শিরোনাম
◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিচ্ছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিষয়ে ◈ ভারতের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কারণ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া: প্রধান উপদেষ্টা ◈ জোরপূর্বক চুল দাঁড়ি কেটে দেওয়ার সময় বৃদ্ধ বল‌লেন, আল্লাহ তুই দে‌হিস, কী ঘটেছিলো আসলে? ◈ ব্যাংক কর্মীদের উৎসাহ বোনাস নিয়ে নতুন নির্দেশনা ◈ লম্বা ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরীক্ষা নিয়ে ◈ বাংলাদেশি কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া ◈ ঢাকার মিরপুরে ভারতের সাকিনা বেগম ◈ সাইপ্রাসে ভবন থেকে পড়ে নিহত বেনাপোলের হাফিজুর ◈ দুর্গা পুজায় বেনাপোল বন্দর ৬ দিন বন্ধ ◈ প্রতিটি আসনে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:২৬ বিকাল
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:২৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপি মনোনয়ন যুদ্ধে সামনে এসেছেন প্রয়াত নেতাদের সন্তানরা, বঞ্চিত ত্যাগী কর্মীরা

রাজনৈতিক পরিবার থেকে নেতা হওয়ার ঘটনা দেশে নতুন নয়। বড় দলগুলোতে এই প্রবণতা বেশি। এ ক্ষেত্রে দুটি প্রবণতা লক্ষণীয়। নেতা প্রয়াত হলে তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে সন্তান রাজনীতিতে নামেন। আবার নেতার উপস্থিতিতেই সন্তানকে রাজনীতিতে আসতে দেখা যায়। সূত্র: প্রথম আলো

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বিএনপির প্রয়াত ছয় নেতার সাত সন্তান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিএনপি (নগর-জেলা) ও যুবদলের ছয় নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, দলীয় মনোনয়ন কি পারিবারিক সম্পত্তির বণ্টন? নেতার পরে তাঁর সন্তানকে কেন নেতা হতে হবে? এটা তো কোনো যোগ্যতা হতে পারে না। নেতার ছেলে হঠাৎ করে নেতা বনে গেলে ত্যাগীরা বঞ্চিত হন। কাউকে নেতা হতে হলে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে ধীরে ধীরে ওপরে আসা উচিত।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনায় আছেন ইস্রাফিল খসরু, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাঈদ আল নোমান, শাকিলা ফারজানা, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।

ইস্রাফিলের বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। হেলালের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। সাঈদের বাবা বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। শাকিলার বাবা বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রয়াত উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। হুম্মামের বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আর জহিরুল ও মিশকাতুলের বাবা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।

রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, গত ১৮ বছর নির্যাতিত হয়েছেন, কারাভোগ করেছেন। যখন বাড়িতে থাকতে পারেননি, তখন অনেকে আশ্রয় পর্যন্ত দিতে রাজি হননি। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও রাজপথে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। এখন জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের সময় যদি ‘নেতার ছেলে’ পরিচয় বড় হয়ে ওঠে, তাহলে এই ত্যাগের তো কোনো মূল্য থাকে না।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জমিদারির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা বহু আগে উঠে গেছে। কিন্তু রাজনীতিতে তা এখনো চালু আছে। এটা তো গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না। এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে গেলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়।

বাবার সঙ্গে ছেলেও মাঠে

চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা আমীর খসরু। তিনি নগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। বিএনপির গবেষণা সেলে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তাঁর ছেলে ইস্রাফিল। বর্তমানে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

আমীর খসরু জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত। তাই বাবার হয়ে মূলত ইস্রাফিল এলাকার নেতা-কর্মীদের ‘দেখভাল’ করেন। তিনি সপ্তাহে দু-তিন দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করেন।

তবে আর বাবার ছায়া হয়ে নয়; বরং নিজেই চট্টগ্রামের একটি আসনে ইস্রাফিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে আলোচনা আছে। তিনি এখন দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে জয়ী হন। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দেন। এই আসনের উপনির্বাচনে আমীর খসরু জয়ী হন। একই আসন থেকে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন আমীর খসরু। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

চট্টগ্রামে মোট ১৬টি সংসদীয় আসন আছে। এর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিক দিয়ে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচন করলে তাঁর ছেলে চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে।

তিন বছর ধরে উভয় সংসদীয় এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন ইস্রাফিল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এই কাজ করে যাবেন।

একই আসনে দুই নেতার সন্তান

মীর নাছির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ছিলেন। নগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন তিনি। সে হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সাবেক এই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর প্রভাব আছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বাবা মীর নাছিরের অনুসারীসহ নিজের ‘সাংগঠনিক দক্ষতায়’ নগর ও জেলার রাজনীতিতে হেলালের প্রভাব আছে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এ ছাড়া তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত আছেন।

চট্টগ্রাম নগর, দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির কমিটিতে শীর্ষ পদে আছেন হেলালের অনুসারীরা। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হেলাল। ২০১৮ সালে এই আসনে নির্বাচন করেছিলেন তাঁর বাবা মীর নাছির। আর তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে।

বাবা কিংবা পারিবারিক পরিচয়ে কোনো আসনে দাঁড়ানোকে ব্যক্তিগত অযোগ্যতা মনে করেন হেলাল। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখে জায়গা করে নিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাত ধরে তিনি ২০০৪ সালে রাজনীতিতে আসেন। ২০১৬ সালে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। এর আগে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। আন্দোলন-সংগ্রাম করে নিজের যোগ্যতায় এতটুকু এসেছেন। তবে তিনি মনে করেন, পারিবারিক পরিচয় ভোটে সহায়তা করে।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে ১৯৯১, ১৯৯৬ (দুটি) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের প্রয়াত উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। ২০১৮ সালে তিনি মারা যান। আগামী নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন চাইছেন তাঁর মেয়ে শাকিলা ফারজানা।

শাকিলা ফারজানা বলেন, পারিবারিক পরিচয়ে নয়, যোগ্যতা দিয়ে রাজনীতি করা উচিত। কারাভোগ থেকে শুরু করে দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন তিনি।

প্রয়াত তিন নেতার ছেলেরা মাঠে

আবদুল্লাহ আল নোমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ (দুটি) ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর তিনি বিভিন্ন মেয়াদে একাধিক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

এক-এগারোর সময় নোমান বিদেশে ছিলেন। ফিরে আসার পর তিনি দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সঙ্গে যোগ হয় শারীরিক অসুস্থতা। চট্টগ্রাম বিএনপিতে নোমানের উল্লেখযোগ্য অনুসারী আছে। এখন তাঁরা তাঁর ছেলে সাঈদ আল নোমানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন সাঈদ। এর আগে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ইস্ট ডেলটা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তখন দলের কোনো কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী পাটশ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। তিনি আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) অথবা চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির প্রয়াত নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই ছেলে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।

জাফরুল ইসলাম বাঁশখালীর তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। ২০২২ সালে তিনি মারা যান।

ছেলে মিশকাতুল দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বলেন, বাবার পরিচয়ের কারণে মানুষজন তাঁকে সহজে আপন করে নিচ্ছেন। তবে তিনি দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। তিনি সাতবারের সংসদ সদস্য। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দিন। তিনি বলেন, উপমহাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতান্ত্রিক ধারা দেখা যায়।এখানে রাজনীতিতে বাবার স্থলাভিষিক্ত হন সন্তানেরা। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় সন্তানদের জনগণের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ততা থাকে না। আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাপকভাবে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি দেখা গেছে। এভাবে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির ফলে তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা-কর্মীদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়