শিরোনাম
◈ তারেক-জুবাইদার দুর্নীতির মামলায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচার’, পূর্ণাঙ্গ রায়ে খালাস হাইকোর্টে ◈ বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা সেই তরুণীকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ (ভিডিও) ◈ জুলাই স্মরণে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত ঢাবি (ভিডিও) ◈ পর্যাপ্ত অর্থ ও হোটেল বুকিং না থাকায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ৯৬ বাংলাদেশি আটক ◈ বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে চোখের পানি ফেলছেন, ছেলের বিরুদ্ধে মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের লর্ডসে ডুবলো ভার‌তের রণতরী, সিরিজে এ‌গি‌য়ে গে‌লো ইং‌রেজরা ◈ কানাডার টরন্টো শহরে ইসকনের রথযাত্রায় ডিম নিক্ষেপ, ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ (ভিডিও) ◈ একটি দল লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া সুকৌশলে চাঁদা ও হাদিয়া নেওয়া ছাড়া কোনো কাজ করে না: মির্জা আব্বাস ◈ শাপলা প্রতীক নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক! ◈ যুক্তরাষ্ট্র ফেরত টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগ নেতা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩৪ সকাল
আপডেট : ০৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘লাথি’ ভিন্ন মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল

 সাম্য শরিফ : মানুষ তার পায়ের অনেক রকম ব্যবহার করেন। লাথি মারা তার ভিতর একটি। এই লাথি মারা কবে কখন কিভাবে মানব সমাজে শুরু হয়েছিল তার ইতিহাস জানা যাবে না তবে অনুমান করা যাবে যে মানব সৃষ্টির প্রথম থেকে শুরু হলেও হতে পারে।

যদিও এই লাথি মারা কাজটা মানব সমাজে সহনীয় বা অসহনীয় কিংবা কোন মাত্রার আচরণ তাও একটি বিতর্কের বিষয় কারণ সেই আদিম সময় থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ অনেক সভ্য হলেও এবং অনেক জঘন্য অসভ্যতা বিলুপ্ত হলেও কিংবা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও পৃথিবী থেকে একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের লাথি মারা বিলুপ্ত হয়নি বা কেউ এখনও সেরকম চিন্তাও করেনি। আবার পৃথিবীর কোনও দেশ আইন করে লাথি মারা নিষিদ্ধ করেনি। তাই শাস্তি হিসেবে লাথি মারা কতটা অসভ্য কিংবা অভদ্র তা এখনও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মাণদ-ে নিরুপণ করা হয়নি। তবে পায়ের লাথি দাবি করতে পারে যে তার একটি উচ্চ মর্যাদা ও রুচি প্রমাণিতভাবে সত্য। কারণ ’আশরাফুল মখলুকাত’ কখনো শাস্তি হিসেবে পশুপাখি কিংবা ইতর কোনো প্রাণীর উপর সাধারণত এটা প্রয়োগ করেন না। সে বিবেচনায় লাথির একটি নিজস্ব গৌরব ও আভিজাত্য অনস্বীকার্য।

লাথির অরিজিন কিংবা প্রচলন সম্পর্কে না জানা গেলেও লাথির কারণ স্পষ্ট। মানুষ সাধারণত কারো পরে ভিষণভাবে রেগে মেজাজ হারিয়ে ফেললে তাকে লাথি মারে। এটার মাধ্যমে দুটো কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে: রাগ নিবারণ ও শাস্তি প্রদান। এ গোত্রের অন্য দুটি শাস্তি হচ্ছে চড় ও ঘুষি। চরম ঘৃনামিশ্রিত রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পদাঘাতের এ শাস্তিটি প্রদান করা হয়। তবে পৃথিবীতে এ শাস্তিটি অতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত হলেও এখনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি। তাই কোর্টের কোনো বিচারক তার রায়ে এখনও কোনো অভিযুক্ত আসামিকে শাস্তি হিসেবে এরুপ দ- প্রদান করেননি। অন্যদিকে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিলম্বিত সময়ে এরুপ শাস্তি প্রদান সম্ভবও নয় কারণ এ শাস্তিটি সংক্ষুব্দ বা রাগান্বিত ব্যক্তিটি আসামির উপর ইন্সটান্ট প্রয়োগ করেন। একটু বিলম্ব হলেই কিংবা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ না হলে লাথির অপমৃত্যু ঘটে কিংবা উদ্দীপনা হারিয়ে নিষ্ক্রীয় হয়ে যায়। সে কারণে ’আসামি’ বুঝে ওঠার আগেই এ শাস্তিটির আচমকা প্রয়োগ হয়ে থাকে।

অতি সম্প্রতি এমনই এক আচমকা শাস্তির শিকার হয়েছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। ৩ নভেম্বরের আমাদের সময়.কমে প্রকাশিত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষককে টিএসসির সম্মেলন কক্ষে এই লাথি মারা কাজটি সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। রিপোর্টে লেখা হয়েছে যে একজন শিক্ষকের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে তার দিকে সেই বক্তব্য দেয়া শিক্ষক এগিয়ে আসেন। পরে অন্য দুইজন শিক্ষক তেড়ে এসে সেই প্রতিবাদকারি শিক্ষককে লাথি মারেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার রাগ নিবারণ করেছেন অন্য আরেকজন শিক্ষককে লাথি মারার মাধ্যমে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের উপর আরেকজন শিক্ষকের এরুপ পদাঘাতের ফলে এ লাথি মারা শাস্তিটির মর্যাদা রাতারাতি কয়েক ধাপ বেড়ে গিয়েছে। এটা এখন সমাজের সবচেয়ে সন্মানীয় স্তরে স্থান পেয়ে গেল! সাধারণত লেখাপড়া না জানা বা কম লেখাপড়া জানা গোঁয়ার-মূর্খ ধরনের ব্যক্তিরা রেগে যেয়ে পায়ের এ প্রয়োগ করে থাকেন। আবার সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে অতি ক্ষমতাবান অথচ প্রবৃত্তির দিক থেকে অতি নি¤œ স্তরের ও নি¤œ সংস্কৃতির দুর্বৃত্তরা অতি ক্ষমতাহীনদের উপরও এটা প্রয়োগ করেন। যারা ’আমজনতা’ তারাও কখনো কখনো এটার ব্যবহার করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কর্তৃক অন্য একজন শিক্ষকের এরুপ শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ায় লাথি নামক শাস্তিটি এখন একটি ভিন্ন মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী যে পদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা যেমনই হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামাজিক সন্মান সবার উপরে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক এই লাথিমারা কা-ের পর সেই শিক্ষকের রুচি, মনোবৃত্তি ও সংস্কৃতি সমাজের আরও কোনো কোনো স্তরের মানুষের রুচি, মনোবৃত্তি ও সংস্কৃতির সাথে একাকার হয়ে গেল। তবে এ আচরণটা এক বা দুইজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত হলেও তাদের পরিচয়টা ব্যক্তিগত নয়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং নামের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এখন খুবই হতাশাজনক। এই দুজন শিক্ষক কি তার একটা কারণ দেখিয়ে দিলেন?। যে মানুষটি আরেকজন মানুষকে লাথি মারতে পারে সে কোন মানের মানুষ? আপাদমস্তক বর্বর না হলে একজন মানুষ কি আরেকজন মানুষকে লাথি মারতে পারে? এমন মানের শিক্ষক এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়জন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধুই একটা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমাদের গোটা জাতির শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতীক?

লেখক মানবাধিকার সংগঠ দি হান্ড্রেড’এর প্রতিষ্ঠাতা
ই-মেইল : shammosharif@gmail.com

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়