শোয়েব সর্বনাম: ফুচকা কোনো সাধারণ খাবার না। ফুচকা একটা আর্ট। চেয়ার, টেবিল কিংবা এসিমার্কা দোকানে ফুচকা খাওয়া যাবে না। ফুচকা খেতে হলে যেতে হবে ফুটপাতে। পৃথিবীতে ফুচকা খাওয়ার অধিকার আছে শুধু সুন্দরি নারী ও তার কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ডের, ফুচকা একা খাওয়া যায় না। ঝগড়া মিটে গেলে পরেরদিন, অনেক ঝড় এসে তারপর চলে গেছে, ছেলেটাই মূলত ফুচকা খাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকবে। প্রিপারেশন হিসেবে পকেট ভর্তি করে নিয়ে যেতে হবে হ্যান্ড টাওয়েল সাইজের টিস্যু। ফুটপাতে ফুহ দিয়ে সেই টিস্যু বিছায়ে দিলে তারপরে মেয়েটা বসতে রাজি হতে পারে। হাতটা ধুয়ে নেবার পর পানির বোতলের মুকখা আলগা করে রেখে নিতে হবে সাইডে। তারপর একটু অপেক্ষা করলেই হাতে আসবে কাক্সিক্ষত বর্তুলমালা, মাঝখানে টকটলোমলো এক প্লেট অথেনটিক ফুচকা।
চামচ ভরে পর্যাপ্ত টক এক একটা মচমচে ফুচকার গলা পর্যন্ত ভরে নিতে হবে। ধরতে হবে দুই আঙুলে আলতো করে, শীতের বাতাসে হাতটা একটু কেঁপে যেতে পারে, প্রেয়সির মুখের ভিত্রে পুরাটা একবারে ভরে দিতে হবে, ভেঙেচুরে মাখায়ে ফেললে চলবে না। প্রেমিকমাত্রই জানেন, নারীরা নিজ হাতে ফুচকা খেতে পারে না। ফুচকা খেতে হলে প্রেমিক থাকা লাগে। তাদের অনেকেই খুব সুন্দর করে ফুচকা খেতে জানে। ফুচকা মুখে নেয়ার সময় চোখ থাকবে বন্ধ। প্রকৃত ফুচকাখোর প্রথম ফুচকাটা মুখে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেহারা বাঁকা করে অভিযোগ করে দিবে, ঝাল হয়নি। ঝাল যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে তখন প্রেমিক ফুচকা খাওয়ার অনুমতি পেতে পারে। কম ঝালবিশিস্ট বাকী ফুচকাগুলা প্রেমিক খেয়ে নিতে পারবে। সেইসঙ্গে, প্রেমিকার অভিযোগটা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তখন মামা ঝাল বাড়ায়ে আরেক প্লেট ফুচকা দিবে।
এ পর্যায়ে প্রথম ফুচকাতে মেয়েটার চোখে পানি আসবে, দ্বিতীয়টায় নাকে। তৃতীয় ফুচকাতে হেঁচকি উঠে গেলে তখন পানির বোতলটা আগায়ে দিয়ে হবে। তেমন সময় ওই পথে রিকশায় চলাচলরত লোকেরা এমনভাবে হা করে তাকায়ে থাকবে যেন তারা জীবনে কাউরে ফুচকা খেতে দেখে নেই। এদেরকে পাত্তা দেয়া যাবে না। ওই মুহুর্তটাতে প্রেমিকার ঝালজনিত অস্বস্তিগুলা ছাড়া পৃথিবীর সবকিছু আসলে অর্থহীন। ফুচকাখোর নারীর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের সঙ্গে তুলনা করা যায় এমন কোন আর্টওয়ার্ক পৃথিবীতে এ যাবত সৃস্টি হয়নি। তো, একটু পর পর টিস্যু ব্যবহার করে দরকারের চেয়ে বেশি সময় নিয়েই প্রেমিকার নাক, মুখ ও ঠোটগুলা মুছায়ে দেয়া যাবে। ফুচকা খাওয়া শেষে হুড উঠায়ে কমগতিসম্পন্ন রিকশায় বসে বাড়ি ফিরতে হবে। মনে রাখবেন, দুই প্লেট ফুচকা একসঙ্গে অর্ডার করা যাবে না। বেশি ঝাল ফুচকাটা উভয়েরই খেয়ে ফেলা চলবে না। টোটাল প্রক্রিয়াটা ঠিকঠাক অনুসরন করা গেলে রিকশা থেকে নামার পর উভয়ের জিবলাতেই একই লেভেলের ঝাল ফিল করা যাবে। লেখক: কথাসাহিত্যিক