নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, চিকিৎসা বা উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এই যাত্রার অন্যতম প্রধান দুশ্চিন্তা থাকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিয়ে। নগদ ডলার বা অন্য মুদ্রা বহনের ঝুঁকি, অতিরিক্ত ফি দিয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বা এয়ারপোর্টে মুদ্রা বিনিময়ের ঝামেলার দিন এখন অতীত। ভ্রমণকারীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ‘ফরেক্স কার্ড’ বা প্রিপেইড ট্র্যাভেল কার্ড, যা ভ্রমণকে করেছে নিরাপদ, সহজ ও সাশ্রয়ী।
ফরেক্স কার্ড আসলে কী?
ফরেক্স কার্ড হলো এক ধরনের প্রিপেইড কার্ড, যা দেখতে অনেকটা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মতোই। বিদেশ ভ্রমণের আগে ব্যাংক বা অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় নথি (যেমন পাসপোর্ট, ভিসা) জমা দিয়ে এই কার্ড নেওয়া যায়। এরপর বাংলাদেশী টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট দেশের মুদ্রা (যেমন ডলার, পাউন্ড, ইউরো) এই কার্ডে লোড করা হয়। বিদেশে পৌঁছে এই কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো দোকানে বিল পরিশোধ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকাও তোলা যায়।
কেন ফরেক্স কার্ড সেরা বিকল্প?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাধিক কারণে ফরেক্স কার্ড এখন ভ্রমণকারীদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে।
১. সর্বোচ্চ নিরাপত্তা: এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো নিরাপত্তা। নগদ টাকা হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে তা ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু ফরেক্স কার্ড পিন (PIN) দ্বারা সুরক্ষিত থাকায় চুরি বা হারিয়ে গেলেও দ্রুত ব্যাংককে জানিয়ে কার্ডটি ব্লক করে দেওয়া যায়, ফলে আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকে। সম্প্রতি ইউরোপ ভ্রমণকারী শিক্ষার্থী আফসানা চৌধুরী বলেন, "আগে সফরে যাওয়ার সময় নগদ ডলার নিয়ে সব সময় একটা ভয় কাজ করত। ফরেক্স কার্ড ব্যবহারের পর সেই চিন্তা পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে। পিন দিয়ে সুরক্ষিত থাকায় নির্ভয়ে ঘুরতে পেরেছি এবং বেশিরভাগ দোকানেই সহজে পেমেন্ট করা গেছে।"
২. খরচ সাশ্রয়: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন করলে প্রতিবার মুদ্রা রূপান্তর চার্জ (Currency Conversion Charge) এবং অন্যান্য ফি দিতে হয়, যা काफी ব্যয়বহুল। অন্যদিকে, ফরেক্স কার্ডে মুদ্রা লোড করার সময় বিনিময় হার নির্দিষ্ট (Lock) হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে মুদ্রার দাম বাড়লেও ভ্রমণকারীর ওপর তার কোনো প্রভাব পড়ে না। এতে খরচ অনেকটাই কমে আসে।
৩. ব্যবহারিক সুবিধা: পকেটে একগাদা নগদ টাকা নিয়ে ঘোরার কোনো প্রয়োজনই নেই। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই যেখানে ভিসা বা মাস্টারকার্ড চলে, সেখানেই ফরেক্স কার্ড ব্যবহার করে সহজেই বিল পরিশোধ করা যায়। এছাড়া, অনেক কার্ডে একই সাথে একাধিক মুদ্রা লোড করার সুবিধাও রয়েছে, যা একাধিক দেশ ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই উপকারী।
৪. সহজ ব্যবস্থাপনা: কার্ডে কত টাকা আছে বা কোথায় কত খরচ হলো, তার পুরোটাই অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ট্র্যাক করা যায়। ভ্রমণের মাঝে টাকা শেষ হয়ে গেলে দেশ থেকে পরিবার বা বন্ধুরা সহজেই কার্ডটি পুনরায় লোড করে দিতে পারে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে ভ্রমণকারীদের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ফরেক্স কার্ড এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। নিরাপত্তা, সাশ্রয় এবং সুবিধার এক দারুণ সমন্বয় হওয়ায় বিদেশ যাত্রার পরিকল্পনা করার সময় এটি এখন আর কোনো বিকল্প নয়, বরং একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
