শিরোনাম
◈ নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয়: কেন ক্ষুব্ধ মোদি সমর্থকেরা? আল–জাজিরার প্রতিবেদন ◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা

প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৩ সকাল
আপডেট : ০৫ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিভাগ। দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বিষয় দুটিতে তেমন একটা যতœবান বলে মনে হচ্ছে না। টেলেন্টহান্ট কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্যাম্প পরিচালনা করে নিবিড় অনুশীলন সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়াবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী দেশে তৈরি হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের জন্য যতটা আন্তরিক হওয়া উচিত তার অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের তরুণ সমাজ দিন দিন হতাশ ও বিপথগামী হয়ে পড়ছে।
প্রাতিষ্ঠানিক উৎসাহ ও আগ্রহের ঘাটতির ফলে এই শিক্ষার্থীরা তাদের তরুণ বয়সেই উদ্যম, তারুণ্য, কর্মস্পৃহা হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে বিপথগামী জীবনকে বেছে নেয়। এই বিপথগামীতার ফল হিসেবে তারা বিভিন্ন অসামাজিক, অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো অনাকাক্সিক্ষত কর্মের দিকে ধাবিত হয়ে পড়ে। অধিকন্তু কেউ কেউ নেশার জালে আবদ্ধ হয়ে সমাজ ও পরিবারের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে। এই অবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষার কাজে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম টনিকের ভূমিকা পালন করে থাকে। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষালয় থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীগণ যেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিম-লে প্রবেশ করে বিনোদনমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাস্তব, ব্যবহারিক ও কর্মমুখী জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারে। কর্তৃপক্ষের সেদিকে যতœবান হওয়া উচিত।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়। বয়সের বিবেচনায় বিভাজন ঠিক করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আইটেম ভিত্তিক মাপ ও মান ঠিক করতে হবে। কেননা বিভিন্ন বয়সে শিক্ষার্থীদের জন্য একই ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ঠিক হবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক রুটিনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এ দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ভালো হয়। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ক্লাসের আয়োজন করা প্রয়োজন। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর কমিউনিকেশন দক্ষতা খুব দুর্বল। সে যা ভাবছে তা সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে না। অনেকের এই দুর্বলতা সারা জীবনই থেকে যায়। বিতর্ক ও উপস্থিত বক্তৃতার ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
প্রতিবছর শুরুর দিকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সংস্কৃতি সপ্তাহ উদ্যাপন করা উচিত। যেমন-গান, নাচ, চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, অভিনয়, আবৃত্তি, রচনা লেখা ইত্যাদিতে যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করবে, তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতীয় দিবস কীভাবে উদ্যাপিত হবে তারও একটা কাঠামো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করতে পারে। অন্তত শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা যায়। নিয়মিত ক্লাসের বিঘœ না ঘটিয়ে শেষের একটি বা দুটি পিরিয়ড বাদ দিয়ে সপ্তাহব্যাপী সম্মিলিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়। এসব অনুষ্ঠান দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা করে বক্তৃতা, ইতিহাস নিয়ে আলোচনা, স্মৃতিচারণ, আবৃত্তি, গান, নৃত্য, নাটকসহযোগে বিচিত্রানুষ্ঠান, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, দিবসের সঙ্গে সম্পর্কিত বইয়ের সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী ইত্যাদি। এভাবে সাত দিন শিক্ষার্থীরা ঐ দিবসের নানা কিছুর মধ্যে থাকতে পারলে মূল জাতীয় দিবসে তারা অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে মুক্ত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে। প্রতিটি জাতীয় দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। ছুটির দিনে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে বলা ঠিক হবে না। সেদিন তারা অন্য সবার সঙ্গে গণ-অনুষ্ঠানে যাতে অংশ নেয়, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা উচিত। আমাদের স্কুলের পাঠ্যসূচিতে ধর্মীয় শিক্ষাও অন্যতম একটি বিষয়। সেই ধর্ম শিক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে যৌক্তিক পর্যালোচনার কথাও বিবেচনা করা উচিত।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কো-কারিকুলাম হিসেবে বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্লাবের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নম্বর দিতে হবে। সব ক্লাবের কর্মসূচির ভিত্তিতে বছরের শুরুতে প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আয়োজন করতে হবে। শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে যৌবনের প্রতিটি ধাপে যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে এবং বিভিন্ন সামগ্রী ও সহায়তার মাধ্যমে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের তরুণদের মধ্য থেকে বিশ্বমানের জিমন্যাস্ট, ফুটবল তারকা, ক্রিকেট লিজেন্ড হয়ে ক্রীড়া ও সংস্কৃতির অন্যন্য সকল কর্মকা-ে এক বিস্ময় তৈরি করে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।
লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক ও কমান্ডান্ট, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, গাজীপুর
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়