জ.ই. মামুন: রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন। অমর একুশের দিনে এসে দিনভর এত এত একুশের শুভেচ্ছা পেয়ে, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে, অনলাইনে খবর পড়ে কেমন যেন বিরক্ত লাগছেএ আমাদের বাংলা ভাষার গাঁথুনি এখনো শক্ত হয়নি। যারা এসএমএস-এ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, তাদের অনেকেই ভুল বাংলা লিখছেন। ‘সকল ভাষা শহীদদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা’ বাক্যটি যে শুদ্ধ নয় তা অনেকেই জানেন না, এমনকি মূলধারার কোনো কোনো গণমাধ্যমও এমন দোষে দুষ্টু।
অনেকে বলেন, ইংরেজি বললে বাংলাকে অসম্মান করা হয়। আমার সে রকম মনে হয় না। শুদ্ধ করে যেকোনো ভাষা বলতে, পড়তে বা লিখতে পারা একটা বিশেষ যোগ্যতা, এই যোগ্যতা সবার থাকে না। সমস্যা হলো, আপনি নিজের মাতৃভাষাটাই যখন ঠিকমতো বলতে পারেন না, তখন অন্য ভাষায় ফট ফট করলে তো কানে লাগবেই। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, আগেও ছিলো, এখনো আছে। কিন্তু বায়ান্নতে আমাদের আন্দোলনটা ছিলো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। এখনো তো সেটা পুরোপুরি সফল হয়নি। এখনো দেশের প্রশাসনে, সরকারে, সংসদে, আদালতে, গণমাধ্যমে শুদ্ধ বাংলা ভাষা খুঁজতে বাটি চালান দিতে হয়।
বাংলা একটি বহমান ভাষা। এ ভাষা বহু বিদেশি শব্দকে আত্মীকরণ করেছে, আজও করছে। এতে বাংলা ভাষা বরং সমৃদ্ধ হচ্ছে। বাংলাকে ধারণ করতে হলে ভাষা শুধু নয়- দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে। সেটাই হবে একুশের শহীদদের প্রতি সর্বোত্তম শ্রদ্ধা নিবেদন। শেষ কথা হলো ড. আবুল ফজলের বিখ্যাত সেই উক্তি, ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’- এই চেতনাও একুশের চেতনা। আমরা তো অন্যায়ের কাছে, লোভের কাছে, ক্ষমতার কাছে মাথা শুধু না, মেরুদণ্ড পর্যন্ত নত করে দিয়ে বসে আছি। একুশের চেতনা জাগ্রত করতে হলে এই মাথা নত না করার চেতনাও জাগ্রত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :