদর্শিতায় অর্জিত হয়েছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নৈতিক উন্নয়ন। অকার্যকর অথবা পরিত্যক্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠিত হয়েছিল। তাই যথার্থভাবে বলা যায়,‘ ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভবিষ্যত বাংলাদেশের ভিত্তি রচনার কর্মসূচি।
১৯৭৫ এর নভেম্বর বিপ্লবের সিপাহিরা জীবন বাজি রেখে রুখে দাঁড়িয়েছিল জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সংরক্ষণ করবার জন্য। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান,অনিশ্চয়তা,অরাজকতা এবং প্রতিবেশী শক্তির হীন ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতা যখন বিপন্ন তখন তারা নির্দেশের সোপানকে অগ্রাহ্য করে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় অবতীর্ণ হয়। তারা জাতীয় শক্রদের প্রতিহত করে এবং কুচক্রীদের নীল নকশা নস্যাৎ করে দেয়। বাংলাদেশ ইংরেজী দৈনিক ‘দি বাংলাদেশ টাইমস্’ বিপ্লবের পরের দিন ৮ নভেম্বর প্রথম প্রষ্ঠায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়ের শিরোনাম দেয় ‘ইধহমষধফবংয ডরহং ঋৎববফড়স’। সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে এই ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতি অর্জনে এ রকম সংহত, সমন্বিত এবং সংগঠিত ঐক্য গোটা জাতির জন্য এক অনুপম দৃষ্টান্ত অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদের ভাষায় এ ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি চিরায়ত সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, একটি দেশের সেনাবাহিনী এবং সাধারণ মানুষের ঐক্য জাতীয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। ঘটনার ঘনঘটা : এই তাত্ত্বিকতার বাইরে বাস্তাবতা এই যে, কতিপয় ঘটনাবলি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পটভূমি তৈরি করেছিল। মধ্য আগস্টের রক্তক্ষয়ী ঘটনাবলি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বলয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট করেছিল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ‘পরাজিত শক্তি’ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে কলকব্জা

নাড়তে থাকে। এ সময়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে জ্যেষ্ঠ বনাম কনিষ্ঠদের মাঝে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। এ দ্বন্দ্ব একটি হস্থক্ষেপ প্রবণ পরিস্থিতির তৈরি করে। শত্রুরা এর সুযোগ গ্রহণ করে। তাদের পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৫ আগস্ট ঘটনাবলির পরে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ কোন মতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানিকে তাঁর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। জনাব ওসামানি দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সাধনে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্ত তিনি ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ঢাকা সেনানিবাসে জ্যেষ্ঠদের পাল্লা ভারী হয়ে ওঠে। সেই সময়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। তার অনুগত ছিলেন তৎকালীন ঢাকা ব্রিগেড প্রধান কর্নেল সাফায়েত জামিল। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তারিখে এদের সম্মিলিত শক্তি ১৫ আগস্ট অভ্যুথানের পাল্টা আরেকটি সামরিক অভ্যুথান ঘটায়। সেনাবাহিনীতে নির্দেশ সোপান ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ৩ নভেম্বরের অভ্যুথান সংঘটিত করা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজেই নির্দেশ সোপান ভেঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রাধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করলেন এবং নিজেকে সেনাপ্রাধান হিসেবে ঘোষণা করলেন। এ অভ্যুত্থানের প্রতি প্রতিবেশী দেশের সমর্থন পরিলক্ষিত হয়। আকাশ বাণী এ অভ্যুত্থানকে তাদের অনুকূল বলে দাবি করে। অপরদিকে তাদের রাজনৈতিক অংশ বিশেষত বামপন্থিরা ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি শোক মিছিল বের করে। মিছিলে খালেদ মোশাররফের বৃদ্ধা মা এবং খালেদের ছোট ভাই আওয়ামী লীগের নেতা রাশেদ মোশাররফ এমপি সামিল ছিলেন। ‘‘চারদিকে রটে যায় আওয়ামী লীগপন্থিরা খালেদের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বিবিসি ও রয়টাসের ঢাকা প্রতিনিধি আতিকুল আলম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তাজউদ্দীনের কথিত একটি চিঠি নিয়ে ৪ ও ৫ নভেম্বর ঢাকায় কূটনৈতিক পাড়ায় ছোটাছুটি করেন। তিনি দাবি করেন, ভারতীয় হাই কমিশনার সময় সেনকে উদ্দেশ্য করে লেখা ওই চিঠিতে অভ্যুথানের প্রস্ততি ও পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। (মহিউদ্দীন আহমেদ: ২০১৬:৭২)। সাধারণ সৈনিকরা এ অবস্থায় সম্প্রারণবাদের পুন:স্থাপনে সরাসরি হস্তক্ষেপের আশংকায় এবং সম্ভাব্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘর্ষের চিন্তায় অসম্ভব রকম অস্থির হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে গোপনীয়ভাবে কর্মরত জাসদ এর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা’ এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে নিদেশ লাভের জন্য তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করে। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা প্রধান কর্নেল তাহের তাদের পরিকল্পিত বিপ্লবের জন্য এই অস্থির ও অরাজক অবস্থাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা যথেষ্ট সক্রিয় থাকলেও সেনাবাহিনীতে তাদের ব্যাপক

 

সমর্থন ছিল না। স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা এবং সাধারণ সৈনিকদের প্রতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের সহানুভুতিশীল ভুমিকার কারণে তার জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত।তাই কর্নেল তাহের তাদের প্রত্যাশিত বিপ্লবের জন্য জিয়াউর রহমানের কাঁধে সওয়ার হওয়ার পরিকল্পনা নেন। ‘‘সশন্ত্র বাহিনীরসমূহের শৃঙ্খলা ও ঐক্য টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সে সময় জিয়ার নেতৃত্বেরে কোন বিকল্প ছিল না।তিনি ছিলেন সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য সেনানায়ক।জিয়া সশন্ত্র বাহিনীসমূহের এবং সাধারণভাবে জনগণের অবিসংবাদিত নেতার পরিণত হন। এটা ছিল দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত হওয়ার পথে তাঁর যাএার শুরু। সময়রে অগ্রযাএায় দেশের লক্ষ-কোটি মানুষের কাছে জাতির এাণকর্তার হয়ে ওঠেন জিয়া’’ (মাহফুজ উল্লাহ:২০১৬:৫০)। যা হোক , ঘটনার এক পযার্রে তাহের বাহিনী জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে তাদের তও¦াবধানে নেওয়ার একাধিকবার চেষ্টা করে। জিয়াউর রহমান তাঁর বুদ্ধিমওা দ্বারা এসব কূটকৌশলের মোকাবেলা করেন। সাধারণ সৈনিকরা যখন তাঁকে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের সাথে সেনা ছাউনিতে প্রতিষ্ঠিত করে তখন কর্নেল তাহেরের লোকেরা বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দেয়। তাঁরা অনেক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে, সৈনিকদের অস্ত্র সমর্পণে বাধা দেয় এবং গোটা দেশের সেনানিবাসে অরাজকতার সৃষ্টি করে । জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কর্নেল তাহেরের গণবাহিনী ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনে হামলা চালায়। প্রকাশিত প্রায় সকল স্মৃতিকথা, গ্রন্থাদি এবং সরকারী প্রামাণ্য প্রতিবেদনে উপরোক্ত ঘটনাসমূহ রয়েছে।তাই এ সম্পর্কিত কোন তথ্য বিকৃতির সুযোগ নেই।সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কোন তথ্য বিকৃতির এবং তথ্যগত অসততার প্রাবল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করে, ট্রুথ শ্যাল প্রিভেইল। ৭ নভেম্বরের বিপ্লব জেনারেল জিয়াউর রহমানকে যুুগের এক সদ্ধিক্ষণে মোড় ফেরানো রাজনৈতিক নেতৃত্বে চূড়ায় অধিষ্ঠিত করেছিল অপ্রত্যাশিতভাবে। লক্ষ্যণীয় যে, তিনি প্রত্যক্ষভাবে ১৫ আগস্টের রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান, ৩ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থান কিংবা ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব কোনটার সাথেই যুক্ত ছিলেন না। অথচ ঘটনার পরম্পরায় ৭ নভেম্বরের বিপ্লব তাকে আসে নেতৃত্বের একাবারে কেন্দ্রবিন্দুতে। তার পেশাদারি মনোভাব,অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও সর্বজনগ্রহণযোগ্যতার সুনামের কারণে আপামর সিপাহি-জনতা তাকে সেই ক্রান্তিলগ্নের ত্রাতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ৭ নভেম্বর থেকে সংগৃহিত চেতনা ও বিশ্বাসকে তিনি ধারণ করেছিলেন তার কথার ও কাজ। বিভেদ ও বিভাজনকে অতিক্রম করে যখন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন বাংলাদেশী

জাতীয়তাবাদের রাজনীতির দার্শনিক ভিত্তি স্থাপিত হয়ে গিয়েছিল সেই ক্ষণেই। ৭ নভেম্বরের বিপ্লব থেকে আহরিত মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেওয়া প্রত্যয়ে সংবিধান ও জাতীয় মূলনীতিসমূহ পুন:নির্ধারণ করে দিয়েছিলন। পরবতীকালে বৈরী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসমূহের তরফ থেকে আনা শত পরিবর্তন ও ইতিহাস বিকৃতির পরও তার নেয়া বিবিধ কর্মসূচী ও আদর্শিক ভিত্তির ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আজও প্রবাহমান দেখতে পাই। সে কারণে যথাথভাবেই তাকে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি বলা হয়।
শহীদ জিয়াউর রহমানে পক্ষ থেকে গোটা জাতির জন্য সম্ভবত সবচেয়ে উজ্জ্বলতম উপহার বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন। সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে তিনি বাংলাদেশে বিলুপ্ত বহুদলীয় গণতন্ত্রে নবযাত্রা শুরু করে দেন। গোটা জাতির জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক যে যারা গণতন্ত্রের জন্য প্রাণপাত করেন। তারে দ্বারা প্রবর্তিত এক দলীয় বাকশাল ব্যবস্থা বাতিল করে জিয়াউর রহমানকেই হৃত গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে হয়েছিল। পরিবতিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে কোন আন্দোলন বা আবেদন ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তার প্রতি নিরব সমর্থন অব্যাহত ছিল। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী শহীদ জিয়াউর রহমানের গণমুখী রাজনীতির প্রতি সমর্থন প্রদান করেছিল। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের প্রাক্কালে জিয়াউর রহমানের রাজনীতির প্রতি সকল মত ও পথের বুদ্ধিজীবীগণ নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করেছিল (মাহফুজ উল্লাহ: ২০১৬: ৪৯৬)। নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান জাতিকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যান।
বিগত চার দশক ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জীবন চক্রে জিয়াউর রহমানের আদর্শ লক্ষ্য ও কর্মসূচী পত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে। ক্ষমতার পালা বদলে আজকে তার উজ্জ্বল অজন: বহুদলীয় গণতন্ত্র সবচেয়ে বিপন্ন। যে গণতন্ত্রে জন্য বাংলাদেশের মানুষ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছে স্বাধীনতা, তা বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্রের নিগড়ে নিপতিত। গণতন্ত্র মূল্যবোধ হিসেবে যেমন ভূলুণ্ঠিত, তেমনি শাসন প্রণালী হিসেবে পরিত্যক্ত। তৃতীয় বিশ্বের যে ভঙ্গুর নিবাচন ব্যবস্থাকে রাজনীতির কুশীলবরা বলছেন কপট গণতন্ত্র , অনুদার গণতন্ত্র , ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ , এমন কি ‘একদিনের গণতন্ত্র তাও আজ বাংলাদেশের অনুপস্থিত। জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকৃত আর তাদের সতত স্বাভাবিক ভোটাধিকার ভয়াবহ রকমের নির্বাচন প্রকৌশলের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত। ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর যে বিপ্লবের চেতনা আমাদের বিপন্ন স্বাধীনতা, সাবভৌমত্ব ও জাতীয় অখন্ডতাকে নিশ্চিত করেছে তা একখও প্রবহমান। ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের উত্তরাধিকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সাবভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নভেম্বর বিপ্লবের শাণিত চেতনার পুনরুত্থান প্রার্থনা করেছেন। সে বিপ্লবী ধায়ায় দেশের নাগরিক সাধারণ জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে আগ্রহী ভূমিকা পালন করবে- নভেম্বর বিপ্লবের পাদভূমিতে দাঁড়িয়ে এই হোক আমাদের এ সময়ের প্রার্থনা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়