সুব্রত বিশ্বাস: পৃথিবী থেকে দুর্নীতি কমানোর জন্য সবাই নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। দুর্নীতি করা হয় গোপনে। কারণ কোনো সমাজই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্নীতি করা হলে সেটি সবার সামনে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠানকে দক্ষভাবে চালাতে হলে পুরানো কালের কাগজপত্রে হিসেব রেখে চালানো সম্ভব নয়। তথ্যকে সংরক্ষণ আর প্রক্রিয়া করার জন্য পুরো পদ্ধতিকে তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় আনতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তথ্য-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হলেও সেটি একই সঙ্গে দুর্নীতি নিরসনের কাজটিও করছে।
তথ্য-প্রযুক্তি দুর্নীতিকে প্রকাশ করে দিচ্ছে। দুর্নীতি করে আর্থিক লেনদেন করা হলে সেটি তথ্যভান্ডারে চলে আসছে এবং স্বচ্ছতার কারণে সেটি প্রকাশ পাচ্ছে। যে সমস্ত কাজে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়, সেগুলো কীভাবে করতে হয় প্রত্যেক দেশেই তার সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এ কাজগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয় অর্থাৎ কাজের বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং আগ্রহী প্রতিষ্ঠান কত টাকার বিনিময়ে সেই কাজ করতে পারবে, সেটি লিখিতভাবে জানার এবং কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে এবং কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে কাজটি করার জন্য কাউকে বেছে নেয়। একসময় দুর্নীতিপরায়ণ প্রতিষ্ঠান এ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করত। ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যদের সুযোগ না দিয়ে জোর করে নিজেরাই কাজ করার চেষ্টা করত। আজকাল ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এগুলো করা হয় এবং কোনো মানুষের সরাসরি মুখোমুখি না হয়ে শুধু তথ্যগুলো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরবরাহ করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় বলে দুর্নীতি করার সুযোগ অনেক কমে গিয়েছে।
আমাদের দেশে যারা বিক্রি করার জন্য কোনো পণ্য তৈরি করে কিংবা কোনো কিছু উৎপাদন করে, তারা অনেক সময়েই সেগুলো ক্রেতার কাছে সরাসরি বিক্রয় করতে পারে না। কোনো এক ধরনের দালাল পণ্য উৎপাদনকারীর কাছ থেকে কম দামে পণ্যগুলো কিনে বেশি দামে ক্রেতার কাছে বিক্রয় করে। এতে ক্রেতা ক্ষতি হয় এবং পণ্য উৎপাদনকারীরাও নায্যমূল্য পায় না। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের কারণে এই দালাল শ্রেণির মানুষের সাহায্য ছাড়াই পণ্য উৎপাদনকারীরা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে। পণ্য বিক্রি করার জন্য কোনো দোকান বা শোরুমের প্রয়োজন হয় না, কোনো গুদামে সেগুলো রাখতে হয় না। কাজেই কোনো অর্থ বা সম্পদের অপচয় হয় না বলে উৎপাদনকারী এবং ক্রেতা দুজনেই লাভবান হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও স্বাক্ষর যুক্ত ডাটাবেস দুর্নীতি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে যত ব্যবস্থাই নেওয়া হোক না কেন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। দুর্নীতি মানে শুধু আর্থিক লেনদেন নয়। পক্ষপাতমূলক আচরণ, ব্যক্তি স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদিও দুর্নীতির সমতুল্য অপরাধ। নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন না করে ডিজিটাল সেবা পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার দুর্নীতি বন্ধের প্রয়াস গ্রহণ করেছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মানুষটি সৎ ও শুদ্ধ কিনা তার ওপর প্রযুক্তির সফলতা নির্ভর করছে। নতুবা সিস্টেম পরিবর্তন করে বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও দুর্নীতি দমন করা যাবে না। মানুষকে আল্লাহ অফুরন্ত কর্মশক্তি ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন, তা মানবকল্যাণে কাজে লাগানোই মানব জীবনের সার্থকতা। লেখক: ব্যবসায়ী