শিরোনাম
◈ ঐক্যের ডাকে প্রমাণ হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিই বিএনপি’র দোসর: ওবায়দুল কাদের ◈ গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে রোমে ফের আলোচনা শুরু হচ্ছে রোববার ◈ বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করায় পাকিস্তানে কন্যার পা কেটে নিলেন বাবা ◈ দ্রুত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে নেতানিয়াহুকে বাইডেনের তাগাদা ◈ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও সেতু ভবন পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী ◈ চলমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতে আস্থার সংকটে ক্রেতারা ◈ শ্বেতাঙ্গ নারীদের জুম বৈঠকে কমলার জন্য ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ ◈ এইচএসসির উত্তরপত্র আপাতত বোর্ডে না পাঠানোর নির্দেশ ◈ হত্যা চেষ্টার স্থলে ফিরে যাওয়ার সংকল্প ট্রাম্পের  ◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪২ রাত
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পরিত্যাগ করেছে

শিবলী আজাদ

শিবলী আজাদ: বিগত ত্রিশ বছরে বাংলাদেশের ভাষা পরিস্থিতিতে চোখে পড়ার মতো দুটি বড় বাঁক ঘটেছে। উচ্চবিত্তের অনুকরণে শহুরে, নাগরিক মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বাংলাভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পুরোপুরী পরিত্যাগ করেছে। বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ানোর আর্থিক সক্ষমতাহীন মধ্যবিত্ত সন্তানকে এখন সরকারি স্কুলে ইংরেজি ভার্সানে পড়াচ্ছে। সরকারি স্কুলের অতি নিম্নমানের কারিকুলামের কারণে বৃহৎ এক প্রজন্ম গড়ে উঠছে ইংরেজি ও বাংলা, উভয় ভাষা ব্যবহারে যারা চরম অদক্ষ। এদের মনও উড়ুক্কু, এদের মন পড়ে থাকে বিদেশে। কালচারালী এরা পরদেশী। বাইরে সেটেল করতে চাওয়া এদের একমাত্র আকাক্সক্ষা। বাংলাভাষা এদের চোখে বৈষয়িক উন্নতির প্রতিবন্ধক, কালচারাল ব্যাকওয়ার্ডনেসের প্রতীক।  

পাশাপাশি, সনাতনী কওমী মাদরাসা শিক্ষিত বিপুল সংখ্যক এক প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটেছে, নিজের গরজে বাংলাভাষাকে যারা আত্তস্থ করতে সক্ষম হয়েছে। অতীতের মতো আরবি, ফার্সি, আর উর্দুর ওপর নির্ভর করে ইংরেজি ও বাংলাভাষাকে এরা দূরে সরিয়ে রাখেনি। উল্টো দুটো ভাষাকে, বিশেষকরে, বাংলাভাষাকে, গুরুত্ব দিয়ে শিখছে। আগের প্রজন্মের মতো বাংলাভাষায় এদের দখল আধা-খেচড়া নয়। মাদরাসার পাশাপাশি কলেজ-ভার্সিটিতে এদের অনেকের পড়াশোনা এর কারণ। বাংলাভাষার ওপর এদের অনেকের দখল চোখে পড়ার মতো। এদের হাতেই ঘটছে বিপুল পরিমাণ লেখাজোখা। রচনাগুলোর সাবজেক্ট, কনটেন্ট, ও ভোক্তাশ্রেণির কারণে রচিত সাহিত্যের বৃহৎ অংশ ইসলামী সাহিত্য নামে পরিচিত। কিন্তু অনেকের দৃষ্টি এখন সৃষ্টিশীল রচনা ও অনুবাদে। ধ্রুপদী সাহিত্যের পাশপাশি সমসাময়িক সামাজিক ইস্যুর ওপর বইও এদের হাত ধরে অনূদিত হচ্ছে।

অর্থাৎ নন-মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীর সার্বিক শিক্ষার মান, বিশেষকরে, ভাষাগত দক্ষতার অবনমনের বিপরীতে মাদরাসা পড়ুয়া শ্রেণির ভাষাগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদারাসা পড়ুয়াদের কাছে নন-মাদরাসা শ্রেণি মার খাচ্ছে আরেক জায়গায়। নিম্নমানের শিক্ষাব্যবস্থা মধ্যবিত্তকে ধ্রুপদীভাষা শেখায়নি। এমনকি, উন্নত আধুনিক ভাষাগুলোও শেখার পথও করেনি। মাদরাসা পড়ুয়া কিন্তু আরবি ও ফার্সির মতো ধ্রুপদীভাষা জানে। অনুবাদ সাহিত্যে এর স্পষ্ট প্রমাণ। নন-মাদ্রাসা শিক্ষিতশ্রেণি ইংরেজি ভিন্ন অন্যান্য সাহিত্য অনুবাদ করে ইংরেজি থেকে। মাদরাসা পড়ুয়া করে মূল আরবি, ফার্সি, ও উর্দু থেকে। নন-মাদ্রাসার লোক কিন্তু ফরাসি-জার্মান-ডাচ থেকে অনুবাদে অক্ষম।    

ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাভাষার কান্ডারি লেখক, পাঠক ও পৃষ্ঠপোষক মধ্যবিত্ত শ্রেণি। প্রবাসের জীবন, অভিবাসন, বহুজাতিক কোম্পানি এবং উচ্চবেতনের বেসরকারি চাকরির প্রত্যাশায় মধ্যবিত্তশ্রেণি বাংলাভাষার ওপর তাদের কর্তৃত্ব ও অধিকারবোধ সরিয়ে নিচ্ছে। ওদিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া বর্গ ও প্রান্তিকশ্রেণির মাদরাসা পড়ুয়াদের কিন্তু ইংরেজির জোয়াল বইতে হচ্ছে না। বিদেশে সেটেল করা, উচ্চবেতনে চাকরি তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য নয়। তাদের লক্ষ্য স্বদেশে, নিজ সমাজে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, বিদেশে প্রতিষ্ঠা নয়। বাংলাভাষা তার কাছে সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। ব্রাত্য ও প্রান্তিক অবস্থান থেকে কেন্দ্রমুখী অভিবাসনের পদযাত্রায় বাংলাভাষা তার অবলম্বন।      

উপরোক্ত ট্রেন্ড যদি আরও দুই-তিন প্রজন্ম চলে, এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত বাংলাভাষার ওপর তার মৌরুসিপাট্টা হারাবে। মাদরাসা উদ্ভূত শ্রেণি মাতৃভাষার ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করবে। যার প্রথমিক লক্ষণ ইতোমধ্যে স্পষ্ট। সোজা কথায়, বাংলাদেশে বাংলা ভাষার মালিকানা পরিবর্তন হবে। মাদরাসা শ্রেণির সংখ্যা গুরুত্ব ওদের কৌশলগত সুবিধে দেবে। বাংলা হারিয়ে (ইংরেজিও দখলে না আনার কারণে) কালচারালী, নন-মাদ্রাসা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হবে নিজ ঘরে পরবাসী। ওদিকে মাদরাসা শিক্ষা উদ্ভূত শ্রেণির পক্ষে ঘটনাটি হবে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ও (ভাষার ওপর) শরীকি মালিকানা আদায়।।২০-২-২৪

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়