শিরোনাম
◈ ভারত আসবে না বাংলাদেশ সফরে, হবে না এশিয়া কাপও ◈ এপ্রিলে  ১০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি ◈ ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস আলম ◈ জনআকাঙ্খা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জনতা পার্টি বাংলাদেশের ◈ ভারত-পাকিস্তান তৃতীয় দিনের মতো সংঘর্ষে জড়ালো, যুদ্ধাবস্থা সীমান্তজুড়ে ◈ 'আপ বাংলাদেশ' নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ◈ দেশে অনলাইন জুয়া সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে: অনলাইনে জুয়া বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধের ডাক হাসনাতের (ভিডিও) ◈ নারায়ণগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে আইভী

প্রকাশিত : ০৩ জুন, ২০২৩, ০৬:১০ বিকাল
আপডেট : ০৩ জুন, ২০২৩, ০৬:১০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈশ্বর কণা

ড.  শোয়েব সাঈদ, পার্টিকেল ফিজিক্স গবেষণায় জেনেভার সার্ন (The European Organization for Nuclear Research) গবেষণাগারের খ্যাতি বিশ্বময়। হিগস বোসন (Higgs boson) বা তথাকথিত ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব প্রমাণের পর এর খ্যাতি এখন অন্য রকম উচ্চতায়।

পেশাগত কাজে জেনেভায় অসংখ্যবার যাওয়াআসা হলেও নানাবিধ ব্যস্ততায় সার্ন পরিদর্শনের সুযোগ হয়ে উঠছিলোনা। ২০২২ সালের মে মাসে জেনেভায় যেতে হয়েছিল কনফারেন্সে অংশ নিতে। কনফারেন্স শুরুর আগের দিন সুযোগ হয়ে যায় সার্ন দেখার। এস্টোনিয়ায় সপ্তাহ খানেকের কাজকর্ম শেষে রাজধানী টালিনের লেনার্ট মেরি বিমানবন্দর থেকে ভোরে উড়ে সকাল সকাল পৌঁছে যাই জেনেভা বিমানবন্দরে।

হোটেলে লাগেজ রেখে বের হয়ে যাই সার্ন দেখতে, এবার ব্রত ছিল সার্ন দর্শন যাতে ছুটে না যায়। জেনেভায় প্রায়ই হোটেল থেকে ফ্রি সিটি পরিবহন পাস দেওয়া হয় ট্যুরিজমকে উৎসাহ দিতে। ঐ রকম একটি ফ্রি পাসে হোটেল থেকে ট্রামে কয়েক ষ্টেশন পরে পৌঁছে গেলাম সার্নে।

সার্ন গবেষণাগারে বিনামূল্যে গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে, যিনি গাইড করেন তাঁকে বহু জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করতে হয় ফলে দেখা যায় তিনিও একজন বিজ্ঞানী, পোস্ট ডক গবেষক কিংবা এই ফিল্ডের কোন জ্ঞানী মানুষ। আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। ঐ দিনের সার্ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ গাইডেড ট্যুরের শিডিউলে ৩টি টিকেট খালি ছিল, দুজন সহকর্মী সহ আমরা তিনজনের জন্যে নিখুঁত কম্বিনেশন, একটি কম হলেই হয়তো আর দেখা হতো না। শেষ মুহূর্তের এরকম সুপ্রসন্নতায় মনে হল ঈশ্বরেরই বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সার্ন দেখার সুযোগটি হয়ে গেল; ঈশ্বর হয়তো চাইছিলেন ঈশ্বর কণা নিয়ে একটু জেনে আসি।

বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের সময় বা অব্যবহিত পরে অর্থাৎ এক সেকেন্ডের কোটি কোটি ভাগের কম সময়ে কি ঘটেছিল পার্টিকেল গবেষণায় তা জানার চেষ্টায় আবার ঈশ্বরকে নিয়েও টানাটানি। বিশ্বাস নির্ভর ঈশ্বর বিশ্বাসে ঈশ্বর কণার ভূমিকা নিয়ে আছে নানা বিতর্ক।

পার্টিকেল ফিজিক্সের যুগান্তরকারী সব উদ্ভাবন আর বিগ ব্যাং এর মুহূর্তে কি ঘটেছিল তা নিয়ে যতই তথ্য আর তত্ত্বের সমাগম ঘটছে ঈশ্বর নিন্দুকেরা ঈশ্বর আছে কি নেই তা নিয়ে ততই টানা হেঁচড়া শুরু করেছেন। “আছে” প্রমাণ কঠিন তবে বিশ্বাসী হৃদয়ে আছের একটি শক্ত আবেগীয় ভিত্তি কাজ করে। “নেই” প্রমাণ আরও কঠিন, কারণ এই প্রমাণটি হতে হয় আবেগহীনভাবে। নেই এর পক্ষে যাঁদের অবস্থান উনারা উনাদের ভাষায় পার্টিকেল ফিজিক্সের ক্রমশ অগ্রগতিতে সুদিনের অপেক্ষায়। ঈশ্বরকে নাকি নিজের অস্তিত্ব প্রমাণে পার্টিকেল ফিজিক্সের গবেষণাগারে আজকাল উঁকিঝুঁকি দিতে হচ্ছে।

লাইফ সায়েন্সের জগতে বিচরণ করে ফিজিক্স বিশেষ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য নিয়ে নাড়াচাড়ার উচ্চাঙ্গ ঘরানার ফিজিক্স নিয়ে কথা বলতে গেলে থতমত তো খেতেই হয়, কি বলতে কি বলে ফেলি। তাই বলে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির বৈশ্বিক এই তীর্থ স্থানে এসে অনুৎপাদনশীল অর্থাৎ unproductive হয়ে থাকলে তো কিছুই বুঝা হবে না। এই অবস্থায় বিজ্ঞ গাইডের সার্ন ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে মনোযোগী হতে হল। একই সাথে সার্ন থেকে কেনা Oxford প্রেসের ফ্রাঙ্ক ক্লোজের Particle Physics A Very Short Introduction নামক ছোট কিন্তু অসাধারণ বইটি দারুণ কাজে আসলো। এই বইটি পড়ে মনে হল জটিলতায় না গিয়ে এর কিছু সাধারণ তথ্য তো সম্ভাব্য সহজ সরল উপস্থাপনায় বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে শেয়ার করা যায়।

প্রাচীন গ্রীকে বিশ্বাস ছিল সবই কিছু মৌলিক উপাদান দ্বারা তৈরি। বিশ্বাসটি মূলত সঠিক তবে বিস্তারিত বলতে গিয়ে ছিল ভুলের বেশ ছড়াছড়ি। আজকে আমরা জানি পানি হচ্ছে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন, বাতাসে নাইট্রোজেন আর অক্সিজেনের সাথে রয়েছে কার্বন আর আর্গন। পৃথিবীর মাটি হচ্ছে ৯০ ধরণের প্রাকৃতিক মৌলিক উপাদানের সমন্বিত রূপ যার মধ্যে আমাদের পরিচিত অক্সিজেন, সিলিকন, লোহা, কার্বন, ফসফরাস থেকে অপরিচিত রুথেনিয়াম, হলমিয়াম আর রোডিয়ামও রয়েছে।

উপাদানগুলোর বেশ কয়েকটির প্রাচুর্যতার পাশাপাশি অনেকগুলোর দুষ্প্রাপ্যতাও রয়েছে। আমাদের একটি প্রশ্বাসে লক্ষ কোটি অক্সিজেন এটমের হুড়োহুড়ি। এর বিপরীতে আমাদের একটি নিঃশ্বাসে উদ্ভিদের জ্বালানি কার্বন আর অক্সিজেনের মিশ্রণ কার্বনডাইঅক্সাইডের ছড়াছড়ি। আবার এস্টাটিন বা ফ্র্যান্সিয়ামের মত উপাদানের নাম শুনে থাকলেও এটি দেখার সুযোগ খুবই বিরল। পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহে এস্টাটিনের পরিমান এক আউন্সের কম আর ফ্র্যান্সিয়ামের হয়তো গোটা বিশেক এটম পাওয়া যেতে পারে।

বিগ ব্যাং, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃজনের মূল এই অনুঘটকের প্রথম প্রহরে সৃষ্টি হয়েছিল অসংখ্য মৌলিক উপাদান, নানাবিধ কণার বিশাল এক ভাণ্ডার। প্রচণ্ড তাপ আর শক্তির বলয়ে টিকে থাকতে পারেনি অসংখ্য উপাদান, নিমেষেই নিশ্চিহ্ন হয়ে হায়। আবার তাপ আর শক্তির ক্রমশ বিনাশে ভিন্নতর অবস্থানে যেতে হয় অনেক মৌলিক কণার।

একটি পরমাণু হচ্ছে একটি পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের অক্সিজেন বা ত্বকের কার্বনের সৃষ্টি মূলত ৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টির সময়। বিগ ব্যাং এর পরপরই উন্মেষ ঘটেছে বয়োজ্যেষ্ঠ উপাদান হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামের। হাইড্রোজেন তো রাতের আকাশের দৃশ্যমান তারকাগুলোর জ্বালানি।

একবার ভাবুন তো একটি প্রশ্বাসে যে লক্ষ কোটি অক্সিজেন এটমের হুড়োহুড়ি আপনার ফুসফুসে, সেই অক্সিজেন এটমের আকারটি কি হতে পারে? কলমের খোঁচায় একটি ডট দিলেন কাগজে, যতটুকু কালি ব্যবহার করলেন তা কিন্তু ১০ হাজার কোটি কার্বন পরমাণুর সমাহার। এখন কার্বনের এই পরমাণুর একটিকে খালি চোখে দেখতে হলে আপনাকে ঐ ডটটিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে।

শত বছর আগে পরমাণুকে অভেদ্য ক্ষুদ্রতম ইউনিট ভাবা হলেও জ্ঞানের বিস্তারে আজ আমরা জানি পরমাণুর গঠন এবং এর বিল্ডিং ব্লকগুলো। নিউক্লিয়াস আছে পরমাণুর কেন্দ্রে, তার চারিদিকে ঘুরছে ইলেকট্রন। আমরা ডটের ভেতর কার্বন এটমকে দেখতে ১০০ মিটার সম্প্রসারণের কথা বলেছিলাম। এখন এটমের ভেতরের নিউক্লিয়াসটি খালি চোখে দেখতে ঐ ডটটিকে দশ হাজার মাইল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে, অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসের কাছাকাছি।

এই নিউক্লিয়াস আবার প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে তৈরি। পজিটিভ চার্জের এই প্রোটনের সংখ্যা এলিমেন্ট অনুযায়ী ভিন্ন; হাইড্রোজেনে ১টি, কার্বনে ৬ টি, ইউরেনিয়ামে ৯২ টি। প্রোটন আর নিউট্রনকে হাজারগুন বড় করলে এদের গঠন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়; এরা কোয়ার্ক পার্টিকেল দ্বারা তৈরি। এখন কোয়ার্ককে দেখতে হলে আমাদের ঐ ডটটি কে চাঁদের দূরত্বের ২০ গুন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পরমাণুর গাঠনিক কায়কারবারে আমাদের কল্পনা শক্তিও অসহায়।

এখানেই কি শেষ? কোয়ার্ক কি বেসিক, না এর চেয়েও বেসিক কিছু আছে, যেমন মোর্স কোড? ধারণা করা হয় ইলেকট্রন কিংবা কোয়ার্ককে বিলিয়নস বার ম্যাগ্নিফাই করা হলে মোর্স কোডের গঠন দেখা যেতে পারে।

একটি এটমে নিউক্লিয়াস আর ইলেকট্রনের মাঝের অংশ মূলত ফাঁকা। আসলেই কি ফাঁকা? এই অংশটি তো তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির আধার। ইলেকট্রন আর কোয়ার্ককে যদি মনে করা হয় অক্ষর তবে অক্ষর জোড়া দিয়ে শব্দ, বাক্য বানানোর জন্যে কিছু নিয়ম তো অবশ্যই আছে। বস্তুর উৎপত্তিতে এই জোড়া লাগানোর বিষয়টি হচ্ছে চারটি মৌলিক শক্তি অভিকর্ষ, তড়িৎ চুম্বকীয়, সবল আর দুর্বল শক্তি। গ্যালাক্সি, তারা, গ্রহ থেকে শুরু করে পড়ন্ত আপেলের মত ভারী বস্তুকে নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রে অভিকর্ষ বল নিয়ামক।

বস্তুকে একসাথে রাখা যেমন ইলেকট্রনকে এটমের মধ্যে, এক এটমের সাথে অন্যটি ধরে রাখার জন্যে তড়িৎ চুম্বকীয় বল হচ্ছে নিয়ামক। সবল বল নিউক্লিয়াসের ভেতর কাজ করে কোয়ার্কগুলো জোড়া দিয়ে তৈরি করে নিউট্রন, প্রোটন। দুর্বল বল প্রোটন, নিউট্রনের পারস্পরিক পরিবর্তনে কাজে লাগে, এলিমেন্টের রূপান্তর ঘটায় যেমন সূর্যে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তর । এই চারটি মৌলিক বল পরমাণুর মৌলিক কণাগুলোর উপর নির্দিষ্টভাবে কাজ করে তৈরি করে পদার্থ; আমি, আপনি, পৃথিবী আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যার অংশ।

আমরা তো এটমের তৈরি, এই পৃথিবীটা এটমের কারসাজী যার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল ৫ বিলিয়ন বছর আগে। আমরা যে উপকরণ দ্বারা তৈরি তা এই বিশ্বের বয়সী, কিছু কিছু উপকরণ এই ইউনিভার্সের বয়সী।পার্টিকেল ফিজিক্সের কাজ হচ্ছে বস্তুর গঠন আর উৎপত্তি এবং কোথা থেকে এলো এই নিয়ে মেতে থাকা। বিশাল এক্সেলেটর, কখনো কয়েক মাইল লম্বা, যেখানে এটমের বিল্ডিং ব্লকগুলোকে চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্যে বিপুল শক্তির এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হয় যাতে ধারণা পাওয়া যার বিগ ব্যাংগের সময় কি ঘটেছিল। বিগ ব্যাংগের অব্যবহিত পরের অবস্থা আমরা এখন সিমুলেট করতে পারি পার্টিকেল এক্সেলেটর দিয়ে। বিগ ব্যাংগের সময় এবং অব্যবহিত পরের অবস্থাও এক ছিলনা বিশেষ করে এটমের বিল্ডিং ব্লকগুলোর অবস্থা বিবেচনায়।

সৃষ্টির শুরুতে বস্তুর উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা বা ধারণা খুবই জটিল বিষয়। বিজ্ঞানের ক্রমশ অগ্রগতি জটিলতা নিরসনে একের পর এক অবদান রাখছে। পার্টিকেল পদার্থ বিজ্ঞানে আজকের অগ্রগতিতে সাবএটমিক পার্টিকেলের সংঘর্ষে বিগ ব্যাংগের সময় কি ঘটেছিল অনেক তথ্যই বের হয়ে আসছে। বিগ ব্যাংগের উত্তপ্ত সময়ে এটম টিকে থাকতে পারেনি, ১৪ বিলিয়ন বছর পর অনেক শীতল অবস্থায় টিকে থাকছে। আবার বিল্ডিং ব্লকগুলো বিগ ব্যাংগের সময় যেভাবে ছিল এখন সেভাবে নেই, ব্লকগুলোর আদি অবস্থা বুঝতে হলে বিগ ব্যাংগের সেই পরিবেশের মত একটি ব্যবস্থার দরকার। শীতল পরিবেশে বিল্ডিং ব্লকগুলোর ক্রমশ পরিণতিতে পেয়েছি আজকের এই পৃথিবী। পৃথিবীর এখনকার অবস্থায় পার্টিকেল যেভাবে আছে সূর্যের মাঝে কিন্তু ভিন্ন রকম কিংবা কোন দানব তারকায় যা হচ্ছে মোটেই এক নয়।

বিগ ব্যাংগের অব্যহিত পর প্রচণ্ড তাপ আর শক্তিতে যেখানে টিকে থাকাই দায় যেখানে কোয়ার্ক থেকে প্রোটন আর নিউট্রনের জন্ম সম্ভব ছিল না। ঠাণ্ডা হতে শুরু করলে কোয়ার্কগুলো জোড়া লাগতে শুরু করে। আবার সূর্যের ভিন্ন পরিস্থিতিতে গ্যাসের মধ্যে ইলেকট্রন প্রোটন স্বাধীনভাবে ঘূর্ণায়মান। কোন দানব তারায় প্রচণ্ড তাপে শক্তিতে পরিবেশটি একেবারেই অন্যরকম।

পরমাণুর মৌলিক থেকে মৌলিকতর উপাদানের ক্রমশ উদ্ভাবনের প্রক্রিয়ায় হিগস বোসন কণার ধারণাটি ছিল কিন্তু ১৯৬৪ সাল থেকেই, অপেক্ষা প্রমাণের। ২০১২ সালে জেনেভার সার্ন ল্যাবে Large Hadron Collider (LHC) এ প্রোটনের মধ্যকার সংঘর্ষের ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপন্ন হওয়া হিগস বোসন কণা ধারণাটি প্রমাণের সাথে সাথে পার্টিকেল গবেষণা পৌঁছে যায় ভিন্নতর উচ্চতায়, হিগস বোসন কণা হয়ে উঠে বৈশ্বিক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

পার্টিকেলের সংঘর্ষ ঘটানো খুব দুরূহ কাজ। সংঘর্ষের চেয়ে এড়িয়ে (স্কেপ) যাবার সম্ভাবনা বেশী। হিগস বোসন কণা একবার তৈরি হয় কোটি কোটি বার সংঘর্ষের পরিবেশ থেকে। একটি পরীক্ষায় প্রতি সেকেন্ডে ১০০ কোটিবার সংঘর্ষে দিনে একটি হিগস বোসনের দেখা মিলবে। এটির সনাক্তকরণ আর ডেটা সংগ্রহ বিশাল চ্যালেঞ্জের এক কর্মযজ্ঞ।

পদার্থ বিজ্ঞানের রথী মহারথী বিজ্ঞানীগণ মূলত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ, কয়েকটি উদাহরণের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি। প্রবল চিন্তাশক্তিকে ম্যাথমেথিক্যাল উপস্থাপনা আর পরীক্ষামূলক প্রামাণিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করাতে উনাদের ব্যুৎপত্তি বিস্ময়কর বটে। এই বিস্ময়কর মেধাবী মানুষগুলোর জানার পরিধি কিন্তু উনাদের অজানার তুলনায় যৎসামান্যই বটে।

আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিমি; ১৫০ মিলিয়ন কিমি পেরিয়ে সূর্যের আলো আমাদের চোখে ধরা দিতে সময় নেয় ৮ মিনিট। সূর্য অস্ত যাবার আশায় যখন আমরা যখন ইফতারি করি তার ৮ মিনিট আগেই সূর্য অস্ত গিয়েছে। আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কীওয়ে ১ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে, ক্লাস্টার সুপার ক্লাস্টার তো মিলিয়ন্স আলোকবর্ষ দূরে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সীমাহীন বিশালত্বের অলিগলিতে জ্ঞানের যে ব্যাপ্তী তার বিপরীতে আমাদের জানার পরিমান কিঞ্চিৎকর হলেও আমরা তো জানছি, স্ট্রিং তত্ত্বের মত অনেক কিছুই জানার নতুন নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে যাচ্ছে।

আগামী বছরগুলোতে ইউনিভার্স সৃষ্টির রহস্য নিয়ে অনেক কিছু জানা যাবে, থাকবে নতুন নতুন চমক। ঈশ্বর কণার মত কত কিছুই প্রত্যক্ষ করবে আগামী প্রজন্ম। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতি ঈশ্বরকে কি আরও কাছে নিয়ে আসবে, না দূরে সরিয়ে দেবে নাই বা গেলাম সেই বিতর্কে।

মন্ট্রিয়ল, কানাডা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়