আহসান হাবিব: [১] সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কার কতো ফলোয়ার তা দিয়ে মানুষকে বিচার করার প্রবণতা হয়েছে। আমি এই দেখাকে প্রত্যাখান করি। লক্ষ্য করি যার যত ফলোয়ার, সে ততো ফালতু। কিছু ব্যতিক্রম বাদে। কার ফলোয়ার বেশি? প্রথমত যারা ওয়াজ করে, হুজুর। দ্বিতীয়ত যারা রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়ায়, তৃতীয়ত যারা মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়। আর আছে অন্যান্য পেশার কিছু মানুষ। অভিনয় শিল্পী আছে এই দলে। আর একটা বিষয় লক্ষ্য করি যারা ইউটিউবে অপবিজ্ঞান ছড়ায়, স্বাস্থ্য নিয়ে বুজরুকি করে, তাদের অনেক ফলোয়ার। এই সমস্ত মানুষদের ফলোয়ার কারা? মোটাদাগে এরা অবিকশিত মানুষ।
[২] কে কাকে বিয়ে করলো, এটা দেখছি সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত মানুষদের প্রধান আকর্ষণ। বিশেষত এই ধরনের মানুষদের ব্যক্তিজীবন খুবই উপাদেয়। আর বিষয়টার সঙ্গে যদি যৌনতা যুক্ত থাকে, তাহলে তো কথাই নেই, হামলে পড়ে। বিয়ে একটা যৌন চুক্তি। সুতরাং বিয়ের কথা শুনলেই মানুষের অবদমিত যৌনতা চাগিয়ে ওঠে! শুরু হয় রগরগে আলাপ। এই আলাপের প্রধান চরিত্র নারী। কারণ পুরুষ নয়, নারীই যেন যৌন বস্তু। আর নারীটি যদি ডিভোর্সি হয়, তাহলে আলোচনা জমে ভালো। এইসব অবিকশিত মানুষদের কাজকাম। এরাই সেই ফলোয়ার বাহিনী যারা তাদের মাথায় তুলে নাচে।
[৩] একজন বিজ্ঞানী কখনো আলোচিত নন এখানে। তার কোনো ফলেয়ার থাকে না। যারা সমাজের অপবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তারা এখানে অবাঞ্ছিত। যারা এই সমস্ত টিকিয়ে রাখে, তারা পূজনীয়। এদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার। এখানে যে যত অসুন্দরের বার্তাবাহক, তারা ততো গৃহীত। এ এক আশ্চর্য দেশ। বামনে ভরা। লেখক : ঔপন্যাসিক