রাজীক হাসান: নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে জাঁ পল সার্ত্রে ১৯৬৪ সালে যে ভাষণটা দিয়েছিলেন, আজও তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। বিশেষত স্বাধীনতা বিষয়ক তাঁর ধারণা এখনো প্রবলভাবে ভাবায় আমাদের। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি যেন কথা কয়ে উঠে। এটা এমন একটা শব্দ যা অসংখ্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়ে দেয়। পাশ্চাত্যে এর মানে করা হচ্ছে অ্যাব্সট্রাক্ট ফ্রিডম বলে কিন্তু আমার কাছে এর অর্থ আরও বাস্তব স্বাধীনতা। এটা এক জোড়ার চেয়ে বেশি জুতো থাকার স্বাধীনতা এবং খিদে পেলে খাওয়ার অধিকার থাকার স্বাধীনতা। জাঁ পল সার্ত্রে, কী মর্মস্পর্শী প্রতীকী উদাহরণ। অগ্রসর ইউরোপীয় সমাজের মানুষদের কাছে স্বাধীনতা যদি হয়। ‘এক জোড়ার চেয়ে বেশি জুতো থাকার’ বিষয়, তো আমাদের মতো দারিদ্রপীড়িত দেশের মানুষদের কাছে এখনো তা, ‘খিদে পেলে খেতে পাবার’ বিষয়। অর্থাৎ স্বাধীনতা ওদের কাছে আসে আরেকটু স্বচ্ছল কিম্বা বিলাসী জীবনের স্বপ্ন নিয়ে আর আমাদের কাছে আসে দ্মুুঠো অন্ন জোগানোর বাস্তবতা নিয়ে। খিদেয় মানুষের সত্তা বা অধিবিদ্যক ধারণার আদতে কোনো প্রয়োজনই নেই কারণ তা মানুষের জীবনে সুখ পরিপূর্ণভাবে প্রদান করে না।
সার্ত্রের মতে আসলে মানুষের জন্য দরকার নিজের অস্তিত্বকে স্বীকার করা। অস্তিত্ব স্বীকার হলেই মানুষের জীবনে সত্য অর্জিত হয়। কারণ মানুষ সবসময়েই মূলত স্বাধীন। স্বাধীন তাই মানুষকে সাহায্য করে সবকিছুকে চিনতে, ভাবতে ও অর্জন করতে। সার্ত্রে তার নানা সাহিত্য কর্মে উপন্যাসে দেখিয়েছেন একটি সমগ্রের বিবেচনাহীনতার কাছে ব্যক্তি মানুষ কতই না অসহায়। তিনি মনে করেন মানবতাবাদ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল মানুষের জন্য হতে পারে চূড়ান্ত মানবতার। ব্যক্তি যদি তার অস্তিত্ব বিষয়ে সচেতন থাকে তবে তাকে শোষণ করা সহজ নয়। আসলে স্বাধীনতা বিমূর্ত ধারনামাত্র নয়। দৈনন্দিন চর্চায় তাকে পেতে হয়। ফেসবুক থেকে