শোয়েব সর্বনাম: চারুকলার ড্রপআউট এক বদের হাড্ডি আছে আমাদের ব্যাচের, সে নিজেকে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে লাখ খানেক টাকা তুলে বাইক কিনে ফেলছে। তারপর চারুকলা ছেড়ে দিছে। এইটা দেড়যুগ আগের কথা। এখন সে আমেরিকায় এনিমেশন আর্টিস্ট হিসেবে চাকরি করে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনা যারা জানে তারা এই ছেলেরে বাটপার হিসেবে ধরে নিছে। এই গল্প করার সময় ওরে তারা গালাগালিও করে। আজকে যতগুলো পাইছি দেশে এতো ডিপ্রেশনসচেতন জনগণ আগে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দুপুরে ভাত খাই নাই এই পোস্ট দেয়া গেলে যত লোকে লাঞ্চের টাকা পাঠাবেন, এক সপ্তাহ আইসক্রীম না খেয়ে ডিপ্রেশন হইলে তারে এক বাক্স আইসক্রিম পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তকে নিতে পারবেন? আমাদের দেশের লোকেদের মাথায় কীভাবে যেন ঢূকে গেছে যে, দুঃখ কস্ট এইগুলো গরীবদের ব্যপার। আইফোন কিনতে না পেরে মানুষ ডিপ্রেশনে সুইসাইড করে। ঈদের আগে ট্রেন্ডি ড্রেস না পেয়েও ডিপ্রেশনে সুইসাইড করার নিউজ আছে।
ডিপ্রেশন ব্যপারটা নিয়ে সহানুভূতিশীল হতে চাইলে প্রথমে আগে আপনের এই কথায় রাজি হইতে হবে যে, দুঃখ কস্ট ব্যপারটা গরীবের বাপদাদার সম্পত্তি নয়। আমাদের দেশের লোকেদের কাছে ঈদের মহৎ গল্প হলো বাবা জুতা না কিনেও ছেলের জন্য জুতা কিনে আনছেন। যেই বাবাটি নিজেও জুতা কিনছেন আরো দু চারজনরে কিনে দিছেন কিন্তু প্রবাসি মেয়ের জন্য পছন্দের টিপটা সারা মার্কেট ঘুরেও খুঁজে পাচ্ছেন না তার ডিপ্রেশন কয়জন টের পান? প্রবাসে আটকে পরা মেয়েটা ওই টিপের অভাবে সারারাত বালিশ ভিজাবে সেই দুঃখে কয়জন দুঃখি হইতে রাজি হবেন? আমি একবার ভয়াবহ ডিপ্রেশনে পরে গেলাম। প্রতিবছর কক্সবাজার যাই। ওইবার কোভিড, যাওয়ার অবস্থায় নেই। লকডাউন যখন ছুটলো হাতে কোন টাকা পয়সা নেই।
পরিচিত বন্ধুবান্ধরা তখন এতো দানশীল হয়ে গেলগা যে গরীব মানুষ দেখা গেলেই বস্তা ধরে চাল ডাল বাজার কিনে তার বাসায় পাঠায় দিচ্ছে। কোভিডে যেন কেউ খাবারের কস্ট না পায় তার জন্য সকলে সচেতন। আমি তাদেরকে প্রস্তাব করলাম, বান্ধবী নিয়া কক্সবাজার যাইতে হবে। কারা আমাদের স্পন্সর করতে রাজি আছেন? একজনও রাজি হয়নি। পরে ব্যাংক লোন করে যেতে হইছে ওইবার। এখন তাদের ডিপ্রেশন বিষয়ক সচেতনতামূলক পোস্ট দেখে চারুকলার ওই ছেলেটার কথা মনে পরলো। একদিন সে বলতেছিলো, বাইক না পেলে ওর গার্লফ্রেন্ড ভেগে যেতে পারে। তখন সে সুইসাইড খেয়ে দিবে। ওর ব্যপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি? ক্যান্সার না বলে বাইকের জন্য টাকা চাইলে আপনারা মহানুভবেরা সেইটা দিতে রাজি হইতেন?
এই দেশে গরিব মানুষ মাত্র ১৮ পার্সেন্ট। অন্যের দুঃখে দুঃখি ধরনের লোকেরা সকল সহযোগিতা ওই আঠারো পার্সেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখেন। অথচ দেশে ক্ষুধায় মৃত্যুর হার জিরো পার্সেন্ট। বিরাশি পার্সেন্ট মানুষ ডিপ্রেশনের যে সম্ভাব্য রোগী, তাদের স্যাডনেস যতক্ষণ না আপনারে টাচ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারে সহানুভূতিশীল মানুষ বলতে আমি রাজি না। লেখক : কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :