শাহানুজ্জামান টিটু: [২] বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা সকল সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করবো। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের এক যুগ পূর্ণ হলো গতকাল, ১১ ফেব্রুয়ারি। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে, এক যুগেও এই বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্ত করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
[৩] তিনি বলেন, হত্যার পর সাগর-রুনির খুনিরা বাসা থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যায়, অথচ সেই ল্যাপটপ ১২ বছরেও উদ্ধার হয়নি। ঠিক যেমন উন্মোচন হয়নি, সেই ল্যাপটপে কি গোপনীয় বিষয় ছিল, তার কোনো তথ্য।
[৪] সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
[৫] রিজভী বলেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক যুগ আজ পেরিয়ে গেলো। অথচ আজও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো না, খুনিদের শনাক্ত করা হলো না, বিচারের ন্যূনতম উদ্যোগ নেওয়া হলো না। বিএনপির পক্ষ থেকে, আমরা এই স্বেচ্ছাচারী রহস্য উন্মোচনের দাবি জানাই, সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। আমরা চাই, প্রতিটি সাংবাদিকের নিরাপত্তা, তাদের পেশাগত স্বাধীনতা।
[৬] বিএনপির মুখপাত্র বলেন, অবিশ্বাস্য বাস্তবতা হলো, মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ এখন পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে।
[৭] তিনি বলেন, গত ১২ বছরে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার কারণ হয়তো এই যে, সাগর-রুনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছিলো, এবং তারা এমন কিছু বিষয় জেনে ফেলেছিলেন, যা ক্ষমতাসীনদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও হুমকিস্বরূপ। যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছিল সাগর-রুনির সাংবাদিকতার অন্যতম বিষয়, যে খাত থেকে রাষ্ট্রীয় মদদে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, সেই খাতের লুটপাট তথা নেপথ্যেও কুশীলবদের সাথে এই হত্যা ও বিচারহীনতার সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়!
[৮] রিজভী বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ২০২২ সালে জানায়, বাংলাদেশ জুড়ে প্রায়ই হত্যা, গুম, খুন ও অপহরণসহ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, এবং ১০ বছরে এই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক, যার বিচার আজও হয়নি। গত ১৫ বছরে, সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতনের যে ৪ হাজারটিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে, এর প্রায় প্রতিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের টেন্ডারবাজ, তদবিরবাজ ও দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে প্রতীয়মান। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমের তথ্যমতে এই সরকারের আমলে ৫৯ জন সাংবাদিক হত্যা হয়েছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৫০ এর অধিক সাংবাদিক চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে পুলিশ পন্ড করতে তাদের ছোড়া টিয়ারসেলের আঘাতে সাংবাদিক রফিক ভুঁইয়া নিহত হয়। অথচ নিহত রফিক ভুঁইয়ার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে সরকার।
[১০] তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানায়, ক্ষমতাশালীদের অনিয়ম-অন্যায়-অপকীর্তি, দুর্নীতি-দুরাচার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জেরে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতন ও হত্যা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করা হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন করলে, এমনকি হত্যা করলেও যে কোনো শাস্তি হয় না, ফ্যাসিস্ট সরকার এটি প্রতিষ্ঠিত করেছে।
[১১] তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ এবং সরকারের ভিন্নমত দমনের নানা প্রচেষ্টার দরুন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের করা বার্ষিক সূচকে, প্রতি বছর বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের তালিকায়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৬৩ তম। সম্পাদনা: ইকবাল খান
এসটি/আইকে/এইচএ
আপনার মতামত লিখুন :