শিরোনাম
◈ তার সেই মহান উক্তি ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই’ (ভিডিও) ◈ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন শেখ হাসিনা ◈ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিপিএলের আজ‌কের খেলা স্থগিত ◈ খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে যেভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন  ◈ শহীদ জিয়ার পাশেই শায়িত হবেন খালেদা জিয়া ◈ আজ দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ◈ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের শোক ◈ ‘মাথার ওপর থেকে মায়ের ছায়া সরে গেল’: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রিজভী ◈ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নরেন্দ্র মোদির শোক: ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে তার অবদান চিরস্মরণীয়’ ◈ খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জকসু নির্বাচন স্থগিত: উপাচার্য ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অবরোধ

প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:৩৫ সকাল
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

খালেদা জিয়ার জীবনাবসান: তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যায়ের ইতি

মনিরুল ইসলাম : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুরো দেশকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমানসহ খালেদা জিয়ার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে যান। তাদের অনেকে ভোর পযর্ন্ত সেখানে ছিলেন।  এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন: 

১৯৯৬ সালে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর খালেদা জিয়া টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন, কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে, তিনি এক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন। যদিও বিএনপি ১৯৯৬ সালের জুনের নতুন নির্বাচনে হেরে যায়, দলটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদে সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসেবে ১১৬টি আসন পায় সেই নির্বাচনে।

১৯৯৯ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে চারদলীয় জোট গঠন করে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে। খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। ফোর্বস ম্যাগাজিন নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে তার ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় তাকে ২৯ নম্বরে স্থান দেয়।

২০০৬ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্বাসনে পাঠানোর একাধিক প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন সেনা শাসিত সরকার গ্রেপ্তার করে। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। নেতৃত্ব দেন বিরোধীদের আন্দোলনে। ২০১৮ সালে কথিত দুর্নীতির মামলায় তাকে কারাগারে পাঠায় আওয়ামী লীগ সরকার।

২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় তাকে শর্ত সাপেক্ষে বাসায় থাকার অনুমতি দেয় সরকার। কারাগারে থাকার সময়ে তিনি নানা রোগে আক্রান্ত হয়। বাসায় ফিরলেও তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন হলেও সরকার সে অনুমতি দেয়নি। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসলেও সময়ে সময়ে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়। সর্বশেষ ২৩শে নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।  

ক্ষমতায় থাকাকালীন, খালেদা জিয়ার সরকার বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা, ছাত্রীদের জন্য একটি শিক্ষা “উপবৃত্তি” এবং শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য খাদ্য প্রবর্তন করে শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি করেছিলেন। তার সরকার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করে এবং শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ করে।

রাজনৈতিক জীবনে বেগম জিয়া যতো আসনে নির্বাচন করেছেন তার কোনোটিতেই পরাজিত হননি। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেখানে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারীর এয়োদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে ৩টি আসনে মনোনয়ন পত্র বেগম খালেদার পক্ষে দাখিল করা হয়। তবে এবার আর নির্বাচন করা  সম্ভব হলো না। চলে গেলেন পরপারে। এর মধ্য দিয়ে এক মহাকালের অবসান হলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়