ফরিদ আহমেদ : ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে স্যার যদুনাথ সরকার এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেবার প্রস্তাব করা হয়। স্যার যদুনাথ সরকারের বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি ছিলো না। আপত্তিটা আসে শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রে। হিন্দু এবং মুসলমান দুই অংশ থেকেই তাঁর ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়। এই আপত্তি অবশ্য পরে কেটে যায়। তিনি ডিলিট পান। কিন্তু তাঁর উপর থেকে আপত্তি সরাতে গিয়ে অন্য একজন এই উপাধি পেয়ে যান ফাউ ফাউ। তিনি হচ্ছেন উর্দুভাষী কবি মুহম্মদ ইকবাল।
এই ঘটনা কীভাবে ঘটেছিলো সেটা রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’ লিখেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘শরৎচন্দ্রকে ডি. লিট. উপাধি দেওয়ার কথা যখন প্রস্তাব করি তখন অনেকেই এ বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখাননি। হিন্দুদের মধ্যেও একটি সাহিত্যিক দল এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন খ্যাতনামা সাহিত্যিকও ছিলেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গসাহিত্য বিভাগও আপত্তি করেন। অনেক কষ্টে তাঁদের বুঝিয়ে রাজি করালাম। মুসলমানরা বললেন যে শরৎচন্দ্রকে ডি. লিট. দেওয়া হলে একজন মুসলমান লেখককেও সেই সঙ্গে এই উপাধি দিতে হবে। তাঁদের বললাম, এমন একজনের নাম করুন যাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মনাওসূচক এমন উপাধি দেওয়া যেতে পারে। তখনই তাঁরা কিছু বললেন না। নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কয়েকদিন পরে বললেন যে মহম্মদ ইকবালকে এই উপাধি দেওয়া হোক। কবি হিসাবে ইকবাল তখন সারাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত। আমি রাজি হলাম এই শর্তে যে ইকবালকে দেওয়া হলে শরৎবাবু সম্পর্কে কোনো আপত্তি করবেন না। তাঁরা রাজি হলেন। যে কয়েকজন হিন্দু প্রথমে আপত্তি করেছিলেন, তাঁরা এবার মুসলমানদের মনোভাব দেখে আর কোনো বাধা দিলেন না’।
একটা জাতি যখন বিভ্রান্তিতে ভোগে, তারা বাঙালি না মুসলমান, সেই বিভ্রান্তি থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে তারা। কবি ইকবাল কবি হিসাবে বিশাল, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু বাঙালি মুসলমানদের তাঁকে নিয়ে আহ্লাদের কিছু থাকার কথা নয়। কিন্তু সেই আহ্লাদ ছিলো শুধু ওই জাতিগত বিভ্রান্তির কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথকেও সম্মানসূচক ডি. লিট. উপাধি দেওয়া হয়েছে। ভাগ্য ভালো যে তখন মুসলমানরা গো ধরেনি যে তাদের মধ্য থেকেও কাউকে দিতে হবে। সে রকম হলে আরেকজন উর্দুভাষী ডি. লিট. বাড়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়। ফেসবুকে ১৬-৯-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।