সাকিবকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ, খেলানো হতে পারে শুধু বিদেশে
ঠিক সু-খবর বলা হয়তো পুরোপুরি ঠিক হবে না। তবে সাকিব আল হাসান ভক্তদের আশাবাদী হওয়ার খোরাক আছে। সারা দেশের অগণিত সাকিবপ্রেমীর জন্য খবর, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে আবার জাতীয় দলে ফেরানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।
চিন্তা ভাবনা বলাও হয়ত কম বলা হলো। সাকিবকে আবার জাতীয় দলে চায় বিসিবি। সাকিব চাইলে তাকে প্রাথমিকভাবে দেশের বাইরে খেলানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সাকিবের সঙ্গে কথা বলার জন্য বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং সাকিবের গুরু ও মেন্টর নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।
তিনি সাকিবের সাথে কথা বলে তার (সাকিবের) মতামত জেনে শ্রীলঙ্কা সফর শেষে দেশে ফিরে বোর্ডকে রিপোর্ট করবেন। সাকিব ইতিবাচক মনোভাব দেখালে বোর্ডে চূড়ান্ত কথাবার্তার পর বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সাথে কথা বলে তাকে দেশের বাইরে জাতীয় দলের হয়ে খেলার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবেন।
এটুকু পড়ে হয়ত কেউ কেউ এটাকে আকাশ-কুসুম কল্পনাও ভাবছেন। মনে করছেন, আষাঢ় মাসে ‘আষাঢ়ে গল্প’ বুঝি! আসলে ব্যাপারটি মোটেই অসাড় নয়।
বিসিবির একাধিক বোর্ড পরিচালক নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওপরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন এবং ওই পরিচালকরা অকপটে স্বীকার করেছেন মূলতঃ বর্তমান প্রেক্ষাপট, পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকেই সাকিবকে আবার জাতীয় দলে ফেরানোর কথা ভাবছে বিসিবি।
কারণ জাতীয় দল ক্রমাগত খারাপ খেলছে এবং এটা দিবালোকের মত পরিস্কার যে, বাংলাদেশ দলে তামিম, সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদের মত অভিজ্ঞ, পরিণত, প্রতিষ্ঠিত ও কোয়ালিটি পারফরমারের অভাব সুস্পষ্ট।
তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিকরা কিছুতেই পূর্বসুরিদের জায়গা নিতে পারছেন না। তাদের শুন্যতা, ঘাটতি থেকেই গেছে এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ পারফরমারের অভাবে একের পর এক ম্যাচ হারতে হচ্ছে। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি - তিন ফরম্যাটেই দিনকে দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। অবস্থান তলানিতে গিয়ে ঠেকছে বাংলাদেশের।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তামিম ও রিয়াদ তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়েছেন। মুশফিকই শুধু টেস্ট খেলছেন। আর সাকিব থেকেও নেই। অথচ সাকিবই হতে পারেন ‘অন্ধের যষ্ঠি।’ সাকিবই পারেন মাঝ নদীতে হাবুডুবু খাওয়া দলকে টেনে তুলতে। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের দুর্দান্ত ফর্ম (দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে) দেখেই বেশি আশাবাদী হয়েছে বোর্ড।
এক বোর্ড কর্মকর্তার আবেগতাড়িত কথা, ‘ভাই গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে সাকিবকে দেখেছেন? কি ফিট আর চনমনে! পারফরমেন্সের লেভেলটাও ঠিক আছে।’
আর তাই বিসিবির এক সিনিয়র ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজের সাথে আলাপে বলেই ফেলেছেন, ‘এখন বাংলাদেশ দলে সাকিবের খুব দরকার।’ ওই কর্তা আরও যোগ করেন, ‘এখন ব্যাটিং ও বোলিংয়ের যে হতচ্ছিরি অবস্থা দেখা যাচ্ছে, দেখবেন সাকিব ঢুকলে এই দলেরই চেহারা পাল্টে যাবে।’
তবে কি সাকিবকে খুব শিগগিরই আবার লাল সবুজ জার্সিতে গায়ে দেখা যাবে? বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার জবাব, ‘বাংলাদেশ দলের কনফিডেন্স লেভেলের অবস্থা খুব খারাপ। ক্রিকেটারদের সাহস, আত্মবিশ্বাস একদম কমে গেছে। এই দলকে টেনে তুলতে দরকার সাকিবের মত ক্যারিশম্যাটিক পারফরমার। আসলে সাকিবের রিপ্লেসমেন্ট নাই। সাকিব নেই বলেই সমস্যা হচ্ছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগের শক্তির ভারসাম্য অনেক কমে গেছে।’
‘সাকিব দলে থাকা মানেই একজন বাড়তি ব্যাটার ও বোলার খেলা। সাকিব একাদশে থাকার অর্থ, চার বোলার নিয়ে খেললেও চলে। আর বাড়তি ব্যাটিং অপশন থাকে। এখন যার কিছুই নেই। একাদশ সাজাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ব্যাটার বাড়াতে হলে বোলার কমে ৪ জন হয়ে যায়। আবার ৫ বোলার নিয়ে খেললে একজন ব্যাটার কম পড়ে। সাকিব দলে থাকলে আর তা হয় না। হবেও না। বোলিং ও ব্যাটিং লাইনআপে বাড়তি অপশন থাকে। থাকবেও।’
বিসিবির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, জাতীয় দলের পারফরমেন্স খুব বেশি খারাপ হওয়ায়, বোর্ড মিটিংয়ে অবস্থার উত্তরণ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে, হচ্ছে প্রচুর। সেখানেই আসলে সাকিবের কথা উঠে আসে।
ভিনদেশি ও দেশি কোচদের পারফরমেন্স ও ভূমিকা নিয়েও প্রচুর কথা-বার্তা হচ্ছে বোর্ডের ভেতরে; কিন্তু সবার একটাই কথা। বিশ্বের সেরা কোচ এনে বেটে খাওয়ালেও হবে না, যদি না ক্রিকেটাররা ভাল না খেলে। সেই ভাল খেলার পারফরমার কম। আর দলের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসও গেছে কমে। এই দলটাকে টেনে তুলতে হলে সাকিবের মত হাই কোয়ালিটি জেনুইন অলরাউন্ডার খুব প্রয়োজন। তাই তাকে ফেরানোর জোর চিন্তা চলছে।
এ পরিচালকের কথা, ‘আমাদের আলোচনার মধ্যে সাকিব আছে। আমরা তাকে আবার জাতীয় দলে চাই। তবে বিসিবি পরিচালকদের অকপট স্বীকারোক্তি, এখনকার পারিপার্শিক যা পরিস্থিতি, তাতে সাকিবকে দেশে এনে খেলানো মুশকিল। আলোচনা হচ্ছে তাকে দেশের বাইরের সিরিজগুলোতে খেলানো যায় কি না!’
‘তারই পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, জাতীয় দলে এখনো সাকিবের দরোজা খোলা এবং সেটা বোর্ডের ভবিষ্যত প্ল্যানেরই অংশ। দলে সাকিবের খুব দরকার। সেটা ধরেই সাকিবকে দেশে না এনে খেলানোর চিন্তা ভাবনা ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখন দেশের যা অবস্থা, তাতে তাকে দেশে এনে খেলানোয় আছে রাজ্যের ঝুঁকি।’
বোর্ড কর্তাদের অনুভব, ‘দেশে এসে খেলায় স্বস্তিতে থাকবেন না সাকিব। মাঠে হয়ত তার নিরাপত্তায় সমস্যা হবে না; কিন্তু মাঠের বাইরে তার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তাই বিসিবি পরিচালক ও সাকিবের গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিম ভাইকে দিয়ে তার মতামত জানার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি সাকিবের সাথে কথা বলে মতামত জানাবেন। খেলতে চাইলে বিসিবি প্রধান সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সাকিবকে আনুষ্ঠনিকভাবে দেশের বাইরে জাতীয় দলে খেলার প্রস্তাব দেবেন।’
যার ওপর সাকিবের সাথে কথা বলার দায়িত্ব বর্তেছে, জাতীয় দলের সাথে বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত বোর্ড পরিচালক ও ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে এমন একটা ভাব দেখান যে তিনি কিছুই জানেন না। প্রথমে বলেন, ‘সাকিবকে রাজি করানো তো কোন ব্যাপার না। এখন দেখতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে চায় কি না?’
পরে মুঠোফোন আলাপে ফাহিম জাগো নিউজকে জানান, সাকিবের অভিজ্ঞতা, কোয়ালিটি ও স্কিল এখনো দলের অনেক কাজে দিবে। এবং এখন বাংলাদেশ দলের যে ঘাটতি ও দূর্বলতা, সাকিবের অন্তর্ভুক্তি তা কাটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ফাহিমের বদ্ধমূল ধারনা, ‘দলে ফেরানোর কথা বলা হলে সাকিব রাজি হবেন। তাই তার মুখে এমন আশরাবাদী সংলাপ, সাকিবকে রাজি করানো তেমন কোন সমস্যা না। তবে তাকে দলে ফেরাতে মিডিয়ার একটি ইতিবাচক ভূমিকা খুব দরকার। পুরো পরিবেশ, পরিস্থিতির আলোকে সাকিবের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে একটা আলোকবর্তিকা। সাকিব দলে ফিরলে অনেক ঘাটতি কমে যাবে। এখন তাকে দলে নেয়ার ব্যাপারে একটা জনমত তৈরি করতে পারে মিডিয়া। মিডিয়া হাইপ তুললে সাকিকে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।’
নাজমুল আবেদিন ফাহিমের বলা শেষের দুই লাইন স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, সাকিবের ব্যাপারে মিডিয়ার মনোভাব জানতেই এমন মন্তব্য তার। এর মানে বিসিবি পরিচালকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সাকিবকে ফেরানো মিশনে এরই মধ্যে নেমে পড়েছেন ফাহিম। তবে সেটা নীরবে-নিভৃতে এবং সতর্ক, সাবধানে ও গোপনে। উৎস: জাগোনিউজ24